মুন্সিগঞ্জের সেলিনা বেগম প্রমাণ করেছেন যে উদ্যোক্তা হতে মনোবলই যথেষ্ঠ। ২০০০ সালে ইসলামী ব্যাংকের পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের (আরডিএস) সদস্য হওয়ার পর মাত্র সাত হাজার টাকা বিনিয়োগে একটি পুরোনো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে তার যাত্রা শুরু।
স্বল্প খরচে নিজেরাই গাড়িগুলোর মেরামত করেন এবং এলাকার চালকদের মাধ্যমে গাড়ি চালিয়ে আয় করেন। বর্তমানে সেলিনা বেগমের আরডিএস বিনিয়োগ সীমা এক লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং তিনি সাপ্তাহিক চার হাজার পাঁচশ টাকা কিস্তি, ২শ টাকা সঞ্চয় ও ৫শ টাকা ডিপিএস জমা দিয়ে যাচ্ছেন। তার সঞ্চয়ের পরিমাণ এখন বেশ ভালো। তার চার সন্তানের মধ্যে মেয়ে সৌদি আরবে পোশাকশ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন এবং ছোট ছেলে ইলেকট্রিক মেকানিক হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
এ ছাড়া সেলিনা বেগম ইজিবাইকের আয় থেকে একটি ছোট রেস্টুরেন্টও চালু করেছেন। সেলিনা বেগম বলেন, ইসলামী ব্যাংক বিশ্বসেরা হোক এই দোয়া করি, আর আমরা তার সঙ্গে এগিয়ে যাই।
তিনি আরডিএসের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আত্মনির্ভরতার অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে যাচ্ছেন চারিদিকে। সারা দেশে প্রায় ৩৪ হাজার ৯শ গ্রামে নীরবে এমন উদ্যেক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে যুগান্তকারী আর্থ-সামাজিক রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। এর সম্প্রসারণ ৬৮ হাজার গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের সদস্য ১৭ লাখ ৪৬ হাজার যার ৯২ শতাংশই নারী।
ইসলামী ব্যাংকের আরডিএস দেশের গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, পল্লী উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং জনকল্যাণের এক বহুমুখী ও বহুমাত্রিক কার্যক্রম। জামানতবিহীন এই ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কার্যক্রমের সুবিধা কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ নারী সমাজ তাদের সুপ্ত উদ্যোগী প্রতিভার বিকাশ সাধন করে গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক জীবনে এক নীরব বিপ্লব এনেছে।
ইসলামী ব্যাংকের এ প্রকল্প ১৯৯৫ সালে শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে, যে বিনিয়োগের ৯৭ দশমিক ৩৮ শতাংশই ফেরত এসেছে। বর্তমানে সারা দেশে এ প্রকল্পের আওতায় ৮ লাখ ৪৬ হাজার উদ্যোক্তার মধ্যে ছয় হাজার ৬শ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।
বিনিয়োগ গ্রহীতাদের সফলতার পেছনে মাঠ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। তারা সপ্তাহের কিস্তি সভায় অংশ নেন এবং উঠান বৈঠকে বসে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের খোঁজখবর নেন, প্রয়োজনীয় উপদেশ দেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয় পল্লী জনগণের জন্য ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন সেবা ও কল্যাণমূখী কার্যক্রম। যার মধ্যে রয়েছে ৩৪২টি স্কুল এবং ৩৩০টি মক্তব। এসব কল্যাণকর কার্যক্রমের উপকারভোগী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দুই লাখ ২৯ হাজার জন। এসব প্রাতিষ্ঠানিক সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছুতে ইসলামী ব্যাংক এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে ৩৩ কোটির অধিক টাকা। যা দেশের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় করা অর্থসহায়তার শীর্ষতম।
এএটি