বাগেরহাট: টানা দুই দিনের বৃষ্টি ও পূর্ণিমার জোয়ারে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম।
এদিকে রোববার দুপুরের জোয়ারে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বনের করমজল, দুবলার চরসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত দুই-তিন ফুট পানি বেড়েছে। এতে বন্য প্রাণীর ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এই পানিতে বনের কোনো প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিছেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির।
অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ঠ নিম্ন চাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। কোন কোন ট্রলার রোববার রাতেই লোকালয়ে ফিরে এসেছে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলেরা।
বাগেরহাট পৌর শহরের রাহাতের মোড়, সাধনার মোড়, পূর্ব বাসাবাটি, কেবিবাজারেরে পেছনে, পুরাতন বাজার ভূমি অফিসের সামনে, মালোপাড়া, বাগেরহাট মাছ ও কাঁচা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার মাঝিডঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্প, চরগ্রাম, বিষ্ণুপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কচুয়া উপজেলার ভান্ডারখোলা, নরেন্দ্রপুর, প্রতাপপুর, সাংদিয়া, আফরাসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিত মোরেলগঞ্জের প্রধান বাজার, উপজেলা পরিষদের অফিস চত্বর, তেলিগাতি, হোগলাপাশা, ফুলহাতাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেক মানুষ। এছাড়া রামপাল, মোংলা, শরণখোলা উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মালোপাড়া এলাকার মো. শহিদ বলেন, প্রতি পূর্ণিমা ও আমাবশ্যার জোয়ারে স্লুইজ গেট থেকে পানি এসে আমাদের এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। এসব স্লুইজ গেট নষ্ট থাকায় প্রতিনিয়ত আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া যেসব স্লুইজ গেট বন্ধ থাকা প্রয়োজন তা খোলা রাখা হয় জোর করে। ফলে আমাদের ছাগল, গরু, হাঁস-মুরগি পানিতে ভেসে যায়।
একই এলাকার হাসি বেগম বলেন, এত বেশি পানি উঠেছে যে, চুলাও পানিতে ডুবে রয়েছে। রান্নাও করতে পারিনি রোববার রাত থেকে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কীভাবে বাঁচব।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের সাব্বির মোল্লা বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আমাদের এলাকার রাস্তা যেমন ডুবে গেছে, তেমনি আমাদের বাড়ি ঘরেও পানি উঠেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে আমাদের।
সাগর উত্তাল থাকায় লোকালয়ে ফিরে আসা জেলে নয়ন বলেন, রোববার সকাল থেকেই সাগর উত্তাল ছিল। সময় বাড়ার সঙ্গে সাগর আরও বেশি উত্তাল হতে থাকে। আমরা রাতেই রওনা দিয়ে বাগেরহাট কেবি বাজার এলাকায় চলে আসি। তবে এযাত্রায় কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, পূর্ণিমার জোয়ার ও টানা বৃষ্টিতে বেশকিছু এলাকায় পানি উঠেছে। তবে এতে কোনো মানুষ বা প্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এলাকায় খোঁজ খবর রাখছেন। কারও কোনো বিপদ হলে বা খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২
এমএমজেড