ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

জুন শেষে দেশে বন্যার আশঙ্কা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২০
জুন শেষে দেশে বন্যার আশঙ্কা

ঢাকা: মৌসুমী বায়ু দেশের ওপর বিস্তার লাভ করায় দেশে ও ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর কারণে দেশের সবক'টি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক-দু’দিনের মধ্যে কোনোটি বিপদসীমার উপরে চলে যাবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, জুনের শেষে ও জুলাইয়ের প্রথম দিকে দেশে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে।

সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, ব্রক্ষ্মপুত্র ও যমুনা লাগোয়া কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা জেলার নিম্নাঞ্চলে এ বন্যা দেখা দিতে পারে।

পাশাপাশি তিস্তা ও ধরলার অববাহিকাতেও হতে পারে বন্যা। এসময় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নদীর পানি বিপদসীমার উপরে উঠতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত প্রতিবেদনে (১৭ জুন) বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দেশের উপর বিস্তার লাভ করেছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের অববাহিকাগুলোর অনেক স্থানে বৃষ্টিপাতসহ কতিপয় স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে দেশের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ব্রক্ষ্মপুত্র অববাহিকা: ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২ সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পানি বৃদ্ধির কারণে জুনের শেষ সপ্তাহ অথবা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বিভিন্ন স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা এবং ধরলা নদীর পানি আগামী দুই সপ্তাহে সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে চলতি সপ্তাহের প্রথমভাগ এবং পরবর্তী সপ্তাহের প্রথমভাগে কিছু স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এরফলে তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

গঙ্গা অববাহিকা: গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২ সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২ সপ্তাহে গঙ্গা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই। পদ্মা নদীর পানি জুনের শেষ বা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

মেঘনা অববাহিকা: মেঘনা অববাহিকার উজানে প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ১ সপ্তাহ পর্যন্ত অবাহত থাকতে পারে এবং সময় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে চলতি সপ্তাহের শেষে সুরমা-কুশিয়ারা এবং আপার মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীর (সারিগোয়াইন, যদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস, মনু, খোয়াই) পানি কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকা: আগামী ১ সপ্তাহে এসব অঞ্চলের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

১০ দিনের পূর্বাভাস:
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র ১৮ জুন (বৃহস্পতিবার) জানায়, ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আগামী ১০ দিন বাড়তে পারে। এ সময়ে কোনো কোনো জায়গায় পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটারের মধ্যে আসতে পারে। আপাতত ৭ দিনে ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদীর অববাহিকায় বন্যা হওয়ার (বিপদসীমা অতিক্রম) উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা নেই।

এ সময়ে গঙ্গা নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে। আপাতত গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।

আর ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে। তবে বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।

২৪-৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস:
আরিফুজ্জামান জানান, ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের গাণিতিক আবহাওয়ার মডেলের তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে আপার মেঘনা অববাহিকার সুরমা-কুশিয়ারা, কংস এবং সোমেশ্বরী নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারতের উত্তরাঞ্চলের সিকিম এবং জলপাইগুড়ি অংশে ২৪-৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা এবং ধরলার পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, চেরাপুঞ্জিতে ১০৪ মিলিমিটার, দার্জিলিংয়ে ৭০ মিলিমিটার এবং গোয়ালপাড়ায় ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ২৪ ঘণ্টায়।

দেশের ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৫টির, হ্রাস পেয়েছে ২৬টি। তবে সর্বশেষ তথ্যে বিপদসীমার উপরে যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২০
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।