সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলে ৪৩টি পয়েন্টে নদীর বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আগমনী বার্তায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলবাসী।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে এসব জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপকূল। নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ৫০টির বেশি গ্রাম। বিধ্বস্ত হয় অর্ধ লক্ষাধিক ঘরবাড়ি। ভেসে যায় হাজার হাজার কোটি টাকা মৎস্য ও কৃষিসম্পদ। ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বছর পেরিয়ে গেলেও জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি। যে তিমিরে ছিল, এখনো সেই তিমিরেই রয়েছে ভঙ্গুর বাঁধগুলো।
হরিনগরের সিংহড়তলী গ্রামের বিশ্বজিত রায় বলেন, আম্পানের পরে সিংহড়তলীর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো সত্ত্বেও তারা মেরামত করার উদ্যোগ নেয়নি। এই ঝড়ে বাঁধ ভাঙলে এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে যাবে।
বুড়িগোয়ালীনির দূর্গাবাটি গ্রামের দিনেশ মণ্ডল ও রতি রাণী বলেন, আম্পানের সময় বাঁধ ভেঙে ঘর-বাড়ি সব গেছে। গাছপালা নষ্ট হয়ে গেছে, এখনো লাগাতে পারিনি। আবার ঝড় আসছে, এবার বাঁধ ভাঙলে যাওয়ার জায়গা থাকবে না। বছর বছর এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জে ৭টি, বুড়িগোয়ালীনিতে ৮টি, গাবুরায় ১৪টি, পদ্মপুকুরে ৮টি, কাশিমাড়িতে ৩টি ও আটুলিয়া ইউনিয়নের ৩টি পয়েন্টে নদীর বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বুড়িগোয়ালীনি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডল বলেন, আমার ইউনিয়নে ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট আছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর দীর্ঘ এক বছর অতিবাহিত হলেও শুধুমাত্র রিং বাধ দিয়ে পানি আটকানো ছাড়া এ পর্যন্ত টেকসই বাধ নির্মাণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আগমনী খবরে এখন নড়েচড়ে বসেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা এখন তড়িঘড়ি করে বাঁধের উপর আইল দিচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, মুন্সীগঞ্জে ৭টি পয়েন্ট খুব ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য জোয়ারের পানি বাড়লেই গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে। এ নিয়ে এলাকার মানুষ খুবই আতঙ্কিত অবস্থায় আছে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য ডালিম ঘরামী বলেন, আম্পানের রেশ কাটতে না কাটতেই আবার ইয়াসের পূর্ভাবাস দেওয়া হয়েছে। গোটা উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। উপকূলের মানুষ এখন ঝড় ভয় পায় না, ভয় পায় বেড়িবাঁধের। কারণ সামান্য জোয়ার বাড়লেই অর্থাৎ পানির উচ্চতা এক ফুট বাড়লেই তা আটকে রাখার ক্ষমতা বিদ্যমান বেড়িবাঁধের নেই। সরকারি মহল থেকে বারবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয় না। মানুষ এখন নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মাসুদ রানা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে মাটি দিয়ে উঁচু করা হচ্ছে। ইয়াসের আঘাতের আগেই আমরা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো সংস্কার করতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২১
আরএ