ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: নগরায়নের ফলে দিন দিন কমছে রাজধানী ঢাকার সবুজের পরিমাণ। ব্যতিক্রম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের দিন ছাড়া পুরো উদ্যানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহ ছিল। ভোর হলেই বিভিন্ন বয়সী মানুষেরা সমাবেত হতো শারীরিক ব্যায়াম আর স্নিগ্ধ বাতাসে অক্সিজেন নেওয়ার আশায়।
কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
বুধবার (৫ মে) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, টিএসসির বিপরীত দিকে গেটের বাম পাশ থেকে শুরু করে শাহবাগ থানার বেষ্টনী পর্যন্ত হাঁটার রাস্তার পাশের বড় বড় গাছগুলো কাটার জন্য লাল রং দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। এ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে দু’টি রেস্টুরেন্ট।
মূলত হাঁটার রাস্তা বড় করতে গিয়ে কাটা পড়ছে এসব বড় গাছ। সেখানে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো থেকে লাগানো হয়েছে প্রতিবাদী ব্যানার। ষোল আনা বাঙালি নামে সংগঠনের পক্ষে লাগানো এ ব্যানারে লেখা হয়েছে, পরিবেশ প্রকৃতির অলংকার, বাংলাদেশ আমার অহংকার; গাছ কাটা বন্ধ করো।
ক্রস চিহ্ন দেওয়া স্থানে প্রতীকী মানববেষ্টনী দেওয়া হয়েছে, যেন গাছ কাটতে না পারে। এ দুই রেস্টুরেন্টের একটার কাজ মোটামুটি শেষের দিকে, আরেকটার ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়েছে। এ অংশে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হচ্ছে।
অপরদিকে (উদ্যানে) টিএসসির বিপরীত অংশের গেট দিয়ে ঢুকতে ডান পাশে তৈরি করা হচ্ছে আরো দু’টি রেস্টুরেন্ট। সেখানে একটির গ্রাউন্ড ফ্লোরের বিম, আর কলামের রড বাধাই করা হয়েছে। কালি মন্দিরের গেটের অংশেরটাতে কলাম সাটারিং এর কাজ চলছে। উদ্যানের পূর্ব পাশেও তিনটি রেস্টুরেন্টের কাজ শেষ দিকে। মাঝখানেরটায় কাজ শেষ।
এ বিষয়ে নির্মাণ শ্রমিক মইনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এখানে সাতটি রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। এখন একটির ছাদ ঢালাই চলছে। আমরা চুক্তিতে কাজ করছি। এর বেশি কিছু জানি না।
উদ্যানের পরিবেশ নষ্ট করে এ রকম রেস্টুরেন্ট তৈরি করা নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসার বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তা বড় করতে হবে কেন? এখন তো হাঁটার জন্য কত সুন্দর রাস্তা আছে। দেখেন, এখন কাঠবিড়ালী ঘুরে বেড়াচ্ছে। গাছগুলো কাটলে এসব প্রাণী কই যাবে? প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে এসব রেস্টুরেন্ট নির্মাণ বন্ধ করা উচিত। করলেও সেটা পরিবেশ প্রকৃতি নষ্ট না করে পরিকল্পিতভাবে করতে হবে।
নোঙর বাংলাদেশ, স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট, গ্রিন প্লানেট নামে তিনটি সংগঠন গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। বুধবার উদ্যান গেটে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেন তারা। মানববন্ধন থেকে তরুণ নাট্য নির্মাতা সুদীপ সজীব বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে গগণচুম্বী গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। যেখানে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রকৃতি বাঁচিয়ে রেখে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, সেখানে আমাদের দেশে গাছ কেটে হাঁটার পথ, খাবারের দোকান বানানো হচ্ছে। একটু চেষ্টা করলেই গাছগুলো বাঁচানো যেতো। উদ্যানের এ গাছ হত্যার মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর দায় কে নেবে? অপরিকল্পিতভাবে গাছ হত্যার এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আগামী বর্ষায় কমপক্ষে ১০ হাজার গাছ এ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রোপণ করার দাবি জানাচ্ছি।
এসময় ‘উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করা বন্ধ করুন’, ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’, ‘দেশের বায়ু, দেশের মাটি, গাছ লাগিয়ে করবো খাঁটি’, ‘মানুষের জীবন উদ্ভিদের জীবনের অধীন’ লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন বিক্ষোভকারীরা। এদিকে, গাছ কাটার বিরুদ্ধে অনলাইনেও প্রতিবাদে সরব হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এসব উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাখ্যায় বলেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে আন্তর্জাতিকমানে গড়ে তোলা ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমানে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ- যেমন, পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন, ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির ধারণ ক্ষমতার কার পার্কিং এবং শিশুপার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ চলছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গৃহীত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কিছু গাছ কাটা হলেও প্রায় ১০০০ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব কার্যক্রমের তথ্য খণ্ডিত প্রচারিত হওয়ায় অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২১
এসকেবি/এসআই