বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক পাখিটি সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, এ পাখির ইংরেজি নাম Lineated Barbet এবং আমরা বাংলাদেশে একে ‘দাগি-বসন্ত’ বলি। ২৮ সেন্টিমিটারের এ পাখি আমাদের প্রতিটি পাহাড়ি বনেই রয়েছে।
‘পাখিটি কিন্তু সহজ নয় দেখা, যদিও বড় পাখি। কারণ ওর রংটা গাছের পাতার সঙ্গে একেবারে মিশে যায়। ওর মাথা ও বুক শুধু হালকা খয়েরি। ওটাও চোখে পড়ার মতো রং নয়। আপনি যে কোনো পাহাড়ি বনে ঢোকার আগে এই দাগি-বসন্তের উপস্থিতির কথা সহজেই জানতে পারবেন। কারণ সে খুবই চিৎকার করে ডাকে। উঁচু গলা; তবে তীক্ষ্ম-কর্ষক নয়; বেশ মিষ্টি: ‘পুকুক-পুকুক-পুকুক’ -এ রকম করে ডাকতেই থাকে। বিশেষ করে এই প্রজননের সময় অনেক ডাকে; ফলে বন একেবারে সোরগোল করে মাতিয়ে রাখে এই একটি প্রজাতির পাখি। এই ডাকটা এক মাইল দূর থেকে পর্যন্ত শোনা যায়। এত জোরে ডাকা পাখি বাংলাদেশে খু্বই কম আছে। ’
‘দাগি-বসন্ত বুনো ফল খাওয়া পাখি। ফলে ও সব রকম ফলের গাছে যেমন বট, পাকুড়, ডুমুর প্রভৃতি গাছে সব সময় ওকে দেখতে পাবেন। তবে আমাদের শহরের বট-পাকুড়ে গাছে ও আসবে না। পাহাড়ি বন ও বন সংলগ্ন বট-পাকুড়ে গাছে তাকে দেখা যাবে। ও এই ফল খায় বলে আমাদের প্রতিবেশ ব্যবস্থার বড় একটি উপকার করে। ও ফল খেয়ে যে মল ত্যাগ করে সেই মল থেকে প্রাকৃতিকভাবে সব গাছ হয়। পাখির পেটের ভিতর দিয়ে যে বীজগুলো কিছুটা আধাসিদ্ধ হয়ে যায়; এই আধাসিদ্ধ হলেই কিন্তু বট-পাকুড়ে গাছের বীজগুলো যেখানে পড়ে সেখান থেকেই চারা গজায়; নইলে গজায় না। এ জন্যই দাগি-বসন্ত বন সম্প্রসারণকারী একটি উপকারী পাখি। ’
দাগি-বসন্তের ব্যতিক্রমী প্রণয়ের দিক উল্লেখ করে এ পাখি-গবেষক বলেন, বনের গাছের উপরই নির্ভর করে তার জীবন। গাছের ফল যদি না থাকে; তাহলে সে বাঁচবে না। কারণ বুনো ফল ছাড়া সে কিছুই খায় না। আর সে বাসাও করে গাছের কোটরে। প্রতি বছর সে নতুন করে একটা কোটর বানায়। পুরনো কোটরে সে বাসা করে না। কারণ কোটর বানানোর যে প্রক্রিয়া এটাই হলো ছেলে এবং মেয়ে দাগি-বসন্তে প্রণয়ের একটা অঙ্গ।
‘তার মানে ও যদি নতুন কোটর না বানায় তাহলে মেয়ে দাগি-বসন্ত পাখিটি ছেলেটির প্রতি আকর্ষণ তৈরি হবে না। ওর হরমোন রিলিজ (নির্গমন) হবে না, ডিম তৈরি হবে না। গাছের কোটর বানানোটা প্রথমে শুরু করে ছেলে দাগি-বসন্ত। পরে মেয়ে দাগি-বসন্ত এসেও যোগ দেয়। এটা আমন্ত্রণের মতো ব্যাপার একটা। কোটর তৈরির ৯০ শতাংশ কাজ পুরুষ দাগিবসন্তকেই করতে হয়। ’
‘অন্য পাখিদেরও উপকার করে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক পাখি আছে যারা কোটরে বাসা করে; কোটর বানাতে পারে না। ফলে দাগি-বসন্তের ছানাগুলো বড় হয়ে বেরিয়ে চলে গেলেই সে কোটরে শালিক (Myna/Starling) এবং দোয়েল (Oriental Magpie Robin) ওরা ওখানে বাসা করে। ফলে দাগি-বসন্ত পাখিগুলো এভাবে আমাদের প্রকৃতির অন্য পাখিদের অনেক বেশি উপকার করে বলে জানান প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।
বাংলাদেশ সময়: ৭০০৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২০
বিবিবি/এএ