ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

সবুজ তহবিলে নতুন সম্ভাবনা, মিলেছে ৮.৫ কোটি ডলার অনুদান

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
সবুজ তহবিলে নতুন সম্ভাবনা, মিলেছে ৮.৫ কোটি ডলার অনুদান

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে উষ্ণতা বৃদ্ধি ও মৌসুমী গতিধারায় পরিবর্তন এসেছে। কমবে মানুষের আয়। ২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৮০ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের এ নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হবে। তবে দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যেই পরিমাণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সেই পরিমাণে বৈশ্বিক সহায়তা পাচ্ছে না। তবে নতুন সম্ভাবনা হচ্ছে তিনটি প্রকল্পে সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) সাড়ে ৮ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে। প্রতি ডলার সমান ৮৩ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭০৫ কোটি টাকা।

ক্লাইমেট রেসিলেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার মেইনস্ট্রিমিং ইন বাংলাদেশ, গ্লোবাল ক্লিন কুকিং প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রবণতা লবণাক্ততা মোকাবেলা উপকূলীয় সম্প্রদায়ের, বিশেষত মহিলাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পে এ অনুদান পাওয়া গেছে।

‘গ্লোবাল ক্লিন কুকিং প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।

বাকি দু’টি প্রকল্পের অগ্রগতিশূন্য। এমনকি একনেকে অনুমোদন হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন প্রবণতা লবণাক্ততা মোকাবেলা উপকূলীয় সম্প্রদায়ের, বিশেষত মহিলাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন) তৈরিও করা হয়নি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) উপসচিব নূর আহমেদ বাংলানউজকে বলেন, তিনটা প্রকল্পে সাড়ে ৮ কোটি ডলার অনুদান পেয়েছি। তিনটা প্রকল্পের মধ্যে একটা প্রকল্পের কাজ মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে। বাকি দু'টির অগ্রগতি নেই। ’

ইআরডি সূত্র জানায়, জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ (ক্লাইমেট রেসিলেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার মেইনস্ট্রিমিং ইন বাংলাদেশ) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে চার কোটি ডলার অনুদান পাওয়া গেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৩২০ কোটি টাকারও বেশি। গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) আওতায় এটি প্রথম প্রকল্প। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা ও সাতক্ষীরার ২০ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এর মধ্যে জিসিএফের ৪ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। জার্মানি সরকার অনুদান সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে আরও দেড় কোটি ডলার। আর বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করছে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও সংস্কার, দুর্গম উপকূলীয় এলাকায় রাস্তা নির্মাণ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি  স্থানীয় প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করবে।

বাংলাদেশে জিসিএফের অনুমোদন পাওয়া এটিই প্রথম প্রকল্প। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে জিসিএফ। প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ৪৫টি নতুন সাইক্লোন শেল্টার এবং ২০টি বিদ্যমান শেল্টার উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ছয় বছর। অথচ মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়নি।

‘গ্লোবাল ক্লিন কুকিং প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৮ দশমিক ২ কোটি ডলার। প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে সংস্থাটি। প্রকল্পে ১ কোটি ৭৬ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে জিসিএফ-এর কাছ থেকে। সাড়ে তিন বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও এখনও অগ্রগতি শূন্য।

বাংলাদেশে টেকসই উন্নত রান্না চুলা প্রসারেই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৬৬ শতাংশ জনগোষ্ঠী গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করেন। যেখানে মহিলারা প্রথাগতভাবে কাঠের জ্বালানি চুলা ব্যবহার করে রান্না করেন। রান্না করার জন্য কাঠ পোড়ানো হয়, ফলে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন এবং কালো কার্বন বৃদ্ধি পায়। এটা একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি করছে অন্যদিকে বনভূমি উজাড় হচ্ছে। স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ৪৬ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। বর্তমানে দেশে তিন থেকে চার শতাংশ পরিবারের উন্নত রান্না চুলা ব্যবহার করা হয়।

প্রকল্পটি উন্নত রান্নার চুলার সম্প্রসারণে সাহায্য করবে। প্রকল্প উন্নত রান্না চুলা উৎপাদন,সচেতনতা বৃদ্ধি, টেকসই চুলার গবেষণায় সাহায্য করবে।

তৃতীয় নম্বর প্রকল্পটি হলো ‘জলবায়ু পরিবর্তন প্রবণতা লবণাক্ততা মোকাবেলা উপকূলীয় সম্প্রদায়ের, বিশেষত মহিলাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি  প্রকল্প। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে প্রকল্পটির আওড়ায় ২ দশমিক ৫ কোটি ডলার অনুদান অনুমোদন করেছে সংস্থাটি। অথচ প্রকল্পের ডিপিপি এখনও প্রস্তুত হয়নি।

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রের পানির উচ্চতায় ঝুঁকিপূর্ণ অন্যতম সমস্যা। বাংলাদেশের তীরবর্তী এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে উপকূলীয় এলাকায় সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। খাবার পানির সহজলভ্য হবে। কৃষি জীবিকায় প্রতিকূল প্রভাব কমে আসবে। খাবার পানি সংগ্রহে উপকূলীয় নারীদের সহায়তা করা হবে। উপকূলের সাড়ে ৭ লাখ নারী প্রকল্পের সুফলভোগ করবেন।

ইআরডি সূত্র জানায়, জিসিএফ বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদ। বাংলাদেশ ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬০ প্রকল্পের আওতায় আড়াই বিলিয়ন ডলার অনুদান চেয়েছে সংস্থাটির কাছ থেকে। উন্নত দেশগুলোর পরিবেশ দূষণের কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে। জলবায়ুগত কারণে যে পরিমাণে ক্ষতি হচ্ছে তার কোনো সহায়তা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনগত কারণে জিডিপির ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। ১৩ কোটি মানুষ জলবায়ু প্রভাবের শিকার। নদী ভাঙনে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু কোনো বৈশ্বিক সহযোগিতা পায় না। এ জন্যই অনুদান চাওয়া হয়েছে সংস্থাটির কাছ থেকে।

সবুজ তহবিলে বাস্তাবয়িত প্রকল্পের বাস্তাবয়ন গতি বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে সবুজ তহবিল বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদ হবে।

এ প্রসঙ্গে ইআরডি’র সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে জিসিএফ ২০০ কোটি ডলারের একটা ফান্ড। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানেই রয়ে গেছে। সবুজ তহবিলের পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে জিসিএফ বাংলাদেশের আশির্বাদ। তবে আমাদের দাবিগুলো আদায়ে বিশ্ব দরবারে সোচ্চার হতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯ 
এমআইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।