ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

কুড়িগ্রামে ফের হু হু করে বাড়ছে ধরলা-ব্রহ্মপুত্রের পানি

357 | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
কুড়িগ্রামে ফের হু হু করে বাড়ছে ধরলা-ব্রহ্মপুত্রের পানি

কুড়িগ্রাম: অবিরাম বর্ষণ আর উজানের ঢলে আশঙ্কাজনকহারে নদ-নদীর পানি বাড়ায় ফের বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বন্যাকবলিত চর-দ্বীপচরসহ নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ। টানা ১০ দিনের প্রথমদফা বন্যার ধকল কাটতে না কাটতেই ফের হু হু করে পানি বাড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। দুর্ভোগকে সঙ্গী করেই ফের নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন বন্যার্ত মানুষগুলো।

রোববার (১২ জুলাই) বিকেল ৩টায় ধরলার পানি বিপৎসীমা ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলায় ৫৭ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রে ৩০ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।

তবে স্থিতিশীল রয়েছে তিস্তার পানি। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার পানি দ্বিতীয়দফায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে বাড়ায় আগামী দু’তিনদিনের মধ্যে কুড়িগ্রামের নদ-নদী অববাহিকায় ফের মধ্যমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র।

সরেজমিনে, ধরলা অববাহিকার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর বড়াইবাড়ী, জগমনের চর ও কাচিচরে দেখা যায়, প্রথমদফা বন্যার পানি কমে যাওয়ায় সবেমাত্র অনেক পরিবার বাড়ি ফিরতে শুরু করলেও দ্বিতীয়দফায় ডুবে গেছে ঘরবাড়ি। চারিদিকে প্রথমদফা বন্যায় ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির মাঝেই ফের দ্বিতীয়দফায় বন্যার কবলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। প্রথমদফা বন্যায় ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের বন্যায় পরিবার-পরিজন ও গবাদি পশুর খাদ্যের চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বন্যার্তরা।

কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরল অববাহিকার জগমনের চরের সহিদার রহমান বাংলানিউজকে জানান, বাহে প্রথমবারের বানের পানি নাইমতে না নাইমতে ফের বানের পানি বাড়িতে উঠছে। চাইরোপাশে বানের পানি থাকায় কোনো কাজকাম নাই। সামান্য ত্রাণ দিয়্যা কতোদিন চলা যায়। নতুন করি বানের পানি বাড়িত ওঠায় মাথা আর কাজ করে না বাহে, জীবনটা শ্যাষ হইয়া গেইল। পরিবার-পরিজন ও গরু-ছাগল নিয়া কই যাই, কি খাই বাহে।

ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পাঙ্গার চরের আইজুদ্দিন ও কুড়ার পাড়ের আব্বাস আলী জানান, প্রথম বন্যার সময় বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে গেছে। নতুন করে বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট তলিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মানুষ দুর্ভোগকে সঙ্গী করে কিছু স্থানে চলাচল করলেও বেশীরভাগ বন্যাকবলিত এলাকায় নৌকা বা কলাগাছের ভেলাই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।

ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রথমদফা বন্যায় ঘর-বাড়িসহ ফসলের ক্ষতি কাঁটিয়ে উঠতে না উঠতেই ধরলা নদীর পানি বেড়ে ফের তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। দু’দিনেই তার ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছে মানুষ। বার বার বন্যার কবলে পড়ায় চরম দুর্ভোগে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলার সবক’টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মধ্য জুলাইয়ে একটি মাঝারি বন্যা দেখা দিতে পারে এবং তা ৭ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, এরই মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে জেলা ও সব উপজেলার কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদশে সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
এফইএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।