সোনালি ট্রফি তখনও পর্দায় ঢেকে রাখা। রোহিত শর্মা একটু আগেই অনুশীলন শেষে সামনে দিয়ে হেঁটে গেছেন।
মুহূর্তটুকু ফ্রেমবন্দি করতে তোড়জোরও দেখা গেল বেশ। ফুটবল বিশ্বকাপ আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকা দেশেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াই মানেই যে ভিন্ন কিছু, যেন প্রমাণ মিললো তার। মিলেছে অবশ্য টিকিট বিক্রির কাউন্টারেও। তিনটা বাজতেই শেষ হয়ে গেছে সব টিকিট।
রোহিতের অপেক্ষার খানিক বাদে এলেন লিটন। ছবি তুললেন, হাত মেলালেন দুই অধিনায়ক। এর ঘণ্টাখানেক আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনেও। এই সিরিজ তার জন্য আলাদা, জানিয়েছেন তেমন। অবশ্য না বললেও জানাই ছিল এমন হওয়ার কথা।
নিউজিল্যান্ডে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের চোটে এক ম্যাচে সামলেছিলেন নেতৃত্বের ভার। কিন্তু লিটনের ভাষায় সেটা ছিল ‘হুট করে। ’ এবার তিনি সময় পাচ্ছেন। তামিম ইকবালের ইনজুরি দিয়েছে ভারতের বিপক্ষে পুরো সিরিজে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব।
সেটি পেয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে রোববার এসেছিলেন লিটন। অধিনায়কত্ব পাওয়ার স্বাদ আসলে কেমন? তিনি বলছিলেন, ‘সব খেলোয়াড়েরই বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন থাকে। তার থেকেও বড় স্বপ্ন দলকে নেতৃত্ব দেওয়া। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কাছেই অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দিন সবচেয়ে বড়। ’
দিনাজপুর থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বুনার শুরু লিটনের। মাঝে অনেক চড়াই-উতরাই পার করে এসেছেন। সমালোচনা তো বটেই, তাকে নিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘রান করলে মূল্য ছাড়ের’ অফারও। এরপর সময় বদলেছে। লিটন এখন দলের অধিনায়ক।
পুরো যাত্রা কেমন ছিল? লিটন বলছেন, ‘উত্থান-পতন ছিল। কাছের মানুষ, দূরের মানুষ; সবাই ছিল। ভালো! আর নিজেকে নিয়ে নিজে কীভাবে গর্ব করি? পরিবার বা অন্যরা বলতে পারবে আসলে। ’
লিটনের কাছে অধিনায়কত্ব ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর। যদিও শুরু খুব একটা সহজ হওয়ার কথা নয়। পরিসংখ্যান অন্তত ওই বার্তাই দিচ্ছে। এখন অবধি ভারতের বিপক্ষে ৩৬ ওয়ানডে খেলে হারতে হয়েছে ৩০টিতেই। পাঁচ ম্যাচে জয় আর বাকি একটি হয়েছে পরিত্যক্ত।
এর ওপর দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটার তামিম ইকবাল পুরো সিরিজেই নেই। প্রথম ওয়ানডেতে থাকছেন না পেসার তাসকিন আহমেদও। তাদের নিয়ে অবশ্য খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই লিটনের। তিনি তাকিয়ে ভারতের বিপক্ষে জমে উঠা দ্বৈরথের রোমাঞ্চের দিকে।
‘আমরা ভারতের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে অনেক রোমাঞ্চিত। ভারত ভালো দল। তাদের খ্যাতি-ফর্ম সবই আছে। আমরা ইদানীং তাদের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলি। তারা এখন আর আমাদের আন্ডারডগ ভাবে না। এটাই বড় ব্যাপার। ’
কাছাকাছি প্রশ্ন ছিল রোহিত শর্মার কাছেও। শক্তি-ফর্ম-স্কিল অথবা সবকিছুতেই হয়তো এগিয়েই থাকবে তার দল ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ মানে জয় ‘সহজ নয়’ এতদিনে বুঝে ফেলেছেন রোহিত।
দুই দলের লড়াই নিয়ে ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলছিলেন, ‘গত কয়েক বছরে এই লড়াই ভালোই জমে উঠেছে। গত ৭-৮ বছরে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে ভিন্ন দলে। তারা খুবই চ্যালেঞ্জিং দল, তাদের বিপক্ষে আমরা সহজে জিতিনি। তাদের বিপক্ষে জিততে হলে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। আর যতগুলো ম্যাচই তাদের বিপক্ষে খেলেছি সবগুলোই ক্লোজ হয়েছে। ’
দুই দলের দর্শকদের নিয়েও ভালোই ধারণা আছে রোহিতের। পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তেই সমর্থন পান; এতটুকু মনে করাতেই রোহিত মনে করিয়ে দেন ‘এখানে কিন্তু নেই’। এরপর তিনি জানান চাপে না থাকার কথাও।
তা তিনি থাকবেন না জানা কথাই। কিন্তু লিটন দাস ডুবে থাকবেন ‘রোমাঞ্চে’। একই সঙ্গে তিনি নেতৃত্বের ভার বয়ে ব্যাটে আলো ছড়াতে পারেন কি না; দেখার অপেক্ষা এখন। তেমন হলে আরও একবার জমেই উঠার কথা ভারত-বাংলাদেশ দ্বৈরথের। দর্শকরা যে তাই চান, টিকিট বিক্রির হালচালে টের পাওয়া যাচ্ছে তা!
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২২
এমএইচবি/আরইউ