ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

৯ ঘণ্টায় বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত সিলেটে!

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০২১
৯ ঘণ্টায় বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত সিলেটে! ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেটে হয়ে গেলো ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি।

সিলেট: আষাঢ়ের ৩ সপ্তাহ গত হয়েছে। এই সময়ে অথৈ জল থাকার কথা হাওর বাওরে।

কিন্তু সে পরিমাণ পানি হয়নি। এ জন্য প্রকৃতিতে বৃষ্টি না হওয়ার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আসছিলেন আবহাওয়াবিদরা। তবে বৃষ্টির শহর সিলেট বলে কথা! মাত্র ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেটে হয়ে গেলো ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি। এটা কেবল এ মৌসুম নয়, বছরেরও সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেবে মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে বুধবার (০৭ জুলাই) ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৩২ মিলিমিটারের এই বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু ওইদিন (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এক মিলিমিটারও বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে এটি রেকর্ডের আওতায় পড়ে না। তবে বৃষ্টির শহর সিলেটে রাত ৯টা থেকে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। রাতভর অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়।

রাতে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার পাশে অপেক্ষমান থেকে কাটিয়ে দিয়েছেন। অবশেষে রাতে সড়কে বৃষ্টির হাটুজল মাড়িয়ে অনেকে পৌঁছেছেন বাড়িতে। রাতভর বজ্রবৃষ্টিতে ডুবেছে নগরের রাস্তাঘাট। এতে নগরবাসীকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।

এদিকে, মুষলধারে বৃষ্টি বুধবার (০৭ জুলাই) সকাল গড়িয়ে দুপুর পেরিয়েছে। তবুও চলছিল ভারি বর্ষণ। অবশেষে বিকেলের দিকে আকাশ কিছুটা শান্ত হলেও গোমট বেধে আছে মেঘের ভেলা।

অল্প সময়ের এই বৃষ্টিই এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। অথচ বৃষ্টির শহর সিলেটে গত বছরের শেষভাগ থেকে এ বছরের শুরু দিকটাতে কোনো বৃষ্টিই ছিল না। আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময় যখন পানিতে টয়টম্বুর থাকার কথা সিলেটের হাওর-বাওর। কিন্তু হাওরগুলোতে এখনো সে পরিমাণ পানি নেই বলে জানিয়েছেন হাওরপারের লোকজন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়াবিদ মো. সাঈদ আহমদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর আর এ বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেও বৃষ্টির ছিটেফোটোও ছিল না। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ বৃষ্টি হয়েছে রাত ৯টা থেকে পরদিন বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত। এছাড়া ভোর ৬টার পর থেকে ১২টা পর্যন্ত আরো ১৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আগের রাত ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, জুনে ২২ দিন বৃষ্টি হওয়ার কথা। হয়েছে ২৮ দিন। কিন্তু দিন বেশি হলেও তুলনামূলকভাবে বৃষ্টিপাত ছিল কম। আর সারাবছরে ৭১ দিন বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৭৫ দিন। তাও বৃষ্টি পরিমাণে কম হয়েছে। এছাড়া গত বছরের নভেম্বরে মাত্র দশমিক ০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ডিসেম্বরে বৃষ্টির দেখা মিলেনি। একইভাবে এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হয়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছরের জানুয়ারিতে ৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা সেখানো বৃষ্টিপাতের রেকর্ড শূণ্যের কোটায়। ফেব্রুয়ারিতে ৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও পুরো মাসটি ছিল বৃষ্টিহীন। মার্চে ১৫৫ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও ১২৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এপ্রিলে ১৭৫ দশমিক ৬ মিলিমিটারের স্থলে ১৪২ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় সারা মাসে। মে মাসে ৫৬৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের স্থলে ৩৬৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। জুনে ৮১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটারের স্থলে ৬৭০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।

আর জুলাইয়ে ৭ তারিখ পর্যন্ত ২০১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কম সময়ে এটাই এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২১
এনইউ/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।