ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আদালত

‘ষোড়শ সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৭ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
‘ষোড়শ সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ’ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ

ঢাকা: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারির ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে মনে করেন  সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরির (আদালতকে আইনি সহায়তাকারী) মতামত দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সেনা নিয়ন্ত্রিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিচারকদের নিজস্ব প্রয়োজনে নয়।

জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি অপরিহার্য অংশ অর্থাৎ বেসিক স্ট্রাকচার বলে একটি রায়ও দিয়েছেন আদালত। ভারতে এ ধরনের আরো অনেক রায় হয়েছে, যেখানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারিকে বেসিক স্ট্রাকচার, সংবিধানের বেসিক পিলার বলা হয়েছে।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এ আপিল শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে শুনানির ৯ম দিনে সোমবার (২৯ মে) সকালে অ্যামিকাস কিউরি এম আই ফারুকী অসমাপ্ত মতামত দেওয়া শেষ করেন। তারপর মতামত দেন ড. কামাল হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ ভূইঁয়া ও এ এফ হাসান আরিফ।

এরপর মতামত দেওয়া শুরু করেছেন আজমালুল হোসেন কিউসি। মঙ্গলবার (৩০ মে) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ। এদিন অসম‍াপ্ত মত আদালতে উপস্থাপন করবেন তিনি।

এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘শুনানিতে আমি নতুন একটি বিষয় বলেছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শুধু বেসিক স্ট্রাকচার নয়, এটি মৌলিক অধিকারও বটে। জনগণের মৌলিক অধিকার যেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে পারে। কেউ যদি আদালতের সামনে উপস্থিত হন, আদালত যেন তখন স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারেন। সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের চাপে পড়ে যেন জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ণ না হয়, সেভাবে যেন বিচার করতে পারেন’।

‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারির ওপর হস্তক্ষেপ। কারণ, এর মাধ্যমে জুডিশিয়ারিকে পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহিতা দিতে হয়। এবং পার্লামেন্ট ও সরকার এক’।

‘বিচারক অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পঞ্চম সংশোধনী মামলা ও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতেও বহাল রাখা হয়। যেটি দুইবার আদালতের মাধ্যমে এবং একটি সংশোধনীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সেটিকে সংশোধন করার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই’।

অ্যামিকাস কিউরি আবদুল ওয়াদুদ ভূইঁয়া তার বক্তব্যে বিচারক অপসারণের বিষয়টি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর রাখা উচিত বলে মত দেন। যদি সংসদের হাতে দেওয়া হয়, তাহলে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে আজমালুল হোসেন কিউসি বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকার পক্ষে মতামত উপস্থাপন করছেন।

এর আগে গত কয়েকদিনে অ্যামিকাস কিউরির মতামত দিয়েছেন জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী টিএইচ খানের পক্ষে তার ছেলে আইনজীবী আফজাল এইচ খান, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।

গত ০৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়া ১২ জন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে মতামত দেওয়া বাকি রয়েছে রফিক-উল হক, এ জে মোহাম্মদ আলী, ফিদা এম কামাল ও শফিক আহমেদের।

গত ০৮ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত আপিল শুনানির ৬ কার্যদিবসে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন আপিল আবেদনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা এবং রিট আবেদনের পক্ষে মনজিল মোরসেদ। শুরুতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় পড়ে শোনান মুরাদ রেজা।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।

সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ০৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ০৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

এ রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ০৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।

এর মধ্যে গত বছরের ২৫ এপ্রিল অসদাচারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

গত ০৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।

মার্শাল প্রক্লামেশনে করা পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।