ঢাকা: জলবায়ু প্রশমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে প্রাক্কলিত প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা যোগানের পরিকল্পনার বিপরীতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই অর্থের মাত্র ৬ শতাংশ বা ১২,৬৯৯.৭০ কোটি টাকা তহবিল আন্তর্জাতিক উৎস হতে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিশ্রুত ১৫% প্রশমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহে কোনো পথনকশা না থাকা এবং কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে আন্তর্জাতিক তহবিলগুলো হতে সরাসরি তহবিল সংগ্রহে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর অভিগম্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন অর্থায়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক এম. জাকির হোসেন খান এসব তথ্য তুলে ধরেন।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির রূপরেখা অনুসারে বাংলাদেশ এনডিসিতে জাতীয় প্রশমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রার আলোকে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং উপকূলীয় বনের সীমা বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীজনদের সমন্বয়ে জলবায়ু প্রশমন সহায়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও নবায়নযোগ্য শক্তি, বনায়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে।
কার্যক্রমের ধরনভেদে বিসিসিটিএফ হতে প্রদত্ত তহবিলের প্রায় ৫২ শতাংশ তহবিল (৩১৬ কোটি টাকা) বনায়ন ও বন ব্যবস্থাপনায়, ৩২ শতাংশ তহবিল (১৯৫ কোটি টাকা) নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে এবং ১৬ শতাংশ তহবিল (৯৮ কোটি টাকা) প্রশমন সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, পরিবেশ সুরক্ষায় সাংবিধানিক অঙ্গীকার ও প্রশমনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে নবায়নযোগ্য উৎস হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ না করে উল্টো কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
প্রশমন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, জনঅংশগ্রহণ ব্যবস্থা, স্থানীয়ভাবে প্রকল্পের চাহিদা এবং গুরুত্ব বিবেচনা না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্পে অর্থায়ন, অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রশমন কার্যক্রমের স্থান ও সময়ভিত্তিক কোনো প্রাধিকার ক্রম নির্ধারিত না থাকার সুযোগে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতির উদ্দেশ্যে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রবণতা বিদ্যমান রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতি নিয়মিত লঙ্ঘন করলেও অভিযুক্ত সংস্থাকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয় নি।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রশমন প্রকল্প প্রণয়ন, অর্থায়ন, কার্যক্রম বাস্তবায়ন, তদারকি, নিরীক্ষা ও মূল্যায়নে সংশ্লিষ্ট আইএমইডি এবং মহাহিসাব নিরীক্ষকের অধিদপ্তরের সঙ্গে বিসিসিটিএফর মধ্যে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ ও কোনো কার্যকর সমন্বয় ব্যবস্থা নেই।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২০
এসই/এমআরএ