ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

প্রজনন সংকটে ‘তিলানাগ ঈগল’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮
প্রজনন সংকটে ‘তিলানাগ ঈগল’ লাউয়াছড়ার তিলানাগ ঈগল। ছবি: সাঈদ বিন জামাল 

মৌলভীবাজার: উঁচু বা দীর্ঘদেহী দেশীয় গাছের অভাব দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছে পাখির প্রজননে। এসব গাছের অভাবে প্রজনন সংকটের মধ্যে থাকা বিপন্ন পাখিটির নাম ‘তিলানাগ ঈগল’।

তিলানাগ ঈগলের ইংরেজি নাম Crested Serpent Eagle এবং বৈজ্ঞানিক নাম Spilornis cheela। এই পাখিটি আকারে চিলের মতো।

দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫৬ থেকে ৭৪ সেন্টিমিটার। ঘাড়ে তাদের রয়েছে ঝুঁটি এবং কালচে-বাদামি দেহে রয়েছে অসংখ্য সাদা তিলা।  

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এই পাখিটি আগের থেকে কমে গেছে এটা বলা যায়। যেমন ধরুন- আগে গ্রামগঞ্জে বড় বড় গাছ ছিল। বিশেষ করে শিমুল গাছ। ওরা বড় গাছের উপর চুপ করে বসে থাকতো। নিচ দিয়ে শিকার দেখলেই উপর থেকে নেমে এসে শিকার ধরে নিয়ে যেতো।  

তিনি আরো বলেন, এদের অন্যতম প্রধান খাবারই হচ্ছে সাপ। পা দিয়ে ধরে সাপকে গাছের উপর নিয়ে বা মাটিতে বসেই মেরে খায়। যার ফলে এরা কিন্তু সাপের প্রজনন নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় একটা ভূমিকা পালন করে। শুধু গ্রামগঞ্জেই নয়, বনপাহাড় থেকেও বিশালাকৃতির গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে প্রজনন সংকটের মধ্যে রয়েছে তারা।

প্রজনন সংকটের প্রধান কারণ উল্লেখ করে ড. কামরুল বলেন, তাদের জন্য উঁচু গাছের প্রয়োজন। প্রজনন মৌসুমে উঁচু গাছের ডালে এরা বাসা করে। আমাদের চারপাশ অর্থাৎ, গ্রামগঞ্জ বা বন-জঙ্গল থেকে উঁচু গাছগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো ফরেস্টে উঁচু গাছ রয়েছে; আবার কোনো কোনো ফরেস্টে তা নেই। এর ফলে এই প্রজাতির বড় পাখিগুলোর অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে।  

দেশি প্রজাতির গাছের প্রয়োজনীতার কথা উল্লেখ করে ড. কামরুল বলেন, আমরা আগে আমাদের সময়ে গ্রামাঞ্চলে দেখতাম সব দেশীয় প্রজাতির গাছ। কিন্তু এখন দেশীয় প্রজাতির গাছগুলো দেখা যায় না। এখন বেশিরভাগ গ্রামেই একাশিয়া এবং ইউকালিপটাস গাছের ছড়াছড়ি। ইউকালিপটাস উঁচু গাছ হলেও কিন্তু পাখিদের বাসা করার জন্য এটি মোটেও উপযোগী নয়। দেশীয় গাছের অভাবে পাখিদের প্রজনন সংকট মারাত্মকভাবে দেখা দিচ্ছে।  

পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের কথা বিবেচনায় রেখে আমাদের দেশীয় প্রজাতির বিশাল বৃক্ষগুলোকে কোনোক্রমেই কাটতে না দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২  ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।