লালমনিরহাট: ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতে প্রশান্তির বৃষ্টিতে সজিবতা ফিরে পেয়েছে তরুলতা ও ফসলের মাঠ। প্রশান্তির এ বৃষ্টি যেন কৃষিতে প্রকৃতির আশীর্বাদ।
বুধবার (১০ মার্চ) দিনগত মধ্যরাতে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটের উপর দিয়ে হালকা বাতাস ও বৃষ্টিপাত হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত ছিলো সামান্য শিলাবৃষ্টিও।
চাষিরা জানান, বুধবার দিনভর জেলার আকাশ মেঘে ঢাকা ছিলো। এক মাস আগে রোপণ করা বোরো চাষাবাদের জন্য হালকা বৃষ্টির প্রয়োজন হলেও শিলাবৃষ্টি বা বড় ঝড় কৃষক পরিবারে কাম্য ছিল না। দিন গড়িয়ে মধ্যরাতে হঠাৎ আকাশের গর্জন শুরু হয়। মেঘের গর্জনে শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ের শঙ্কায় প্রকম্পিত ছিল কৃষকের বুক। তবে মেঘের গর্জন হলেও শিলাবৃষ্টি বা বড় ঝড়ো হাওয়া নয়। প্রকৃতির আশীর্বাদ হিসেবে হালকা বৃষ্টি ও বাতাস বয়ে যায় জেলার উপর দিয়ে।
ফাল্গুনের শেষ সময় বৃষ্টি যেন প্রকৃতির তরুলতা থেকে ফসলের মাঠ যেন স্বস্থি ফিরে পেয়েছে। ধুলোবালি মুছে প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে। প্রকৃতির এ আশীর্বাদের হাসি ফুটেছে প্রতিটি কৃষক পরিবারে। তাই ভোরে ঘুম থেকে জেগেই ফসলের মাঠে ছুটেছে চাষিরা। ক্ষেতে আইল ঠিক করতে আর ফসলের ক্ষেতে সার প্রয়োগে ব্যস্ত চাষিরা। নানান জাতের সবজিসহ বোরো ধানের চারায় ছেয়ে আছে কৃষকের মাঠ।
তবে বোরো ক্ষেতের পর্যাপ্ত উপকার হলেও আলু আর তামাক ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতির শঙ্কাও রয়েছে চাষিদের। উঠতি আলু ক্ষেতে পানি জমে থাকলে সেই আলু বীজ হিসেবে রাখা সম্ভব হবে না। একই অবস্থা তামাকেও বৃষ্টির পানিতে তামাকের ওজন এবং ফলন কমে যাওয়ার আশংকা করছেন চাষিরা। তাই এ বৃষ্টিকে তারা ক্ষতিকরও ভাবছেন। তবে আলু ও তামাক ছাড়া অন্য সকল ফসলে ব্যাপক উপকার করেছে বসন্তের এ বৃষ্টি।
আরাজি দেওডোবা গ্রামের কৃষক সন্তোষ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, রাতে আকাশের গর্জনে বুক কেঁপে উঠেছিল শিলাবৃষ্টির আশংকায়। বড় বড় পাথর পড়লে বোরো ধানের চারা গাছগুলো নষ্ট হয়ে স্বপ্ন ভেঙে যেতো। হালকা বৃষ্টির কারণে বোরো ক্ষেতে কয়েকদিন সেচ না দিলেও চলবে। একই সঙ্গে এ বৃষ্টির কারণে জমিতে সারও কম লাগবে। আবহাওয়া ভাল থাকলে বোরো বাম্পার ফলনের আশা করেন এ কৃষক।
মহিষখোচার কৃষক আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বোরো ধানের খুব উপকার হলেও আলু ও তামাকের কিছুটা ক্ষতি করেছে এ বৃষ্টি। তবে আলু দ্রুত তুলে নিলে শঙ্কা কেটে যাবে। তামাকের তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। বৃষ্টির পানিতে তামাক পাতার আটা ধুয়ে যাওয়ায় ওজন এবং ফলন কম হবে তামাকে। তবুও এ বৃষ্টি কৃষিতে প্রকৃতির আর্শিবাদ।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বাংলারিউজকে বলেন, গেল রাতে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ মিলিমিটার। এ সময় বাতাসের গতি ছিল সর্বচ্চ ৮০/৮৫ কিলোমিটার। এটা হঠাৎ নয়, মৌসুমের বৃষ্টিপাত। তবে কৃষিতে তেমন কোনো ক্ষতি করেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক শামীম আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, গতরাতে জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালকা বৃষ্টি ও বাতাসে কৃষিতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। আলুর ক্ষতির আশঙ্কা করলেও তা ক্ষতি হবে না। আলু পরিপক্ক হয়েছে দ্রুত তুলে নিলে কোনো ক্ষতি হবে না। সব মিলে বসন্তের এ বৃষ্টি কৃষিতে প্রকৃতির আর্শিবাদই ছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২১
কেএআর