মসজিদুল আকসার গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ঘরে নামাজ পড়লে এক গুণ, মসজিদে ২৫ গুণ, মসজিদে নববী ও আকসায় ৫০ হাজার গুণ, মসজিদে হারামে এক লাখ গুণ সাওয়াব। ’ (ইবনে মাজাহ)
আল-আকসায় ইতিকাফ করা মুসলমানদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আল-আকসায় ঢুকতে গেলেই প্রথম গেটেই রয়েছে একটি সেনা চৌকি। চার পাঁচ জন ইসরায়েলি সেনা সেখানে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে।
আল-আকসায় ঢোকার কয়েকটি গলি। প্রতিটি গলিতে দুটি করে দরজা আছে। মোট তিন স্তরের নিরাপত্তা। সীমানা প্রাচীরের বাইরের স্তরের নিরাপত্তায় রয়েছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। সীমানা প্রাচীরের ভেতরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে মুসলিম সৈনিকদের হাতে। যে কেউ ঢুকতে গেলেই তার ওপর জিজ্ঞাসাবাদের ঝড় বয়ে যায়। মুসলিম প্রমাণের জন্যে কোরআন ও হাদিসের জ্ঞানের ভাণ্ডার ঢেলে দিতে হয়। এত এত ঝক্কিঝামেলা সহ্য করে কেউ আল-আকসায় এসে ইবাদত করার আগ্রহ রাখতে পারে না। তবে রমজানের তারাবি, সাহরি, ইফতার ও ইতিকাফের জন্য আল-আকসা উম্মুক্ত বলা যায়। তাই ফিলিস্তিনিরাসহ সারাবিশ্বের বহু মুসলমান আল-আকসায় যান ইতিকাফ করতে।
এখানে ইতিকাফ করেন নানা পেশার লোক। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক ও বিবিত্র পেশার লোক। সাড়ে তিন হাজার বর্গমিটারের আল আকসার আঙ্গিনায় এখানে সেখানে রয়েছে ছোট ছোট মিম্বর ঘেরা নামাজের স্থান। অনেক প্রাচীন এসব ইবাদতখানায় রয়েছে ইবাদতের সুব্যবস্থা। রয়েছে তাবু টানানো ছোট ছোট খুপরি। আরও রয়েছে মাটির নিচে পাথর বেষ্টিত গুহা। এসব গুহায় নামার জন্য রয়েছে কাঠের বেষ্টনীর ভেতর দিয়ে নিচে নামার সিঁড়ি। সেখানে গিয়ে মুসলমানরা ইবাদতে মশগুল হন। পুরুষদের জন্যে আলাদা জায়গা। নারীদের জন্য আলাদা জায়গা।
ইতিকাফকারীরা যেখানে ইচ্ছা সেখানেই সময় কাটাতে পারেন। ইচ্ছা করলে জোহর আদায় করতে পারেন ‘আস সাখরা’ তাবুতে, আসর ‘আকসায়ে কদিমে’, মাগরিব ‘মুসল্লায়ে কুবলা’ ও ইশা ‘যাইতুনা’র নিচে। বাইতুল মুকাদ্দাসে ইতিকাফের অনুভূতি অন্য মসজিদ থেকে কিছুটা ভিন্ন।
সাধারণ মসজিদে ইতিকাফ করলে অনেক সময় ইতিকাফকারীরা বিরক্ত বোধ করেন। অন্যদিকে এখানে মসজিদ বড় হওয়ার কারণে ইচ্ছা করলেই যে কোনো জায়গায় একাকিত্ব অর্জন করা যায়।
আল-আকসায় রয়েছে ‘আল মাকতাবাতুল খাতানিয়্যাহ’ নামে এক বিশাল পাঠাগার। যা আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থিত। এই অংশটির নাম ‘আল আকসা আল কাদীম’। দিনের সময়গুলো সেখানে কাটানো ইতিকাফকারীদের জন্য খুবই উপযোগী। সেখানে শীতের প্রকোপ নেই, নেই গরমের তীব্রতা। ওপরের মতো ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটাও নেই। এই পাঠাগারে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক বই-পুস্তক। সারাদিন সেখানে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা রয়েছে। যারা পাঠাগারের কিতাবগুলো মোবাইলে পড়তে চান তাদের জন্য তা মোবাইলে ঢুকিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে।
ফিলিস্তিনের অন্যান্য মসজিদের চেয়ে আল-আকসায় ইতিকাফকারীদের ভিড় থাকে বেশি। ফিলিস্তিনিদের পারস্পরিক ভালোবাসা ও সুখ-দুখ বলার একান্ত সুযোগ হচ্ছে এই ইতিকাফের সময়। অন্যান্য সময় আল আকসায় প্রবেশের ব্যাপারে থাকে নানা বিধি-নিষেধ ও কড়া নজরদারি।
এখানে অনেক দেশের মানুষ ইতিকাফ করেন। তবে বিশেষভাবে দক্ষিণ আফ্রিকান, তুর্কি, ইউরোপিয়ান মুসলমানদের বেশি দেখা মেলে। আর তাই এখানে ইতিকাফে বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের পরাস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ ও ভালোবাসার আদান-প্রদানের অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়।
রমজানে শেষ জুমাকে ‘আল-জুমাতুল ইয়াতিমা’ বলা হয়। এই জুমায় ব্যাপকহারে ফিলিস্তিনিরা একত্রিত হন। তবে এখানে ইতিকাফে কিছু সমস্যাও রয়েছে। টয়লেটে দীর্ঘ লাইন থাকে। অনেক সময় ইফতারের সময় ইফতার সংকট সৃষ্টি হয়। তখন আবার পরবর্তী ইফতার প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
‘আল মাতহারা’ গেটের সামনে একটি ছোট দোকান রয়েছে। জরুরি মুহূর্তে এই দোকানের খাবার দিয়েও ইতিকাফকারীরা উপস্থিত প্রয়োজন মিটান। ছোট্ট এই দোকানটিতে গরম চা ও বিস্কুট পাওয়া যায়। দোকানটি ফজর পযন্ত খোলা থাকে। আল-আকসায় রয়েচে দুইশ শিক্ষক। যারা ইতিকাফকারীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠান থাকে। সবমিলে এক আড়ম্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত হয় এখানকার ইতিকাফকারীদের।
-হাফ পোস্ট অবলম্বনে
রমজানবিষয়ক যেকোনো লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘন্টা, মে ৩০, ২০১৯
এমএমইউ