পটুয়াখালী: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলায় ইতোমধ্যে ৮০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র, জরুরি খাদ্য সহায়তা, শিশু খাদ্য ও পশু খাদ্যসহ অন্যান্য জরুরি সাড়াদানে দুই কোটি চুয়ান্ন লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার।
এছাড়া জেলায় মোট ৯৩টি মেডিক্যাল টিম, খাওয়ার স্যালাইন ও ডায়রিয়ার স্যালাইনসহ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, আনসার, রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি), স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক টিম ও সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক সমন্বয়ের জন্য ইতোমধ্যে জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর: ০৪৪১-৬২৩৯৪ ও ০১৭২৮-৪৬৭৬২৭।
ইয়াস মোকাবিলায় সোমবার (২৪ মে) বিকেলে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী এ সভার সভাপতি করেন। সভায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে করণীয় বিষয় সমূহ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ডিসি।
সভায় পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান জানান, পটুয়াখালীতে ১৩শ’ পুলিশ সদস্য দুর্যোগের আগে ও পরে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও সাইক্লোন শেল্টারে নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি)।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মাসুদ রানা বলেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে এক নম্বর সর্তকতা সংকেত নামিয়ে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হুমায়ন কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপর মো. মাহফুজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. তানিমা পারভিন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলায় সিপিপি, স্কাউট, যুব রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার টিমসহ মোট নয় হাজার স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা কাজ করবেন।
ইয়াস মোকাবিলায় আরও নতুন নতুন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ও ঘোষণার কাজ চলমান। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখতে বলা হয়েছে। শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রেখেছে প্রশাসন।
পটুয়াখালী জেলাসহ সব উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে এসওডি অনুযায়ী জরুরি সভা করার নির্দেশনা করেছে। চর ও দ্বীপ সমূহের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিপদ সংকেত দেখানোর জন্য সাংকেতিক পতাকা টাঙানো ব্যসস্থা করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামাদি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ পটুয়াখালী জেলায় ২ নম্বর সংকেত ঘোষণা করায় দুর্যোগ মোকাবিলার নিজেদের মধ্য যোগাযোগ ও প্রস্ততি নিচ্ছে- সিপিপি, রেড ক্রিসিন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার টিমের সদস্যরা।
পায়রা বন্দরসহ জেলার কোথাও এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েনি। সাগরে টানা ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরা নৌকা এবং ট্রলারগুলোকে আগেই নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
দুর্যোগ মুহূর্তে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার মানুষের খাদ্য সরবরাহের জন্য চিড়া, গুড়, বিশুদ্ধ পানিসহ মোমবাতি ও দিয়াশলাই মজুদ রাখার কাজ শুরু করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২১
এসআরএস