সিলেট: ভারি বর্ষণে বিপর্যস্ত জনজীবন। তার ওপর ডাইক ভেঙে ঢুকেছে লোকালয়ে পানি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের জকিগঞ্জে সুরমার ছয়টি ডাইক ভেঙে প্লাবিত হয়েছে দুটি ইউনিয়নের ১০ সহস্রাধিক মানুষ। ডাইক ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। ফলে তলিয়ে গেছে উপজেলার দুই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত ঘর-বাড়ির লোকজন। সুরমার ডাইক ভেঙে যাওয়া বারোহাল, মানিকপুর, কাজলসার ইউপিসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে বন্ধ হয়ে পড়েছে গ্রামীণ সড়কে যোগাযোগ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধানী বীজতলা। পুকুর ও মৎস্য খামার তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ফিশারি মালিকরা।
পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা থাকায় তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জের প্রধান ডাকঘর, প্রাণী সম্পদ অফিস, স্থল শুল্ক স্টেশন, জকিগঞ্জ ফাজিল সিনিয়র মাদ্রাসা, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের একাংশসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট তলিয়ে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) পল্লব হোম দাস বলেন, জকিগঞ্জে কুশিয়ারার কোনো ডাইক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বা ভাঙেনি। তবে, উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নে সুরমার ৫টি ডাইক ভেঙেছে এবং বারোহালে ১টি ডাইক ভেঙে অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষের জন্য তিনি জেলা প্রশাসন থেকে ১৮ হাজার মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে, আপাতত শুকনা খাবারের প্রয়োজন হচ্ছে না। এদিকে কোম্পানীগঞ্জে বন্যায় বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাঘাত ঘটনায় বিদ্যালয় আঙ্গিনায় জমে আছে পানি। তাছাড়া শতাধিক পরিবার পানিবন্দি।
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও লুসিকান্ত হাজং বলেন, বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্থানে পানি নিষ্কাশনজনিত কারণে জলাবদ্ধতা আছে। তবে শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৫শ প্যাকেট শুকনা খাবারের চাহিদা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে ১২ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৬ মে) থেকে বন্টন শুরু করবেন। এছাড়া ভারি বর্ষণে উপজেলার কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য ৭৯ মেট্টিক টন চাল ও শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গোয়াইনঘাটের ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, বন্যার কারণে উপজেলার তিনটি সড়ক ডুবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক, সারি-গোয়াইনঘাট, ধোপাগোল-ফতেহপুর-ডৌবাড়ি সড়ক। এছাড়া বন্যার পানিতে পোল্ট্রি খামারেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাওর সংলগ্ন এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। উপজেলা সদরের অনেক জায়গার লোকজনও পানিবন্দি। আজ ২৪ টন চাল ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
রোববার (১৫ মে) পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী সুরমা-কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি চারটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিন বিকেল ৩টায় জকিগঞ্জে অমলশীদ পয়েন্ট সুরমার পানি বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কানাইঘাটে সুরমার পানি ১ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, শেওলায় কুশিয়ারার পানি ৪ সেন্টিমিটার এবং কানাইঘাটে সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আগামী তিন দিন (১৮ মে) পর্যন্ত সিলেটে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০২২
এনইউ/এএটি