রাজশাহী: বন্যার কবলে পড়েছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। দিন দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।
পানিবন্দি থেকে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগে আছেন এসব অঞ্চলের দিনমজুর-ক্ষেতমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ। পর্যাপ্ত ত্রাণ না মেলায় অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। অভাব দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের।
বন্যায় ফসল ও বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাটের ক্ষতি হয়েছে। গ্রামে গ্রামে বাড়ি-ঘর তলিয়ে মানুষ গৃহবন্দি রয়েছে। ভেঙে পড়েছে মাটির ঘর-বাড়ি। বসতবাড়িতে পানি ওঠায় মানুষ বাঁধ ও সড়কের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। শত শত হেক্টর পাকা ধান, পাট ও সবজি ক্ষেত ভেসে গেছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। গৃহপাালিত পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণের সঙ্গে উজানের পানির তোড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। বাগমারা উপজেলার গনিপুর, বাসুপাড়া, কাচারী কোয়ালীপাড়া, দ্বীপপুর, বড়বিহানালী, ঝিকরা ও যোগীপাড়াসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকেছে।
দ্বীপপুর ইউনিয়নের জুলাপাড়ার মরাঘাটির সংলগ্ন ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে উপজেলার উত্তর এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক দিনের অতি বৃষ্টি ও উজানের পানিতে নতুন নতুন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বন্যায় পানিবন্দি মানুষ দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন। রোপা-আমন ও আউশ ধান, পানবরজ ও সবজি ক্ষেতসহ প্রায় ৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়ি ছেড়ে অনেকে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়ি কিংবা উঁচু কোন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকার রাস্তাঘাটসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে বানভাসী লোকজন অভিযোগ করছেন, সরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছেন না। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে প্রতিনিয়ত বন্যা দুর্গত এলাকার লোকজনের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, বন্যায় কোন এলাকার মানুষ অভুক্ত নেই। প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্লাবিত এলাকাগুলোতে ১৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, চলতি বন্যায় উপজেলার বড়বিহানালী ও দ্বীপপুর ইউনিয়নের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বাসুপাড়া, শ্রীপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের ফসল ও বাড়ি ঘরের ক্ষতি হলেও দুরাবস্থা নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চেয়ারম্যানদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। বানভাসীদের সহযোগিতায় দ্রুত পদক্ষেপ নেবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান বলেন, এবারের বন্যায় কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে। ৩ শত হেক্টর জমির ধান ও ৭ হেক্টর জমির পানবরজ ক্ষতির একটি তালিকা করা হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০
এসএস/ওএইচ/