লালমনিরহাট: উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে ফের তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রোববার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে একই পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ২৪ ঘণ্টা পরে তা কমে গিয়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের বিপৎসীমা অতিক্রম করে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ।
জানা গেছে, ভারতের সিকিম উপত্তকা থেকে সৃষ্ঠ তিস্তা নদী ভারতে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উজানে ভারতের অংশে ভারত সরকার বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা নদীর এক তরফাভাবে ব্যবহার করছে। ফলে শুস্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে কোনো পানি থাকে না। মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তা। আবার বর্ষাকালে অতিবর্ষণের ফলে ভারতের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যা আর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলাসহ নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা।
তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পূর্বাভাষ কেন্দ্র জানায়, উজানের পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দিনগত রাত থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে ১৩ আগস্ট বিপৎসীমা অতিক্রম করে। দিনভর বৃষ্টিতে আরও বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ। একই দিন বিকেল ৩টার দিকে দেশের বৃহত্ততম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ২৪ ঘণ্টা পরে বিপৎসীমা থেকে নিচে নামে পানি প্রবাহ। যা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পরেই ফের বিপৎসীমা অতিক্রম করে।
১৫ আগস্ট সকালে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই দিন দুপুরের উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে আবারও বাড়তে থাকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সব জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ‘লকডাউন’র ধকল না কাটতে বন্যার শঙ্কায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের মানুষজন।
করোনা পরিস্থিতিতে ‘লকডাউনে’ দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকায় বন্যার জন্য গচ্ছিত খাদ্য শেষ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিস্তা চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষজন। জেলার পাঁচটি উপজেলার শত শত পরিবার ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে শিশু বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধিদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। গবাদি পশু পাখি নিয়েও চরম কষ্টে পড়েছেন পানিবন্দি তিস্তা পাড়ের মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্রাবিত হয়েছে। তবে বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।
** তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২১
এসআরএস