ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

১৩ দফা খুলনা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ পানি সম্মেলন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৯
১৩ দফা খুলনা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ পানি সম্মেলন দ্বিতীয় উপকূলীয় পানি সম্মেলনে অতিথিরা

খুলনা: দু’দিনব্যাপী ‘দ্বিতীয় উপকূলীয় পানি সম্মেলন’ ১৩ দফা খুলনা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আয়োজিত সমাপনী অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সভাপতিত্ব করেন। 

এর আগে সকালে সমাপনী দিনের প্রথমপর্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন্নাহার।

তিনি বলেন, দেশের অন্য এলাকার চেয়ে খুলনা তথা সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার ভৌগলিক পরিবেশ ও প্রতিবেশগত পার্থক্য রয়েছে।

জলবায়ুগত পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন খুলনা উপকূলীয় এলাকা। তবে তার মধ্যে পানীয়জল সংকটের বিষয়টি সবচেয়ে অগ্রাধিকারযোগ্য। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।  

তবে সমস্যার বাস্তবতায় খুলনা উপকূলীয় অঞ্চল যেহেতু সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে তাই এই এলাকার সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে বলে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

পানীয়জল সংকট নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

তিনি এ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুপারিশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন। এছাড়া তিনি এ এলাকার সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. খায়রুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের নবযাত্রা প্রকল্পের চিফ অব পার্টি রাকেশ কটাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও সঞ্চালনা করেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ওয়ার্ল্ড ভিশনের মো. নূরুল আলম রাজু।

দ্বিতীয় পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শ্যামল দত্ত। ১৩ দফা খুলনা ঘোষণা পাঠ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. দিলীপ কুমার দত্ত। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পানি অধিকার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীর ববী।

দ্বিতীয় উপকূলীয় পানি সম্মেলনে খুলনা ঘোষণার ১৩ দফার মধ্যে রয়েছে (১) পানিকে শুধুই ‘সম্পদ’ বিবেচনা না করে প্রতিবেশের একটি মৌলিক উপাদান বিবেচনায় নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের সব উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। (২) উপকূলীয় এলাকার সংবেদনশীল প্রতিবেশিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যামান পানি সংকট নিরসনে প্রাজন্মিক সমাধানে স্বতন্ত্র নীতিমালা প্রণয়ন ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। (৩) এ অঞ্চলের ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস তথা প্রাকৃতিক ও রাষ্ট্রীয় জলাধার (পুকুর, খাল ইত্যাদি) লিজ দেওয়ার প্রথা/আইন বাতিল করে এগুলো খাবার পানি, কৃষি-সেচ, ঘর গৃহস্থালির ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। এ সংক্রান্ত বিষয় সরকারের একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। (৪) উপকূলীয় অঞ্চলের সামগ্রিক পানি ব্যবস্থাপনা, জোয়ার-ভাটা প্রবাহ, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য, উপকূলীয় জীবন-জীবিকা এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিবেচনায় নিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে লোকজজ্ঞান ও স্থানীয় মানুষের কার্যকরী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। (৫) সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে এ অঞ্চলের পানি প্রবাহের গতি-প্রকৃতি ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত ক্রিয়া-বিক্রিয়া বিবেচনায় আনতে হবে। (৬) স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সারা দেশের মতো নয়; বরং উপকূলের জন্য বাড়তি বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জনবল বাড়ানোর মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি ও পানির উৎসের কেয়ারটেকারদের সক্ষমতার দিকটি সরাসরি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে রাখতে হবে। (৭) মনুষ্যসৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও নোনাপানি সংরক্ষণের উদ্যোগগুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে এবং স্বাদু পানির জলাধারগুলোকে নোনা পানির দূষণ থেকে নিরাপদ রাখার জন্য সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পানিকেন্দ্রিক অপরিকল্পিত বাণিজ্য: বিশেষ করে চিংড়ি ঘের বন্ধ করতে হবে। (৮) জলাবদ্ধতা রোধে নদীগুলোকে অবমুক্ত করতে হবে এবং বিল ও বাওড়গুলির সঙ্গে নদীর সংযোগ সাবলীল করতে হবে। (৯) উপকূলীয় পানি সমস্যার সমাধানকল্পে এ অঞ্চলের ১৪ জন সংসদ-সদস্যের সমন্বয়ে পার্লামেন্টারি ককাস গ্রুপ গঠন করতে হবে; যারা সংসদে এ বিষয়ক আলোচনা অব্যাহত রাখবেন। (১০) উপকূলের দরিদ্র মানুষকে স্যানিটেশনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। খোলা জায়গায় পায়খানাকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে অতি দরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পায়খানা বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্বল্পমূল্যের স্যানিটেশনপ্রাপ্তি সহজলভ্য করতে হবে। (১১) উপকূলের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সংকট মোকাবিলার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। উপকূলে কাজ করে এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন বাবদ বরাদ্দ রাখতে হবে (সিএসআর)। (১২) পানির উৎসগুলো দূষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় ‘মনুষ্য মল ব্যবস্থাপনা’র প্রতি জোর দিতে হবে। (১৩) সর্বোপরি, পানি প্রতিবেশ রক্ষায় রাষ্ট্রীয়, সরকারি, বেসরকারি খাতসহ সবাইকে নিয়ে একটি সমন্বয় দল গঠন করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৯
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।