ঢাকা, সোমবার, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

আইইউবির ২৫তম সমাবর্তনে সনদ পেল ১৯৬৯ শিক্ষার্থী

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫
আইইউবির ২৫তম সমাবর্তনে সনদ পেল ১৯৬৯ শিক্ষার্থী

ঢাকা: স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ১ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর ২৫তম সমাবর্তন।  

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত আইইউবি ক্যাম্পাসে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

 

সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ৫৫০ জন স্নাতক ও ৪১৯ জন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের। কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনকারী দুই স্নাতক শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়।  

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সনদ দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান।

অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম বলেন, আজকে যারা স্নাতক হলে, ভবিষ্যতে যা কিছুই করো না কেন, কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে তোমাদের দুটি অস্ত্র থাকতে হবে। বন্দুক-কামান নয়, অন্য অস্ত্র, যা দিয়ে তুমি গোটা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। তার মধ্যে একটি হলো ইংরেজি বলা ও লেখার দক্ষতা। আরেকটি হলো কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা। এই দুরকম দক্ষতা থাকলে তোমরা যেকোনো কর্মক্ষেত্রেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন,  যদি কোনো দায়িত্ব নাও, সেটা সঠিকভাবে পালন করাই তোমার কর্তব্য। এমন কোনো পেশা বেছে নিও না, যা তোমার পছন্দ নয়। যেটা ভালো লাগে, সেটাই করো – কারণ জীবনে প্রকৃত তৃপ্তি তখনই আসবে, যখন তুমি তোমার কাজ উপভোগ করবে। এটাই সময় – যদি আংশিকভাবে কোনো পেশার দিকে এগিয়ে গিয়েও থাকো, তবু মনে রেখো, কিছুই চূড়ান্ত নয়। এখনো তোমার সামনে সুযোগ আছে। চিন্তা করো, কোন পথটি তোমার জন্য সবচেয়ে ভালো। ধরো, তুমি একজন প্রকৌশলী, কিন্তু অনেক প্রকৌশলীই সমাজকর্ম, অর্থনীতি কিংবা অন্য ক্ষেত্রেও কাজ করেন। মানুষ বদলায়, কিন্তু সেই পরিবর্তনটা হতে হবে অর্থবহ ও আন্তরিক।

অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান বলেন, উন্নতির মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে উদ্ভাবনের মাঝে। তাই আমাদের এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে সৃজনশীলতা ও নতুন ধারণা বিকশিত হতে পারে। আমি আশাবাদী হই যখন দেখি আইইউবির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন প্রযুক্তির প্রসার ঘটাচ্ছে এবং গবেষণাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, যার প্রভাব সরাসরি সমাজে পড়ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডেটা সায়েন্স থেকে স্বাস্থ্যসেবার উদ্ভাবন– বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই ক্ষেত্রগুলোর যথাযথ প্রয়োগ ও নতুন সমাধান তৈরির সক্ষমতার ওপর, যা স্থানীয় ও বৈশ্বিক উভয় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।  

এডুকেশন, সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট (ইএসটিসিডিটি)-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকারিয়া খান বলেন, আমাদের বাঘের মতো বাঁচতে শিখতে হবে। কিন্তু সেটা কীভাবে? সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে, সত্য কথা বলতে হবে। কোথাও অন্যায় দেখলে দৃঢ়তার সঙ্গে ‘না’ বলতে জানতে হবে। নাহলে কখনোই প্রকৃত শান্তি মিলবে না।

আইইউবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান দিদার এ হোসেইন বলেন, কেউই একা চলতে পারে না। আমরা আমাদের দেশ, আমাদের জাতির অংশ। মানুষ অন্য প্রাণীর চেয়ে আলাদা কারণ আমরা একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে পারি, একে অপরকে অনুভব করতে পারি। যদি আমাদের মাঝে সহমর্মিতা না থাকে, তাহলে দেশের এগিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদেরই দায়িত্ব। এটি কোনো বড় কিছু নয়, শুধু অভ্যাসের অংশ করে নিতে হবে। এভাবেই আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের তরুণ প্রজন্মই এই পথচলায় আমাদের অগ্রদূত– আইইউবির জন্য, দেশের জন্য।  

উপাচার্য অধ্যাপক ম. তামিম স্নাতকদের তিনটি পরামর্শ দেন, জিজ্ঞাসু হও। শেখার কোনো শেষ নেই, এটি আজীবন চলতে থাকে। তোমরা যত এগিয়ে যাবে, ততই নতুন কিছু জানার প্রয়োজন হবে। কৌতূহল ছাড়া শেখা সম্ভব নয়। এক মুহূর্তের জন্য পেছন ফিরে দেখো। আইইউবিতে যে শিক্ষা পেয়েছো – অ্যাকাডেমিক হোক বা ব্যক্তিগত – সেটাই তোমার ভবিষ্যতের পাথেয়। আজ থেকে তোমার নতুন যাত্রা শুরু হচ্ছে, সেখানে তোমার দায়িত্ব অনেক। দায়িত্বের শুরু হবে তোমার নিজের থেকে, তারপর তোমার পরিবার, তোমার বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ এবং দেশ– এসব কিছুর প্রতি তোমার দায়িত্ব আছে।

অনুষ্ঠানে ছয় অনুষদের ডিনরা বক্তব্য দেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইইউবির কোষাধ্যক্ষ খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার। সমাবর্তন অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন আইইউবির রেজিস্ট্রার ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম।  

ভ্যালেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত হন চ্যান্সেলর্স গোল্ড মেডেলজয়ী ফার্মেসি বিভাগের সামিয়া আক্তার। ইংলিশ অ্যান্ড মডার্ন ল্যাংগুয়েজেস বিভাগের রাবিয়াহ বিনতে হোসাইনও চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল পান। অলরাউন্ডার অ্যাওয়ার্ড ও স্বর্ণপদক লাভ করেন মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন ও গ্লোবাল স্ট্যাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স বিভাগের নাজিফা রাইদাহ।  

স্নাতক পর্যায়ে অসাধারণ ফলাফলের জন্য নিশাত রামিসা ইসলাম, আতিকা হুমাইরা, আশরাফি আঞ্জুমান স্নেহা, উম্মুল ওয়ারা, শেখ মুস্তারীন মুস্কান মর্তুজা, নায়লা নুরেন স্নিগ্ধা এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অসাধারণ ফলাফলের জন্য তাসমিন তাবাসসুম নোলক, তাহসিন তাবাসসুম অনন্ত, আবদুল্লাহ আল মামুন, তাহেরা জোবাইদা মালিহা এবং মাইশা ইসলামকে পুরস্কৃত করা হয়।  

অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে সফল শিক্ষার্থীদেরও সম্মাননা দেওয়া হয়। সমাজসেবায় পুরস্কার লাভ করেন উম্মুল ওয়ারা, নাফিসা তাবাসসুম ও নাজরানা খান। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মাননা পান নাজরানা খান ও ফাহমিদা বিনতে আজাদ। স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটিস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন শারমিন ইসলাম শ্রদ্ধা, তাশফিয়া তাসনিম তুবা ও জান্নাতুল মাওয়া মৌরী।  

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইইউবির সম্মানিত ট্রাস্টি, অভিভাবক এবং আইইউবির শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। মূল অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক পর্বে জনপ্রিয় শিল্পী মিনার রহমান এবং ব্যান্ডদল চিরকুটের পাশাপাশি সঙ্গীত পরিবেশন করেন আইইউবির শিক্ষার্থীরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৫
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।