‘পদ ছাড়তে পারি, কিন্তু কোয়াব ছাড়তে পারবো না’, নাঈমুর রহমান দুর্জয় বললেন এমন। সংগঠনের প্রতি তার আবেগ, দায়বদ্ধতা ও ভালোবাসাই হয়তো ফুটে উঠলো তাতে।
সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পালও অনুষ্ঠানজুড়েই ছিলেন বেশ সরব। জেলার এক কাউন্সিলরের প্রশ্ন লম্বা হয়ে যাচ্ছিল, তিনি তখন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললেন, ‘আমার প্রিয়, আমার অতি প্রিয়...প্রশ্নটা ছোট করতে হবে। ’ এতে হয়তো বোঝা গেল, তিনি ক্রিকেটারদের কাছাকাছিই থাকেন সবসময়। তাকে চাইলে সহজেই পাওয়া যায়।
কিন্তু দুটি দৃশ্যের অনেক পরে, তানভীর আহমেদ টিটু হাজির হলেন যখন মাইক্রোফোনের সামনে- তিনি ফের সভাপতি হিসেবে নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেবব্রত পালের নাম প্রস্তাব করলেন; তখন কিছু প্রশ্নও সামনে চলে এলো। সবচেয়ে বড় হয়তো এটি— ১১ বছর পরও কেন আবারও দেবব্রত ও দুর্জয়কেই নেতৃত্ব নিতে হলো?
১৭ পদের কোনোটির ব্যাপারেই সামনে উপস্থিত শত শত ক্রিকেটারের একজনও আগ্রহী হলেন না, এটাই কি কোয়াবের এত বছরের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা? এই প্রশ্ন কিছুটা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে গিয়েছিল নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের কাছেও। বছর চারেক আগে ক্রিকেটারদের আন্দোলনে রীতিমতো এক বিপ্লবই দেখেছিল দেশের ক্রিকেট। প্রথম দাবিটিই ছিল কোয়াবের নেতৃত্বে বদল নিয়ে। এখন কেন তারা আর আগ্রহী নন?
দুর্জয়ের ভাবনা এমন, ‘ওরা হয়তো চিন্তা করেছে আমরা এখনো খেলছি, আমরা আরও খেলবো। আমি ব্যক্তিগতভাবে আহ্বান করেছি আসো দায়িত্ব নাও। আমরা তো অনেকদিন করলাম। আসলে এটাতো জোর করার বিষয় না। আগ্রহের বিষয়। ওরা হয়তো খেলাধুলায় আরও সময় দিতে চায়। বর্তমান জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা, এখনো জাতীয় দলকে সেবা দিচ্ছে। ’
‘আমার মনে হয় জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটারের চেয়ে আরও ভালো হতো যারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছে বা সদ্য জাতীয় দল থেকে অবসরে গেছে, বর্তমান জাতীয় দলে নেই তারাও আসতে পারতো। ’
জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী ছিলেন না, সেটি স্পষ্ট। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই ১০ বছর পর হওয়া বার্ষিক সাধারণ সভাতে আসার দায়টুকু অনুভব করেননি। কয়েকজন তারকা এখনও দেশের বাইরে আছেন, অনেকে দেশে থেকেও আসেননি। তাই কোয়াবের এজিএমে আলো থাকলেও অভাব ছিল তারকার।
এই অনুপুস্থিতির সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও ছিল অনুষ্ঠানেই। এজিএমের পর্ব শেষে ক্রিকেটে অবদানের জন্য অনেকগুলো পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে পঞ্চপাণ্ডব খ্যাত ক্রিকেটার- সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মাশরাফি বিন মর্তুজার জন্যও ছিল সম্মাননা। কিন্তু দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নামগুলোর একজনও উপস্থিত ছিলেন না অনুষ্ঠানে।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের কাউকেই পুরস্কার নেওয়ার সময় পাওয়া যায়নি। তাদের হয়ে পুরস্কার শেষ অবধি নিতে হয়েছে খালেদ মাহমুদ সুজনকে। এমন হয়েছে অনেকের ক্ষেত্রেই। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গা হয়েছিল মঞ্চেই, এর বাইরে বর্তমান সময়ের তারকাদের কেউ ছিলেনই না সেভাবে।
কেন ক্রিকেটারদের অনুপুস্থিতি তার একটি ব্যাখ্যাও দেন দুর্জয়। যদিও তাতে কতটুকু সন্তুষ্ট হওয়া যায়, এই প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটারদের সংগঠনগুলো দেন-দরবার করে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের সঙ্গে। কিন্তু বাংলাদেশে বোর্ডের পরিচালকরাই কোয়াবের দায়িত্বে, এ নিয়ে ক্রিকেটারদের আপত্তিও অনেকদিনের।
যদিও এখন আর এই ব্যাপারে স্বার্থের সংঘাত দেখেন না দুর্জয়। বিসিবির স্বীকৃতির কারণেই সেটি নেই বলে বিশ্বাস তার। কিন্তু তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়, দুর্জয় ক্রিকেটারদের হয়ে যখন কথা বলবেন, তখন কি তিনি তার বোর্ড মানে নিজের বিরুদ্ধেও বলবেন না? তবে এই স্বার্থের সংঘাতে তার দায় এখন সামান্যই।
আড়ালে-আবডালে কোয়াব নিয়ে সরব থাকলেও, বড় বড় তারকাদের বেশির ভাগই কাজের জায়গায় উপস্থিতও হননি। অনেকে তাই মনে করেন, কোয়াব নিয়ে কথা বলার ‘নৈতিক অবস্থান’ এখন আর নেই তাদের। পরের এজিএমের জন্য আরও ১৪ বছর অপেক্ষা করতে হলেও কিছুই করার থাকবে না কারও।
এই এজিএমে নারী ক্রিকেটারদের কোয়াবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, শিগগিরই স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে বের করার ব্যাপারেও দেওয়া হয়েছে প্রতিশ্রুতি। অতীতে ক্রিকেটারদের অল্প অল্প পাশে দাঁড়ানোর ফিরিস্তি শোনানো হয়েছে বড় করে। কাউন্সিলররা খুশি থেকেছেন হাত তুলে সমর্থন জানিয়ে।
তবে যাওয়ার আগে তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। কোয়াবের কাউন্সিলররা যেন নিয়মিত হাত তুলতে পারেন, এটিই এখন চাওয়া তাদের। তাহলে হয়তো এগারো বছর পর হাজার খানেক ক্রিকেটারের একজনকেও নেতৃত্বে আগ্রহী দেখা না গেলেও ছোটখাটো ওসব ক্রিকেটার বা কাউন্সিলরদের মনে পড়বে। সেটিই বা কম কী!
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
এমএইচবি/এএইচএস