ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

জেলেদের মোবাইল সিম, হারায় সমুদ্র-নদীতে

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৪
জেলেদের মোবাইল সিম, হারায় সমুদ্র-নদীতে

চরমোন্তাজ, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী ঘুরে এসে : মাছ ধরতে গিয়ে উপকূলের জেলেরা অসংখ্য মোবাইল সিম হারাচ্ছেন সমুদ্র-নদীতে। জলদস্যুদের হামলা, ঝড়ের তাণ্ডব কিংবা স্বাভাবিক সময়ে মাছ ধরতে গিয়ে সিমসহ মোবাইল ফোনসেট হারাচ্ছেন তারা।

কিন্তু এ সিম তুলতে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেকে ব্যবহৃত নাম্বারের সিম তুলতে না পেরে নতুন সিম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সরেজমিনে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জেলেদের নানা সমস্যা নিয়ে আলাপকালে বাংলানিউজকে তারা এসব তথ্য জানান।

জেলেরা জানান, সমুদ্র ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে পরিবার পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে জেলেরা বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল ব্যবহার করেন। এ সময় নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হারিয়ে ফেলেন মোবাইল সিম । হারানো সিম উত্তোলন করে পুনরায় পরিবার পরিজনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু বিচ্ছিন্ন এইসব এলাকায় হারিয়ে যাওয়া সিম উত্তোলনের সুযোগ না থাকায় তারা প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়েন।

চরমোন্তাজের সাগর বাজারের জেলে হাবিবুর রহমান বলেন, এক মাসে তিনবার গ্রামীণ সিম হারিয়ে গেছে। কিন্তু এই এলাকায় হারানো সিম উত্তোলনের কোনো সুযোগ না থাকায় নতুন সিম কিনে নিয়েছি। এখান থেকে পুরনো সিম সীম উত্তোলন করতে রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরে যেতে হয়। সেখানে যেতে যেমন খরচ আছে, তেমনি সময়ও পাওয়া যায় না।

চর বেষ্টিনের আরেক জেলে জহিরুল ইসলাম বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ডাকাতেরা মোবাইল নিয়ে যায়। কখনো ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে মোবাইল হারাই। আবার মাছ ধরতে গিয়ে পকেট থেকেও মোবাইল পড়ে যায়। মোবাইল সীম হারানোটা জেলেদের কাছে একটা বড় সমস্যা। কিন্তু এই এলাকায় পুরানো সিম তুলতে গিয়ে আমরা অনেক সমস্যায় পড়ছি।     

জেলে ও স্থানীয় মোবাইল সার্ভিস সেন্টারগুলোর পরিচালকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য অধিকাংশ জেলে গ্রামীণ সিম ব্যবহার করেন। এর পরের অবস্থানে রয়েছে রবি। বর্ষাকালে ছোটখাট নানা দুর্যোগের কারণে সিম হারানোর ঘটনা বেশি ঘটে। তখন জেলেদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। স্থানীয়ভাবে হারিয়ে যাওয়া সিম উত্তোলনে সমস্যা, আবার কাজ রেখে একদিন কিংবা দু’দিনের জন্য সিম উত্তোলনের জন্য উপজেলা সদরে যাওয়াও সম্ভব হয় না। অথচ মাছ ধরার জন্য নৌকা-ট্রলারে অবস্থানকালে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটও জরুরি।

পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীর একটি দ্বীপ ইউনিয়ন চরমোন্তাজ। ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র স্লুইজ বাজারে মৌসুমে হাজার হাজার জেলের ভিড় জমে। মাছের মৌসুম ছাড়াও এখানে অবস্থান করেন অনেক জেলে। এই বাজারে আসা জেলেরা জানান, এখানে রবির একটি সার্ভিস সেন্টার আছে; কিন্তু যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই গ্রামীণের কোনো সার্ভিস সেন্টার এখানে নেই।

মোবাইল অপারেটর রবির সার্ভিস সেন্টারে কিছুক্ষণ অবস্থান করে মোবাইল সীম হারানো জেলেদের সমস্যা আরও ভালো করে বোঝা গেলো। ওই সেন্টারে আসা বেশ ক’জন জেলে বাংলানিউজকে জানান, সাগর-নদী এলাকায় নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায় বলে আমরা গ্রামীণ সিম ব্যবহার করি। কিন্তু সিম হারিয়ে গেলে তা আর তুলতে পারি না। জেলেদের সুবিধার্ধে সাগরপাড়ের এই এলাকায় আমরা গ্রামীণের সেবা চাই। কারণ সিমের জন্য উপজেলা সদও পর্যন্ত যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

চরমোন্তাজের স্লুইজ বাজারে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের পাশাপাশি রবি সার্ভিস সেন্টারের পরিচালক মো. আল-মামুন বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষাকালে ইলিশ ধরার মৌসুমে এই বাজার বিভিন্ন এলাকার জেলেদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে। তখন বাড়িতে থাকা স্বজনদের খোঁজ খবর নিযে বহু জেলে এখানে হারানো সিম উত্তোলনের জন্য আসেন।

শুধু চরমোন্তাজ নয়, রাঙ্গাবালীর দ্বীপ ইউনিয়ন চালিতাবুনিয়া, ভোলার দ্বীপ ইউনিয়ন কুকরী মুকরীতেও জেলেদের কাছ থেকে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেবা নিশ্চিত করতে দ্বীপ এলাকায় মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে বিশেষ নজর রাখার দাবি জানান তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।