ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

‘বাজেটে ইলেক্ট্রিক গাড়ি, লিথিয়াম ব্যাটারি ও চার্জিং স্টেশনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৪
‘বাজেটে ইলেক্ট্রিক গাড়ি, লিথিয়াম ব্যাটারি ও চার্জিং স্টেশনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি’

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটের বিষয়ে বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বামা) ও বাংলাদেশ ইলেকট্রিক মোবিলিটি অ্যাসিয়েশন (বেমা-প্রস্তাবিত) বলেছে, বর্তমান অর্থনীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনীতির গতি পুনরুদ্ধারে এ বাজেট কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

গত বুধবার (১২ জুন) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংগঠন দুটি বাজেটের ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে।

পরে এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, এবারের বাজেটের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যতম উপাদান হলো স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা। স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আশা ছিল স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম উপাদান ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প বিকাশে প্রয়োজনীয় সহায়তামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এটি প্রতিফলিত হয়নি। যা এই শিল্পের প্রসারকে এবং মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারেটি প্ল্যান ২০৩০-এ গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যে চলমান ইলেকট্রিক ভেহিকেল উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনাকেও বাধাগ্রস্ত করবে। আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প উন্নয়নে বৎসরভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগের শর্তসাপেক্ষে আগামী দুই বছর সিবিউ অবস্থায় ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক মওকুফকরণসহ সর্বনিম্ন কাস্টমস ডিউটি নির্ধারণ এবং পরবর্তী ১০ বছর ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ন্যায় ইলেকট্রিক গাড়ির প্রোগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ওপর ভিত্তি করে কর কাঠামো নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি এবং নতুন ইলেকট্রিক ভেহিকেল রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স মওকুফসহ প্রতিবছর গাড়ির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন দেওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স মওকুফের প্রস্তাব করছি। এছাড়া ইলেকট্রিক ভেহিকেলে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ও চার্জিং স্টেশন স্থাপনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর সর্বনিম্ন হারে আমদানি শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। ইলেকট্রিক মোটর শিল্প বিকাশে এই শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ুসহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী খাতগুলোর মধ্যে পরিবহন সেক্টরকে দ্বিতীয় বৃহত্তম হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বাংলাদেশে তৃতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী খাত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় প্রণীত রূপকল্প-২০৪১ এর আলোকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতিসমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় সব প্রকার পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবহন খাত থেকে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে শর্তহীনভাবে ৩.৩৯ মেট্রিক টন এবং শর্তযুক্তভাবে (বৈদেশিক সাহায্যে) ৬.৩৩ মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করেছে। মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারেটি প্ল্যান ২০৩০ অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রচলিত যানবাহনের ৩০ শতাংশ ইলেকট্রিক ভেহিকেলে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে একটি যথোপযুক্ত ইলেকট্রিক ভেহিকেল পলিসি যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারে।

অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, বায়ুদূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীর উন্নয়নশীল ও উন্নত রাষ্ট্রগুলি ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ব্যবহারের উপর অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ইলেকট্রিক ভেহিকেলের দ্রুত প্রসারে এই শিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবহারকারীগনকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের কর সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছে। যেমন: পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সিবিউ অবস্থায় ইলেকট্রিক ভেহিকেল আমদানির উপর বিনিয়োগের শর্তসাপেক্ষে আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ নির্ধারণ, আয়কর আইনের ৮০ ইইবি ধারার আওতায় প্রথমবার ইলেকট্রিক ভেহিকেল ক্রয়ের জন্য গৃহীত ঋণের মোট ১.৫ লাখ রুপি পর্যন্ত কর সুবিধা এবং বিনামূল্যে ইনস্যুরেন্স ও রেজিস্ট্রেশন, সব ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ওপর জিএসটি সুবিধা প্রদান, মূল্যের ওপর ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দিয়েছে। অনুরূপভাবে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন ইলেকট্রিক ভেহিকেল প্রসারে কর ছাড়সহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়েছে। যেমন: রেজিস্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্স, পার্কিং ফি, টোল, আমদানি কর মওকুফ, নিম্ন হারে লোন সুবিধাসহ মূল্যের ওপর নগদ সুবিধা দিয়েছে।

ইলেকট্রিক ভেহিকেল একটি প্রযুক্তি নির্ভরশিল্প। এই শিল্প উন্নয়নে অতি দ্রুত কার্যকর দিকনির্দেশনা দেওয়া হলে আগামী দিনে বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্পের হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। অটোমোবাইলের মত প্রযুক্তিনির্ভর ভারি শিল্প গড়ে তুলতে সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব নয়।  

অনুষ্ঠানে দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দেশে আজ মোটরসাইকেল শিল্পে দেশি-বিদেশি প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং দুই লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দেশে আজ গাড়ি সংযোজন শিল্প গড়ে উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি সহায়তায় বেশ কিছু ব্র্যান্ড এদেশে গাড়ি উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করেছে। ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্পের উন্নয়নে সরকারের নীতি সহায়তা প্রদান করা হলে আমদানি নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পে অগ্রসর হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।