ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

মুক্তমত/

মেয়েদের মন বোঝা আজও কঠিন, কিন্তু ফিজের বল বোঝা...

তাসনিম হাসান, সাংবাদিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৩
মেয়েদের মন বোঝা আজও কঠিন, কিন্তু ফিজের বল বোঝা...

দুজনের দুই হাত থেকে এমন সব অপরিচিত ডেলিভারি বের হতো ক্যারিয়ারের শুরুতেই, যে তাদের নামের আগে সেঁটে গিয়েছিল-'বিস্ময় বোলার!'

তবে শুরুর রশিদের চেয়ে মোস্তাফিজেই বেশি মোহিত ছিল ক্রিকেট-বিশ্ব। অভিষেকেই ধোনির ভারতকে গুঁড়িয়ে দেয়া সেই পাঁচ উইকেট, আইপিএলে কাড়াকাড়ি- কি সহসায় না এসেছিল সব খ্যাতি-যশ।

আশিস নেহেরার মতো ভারতবিখ্যাত বোলারের ফিজের কাছে শেখার জন্য ক্লান্তিহীন অপেক্ষা! সবমিলিয়ে লিকলিকে শরীরের সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণের বাঁহাতটা যেন হয়ে পড়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দামি! 

আমরাও ফিজে এতটাই রোমাঞ্চিত ছিলাম, বন্ধুদের মধ্যে বলাবলি করতাম অতীতের ধুলো জমা পাতা থেকে ওয়াসিম আকরাম কি ফিরে এলেন মোস্তাফিজের বাঁহাতে ভর করে?

ফিজের বাইরে থেকে মোচড় দিয়ে ঘা ঘেঁষে যাওয়া কাটার, গতি নিয়ে ছুঁটে এসে হঠাৎ শক্তি হারানো দুর্ভেদ্য স্লোয়ার, আর নিখুঁত ইয়র্কারের সামনে ব্যাটাররা এতটাই নড়বড়ে ছিলেন, তখন তো বলা হতো- মেয়েদের মন এবং মোস্তাফিজের বল দুটোই বোঝা অসম্ভব!

বিপরীতে রশিদ খানকে নিয়ে তেমন একটা উচ্চবাচ্য হয়নি। না হওয়ারই কথা। যেখানে একদিনের ম্যাচে প্রথম পাঁচ উইকেটের দেখা পেতে রশিদকে ২২তম ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে, সেখানে মোস্তাফিজকে পাঁচ উইকেট শিকারের নেশাটা এতটাই পেয়ে বসেছিল, মাত্র ৯ ম্যাচেই তিনবার পাঁচ উইকেট করে নিজের থলিতে ভরেছেন।  

অথচ আজ সেই রশিদ কোথায়, আর ফিজ কোথায়! দুজনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা একই বছরে (২০১৫), তিন মাস আগে-পরে। টেস্ট বাদ দিলে সাদা বলের দুই সংস্করণে তাঁদের ম্যাচের সংখ্যাও প্রায় সমান।

দুজনেই ওয়ানডে খেলেছে সমান ৮৯টি করে। টি টোয়েন্টিতে রশিদের ম্যাচ সংখ্যা ৮০, ফিজের ৮৩। অথচ উইকেট শিকারে রশিদ যেন দ্রুতই এভারেস্ট চূড়ার পথে। ফিজ সেখানে কাঞ্চনজঙ্ঘাও হবেন না! 

একটা পরিসংখ্যান সামনে আনলে বোঝা যাবে দুজনের পার্থক্যটা। রশিদের এর মধ্যেই দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ২৯টি দলে খেলা হয়ে গেছে। মোস্তাফিজ তার অর্ধেকও (১৪) ছুঁতে পারেননি! 

একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে ওঠে এসে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে লড়তে লড়তে বিশ্বসেরা বোলার হয়েছেন রশিদ। এরপর বোলিং অলরাউন্ডার, পরে ব্যাটিংয়ে অভাবনীয় উন্নতি ঘটিয়ে 'প্রকৃত' অলরাউন্ডার! ওয়ানডেতে দ্রুততম একশ উইকেটের রেকর্ড! টি-টোয়েন্টিতেও একই রেকর্ড। বিশ্বজুড়ে হওয়া প্রায় সবগুলো টি-টোয়েন্টি লিগে চাহিদার শীর্ষে থাকা নাম।

আমাদের ফিজ যেখানে একটা আইপিএল খেলার পরেই সহজপাঠ্য, সেখানে রশিদ যেন আরও দুর্বোধ্য! একটা দলকে জাস্ট দুরমুশ করে দিতে পারে তার ডানহাত! অথচ বেচারা কোনোদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেননি নিজের ঘরে, হাতের তালুর মতো চেনা কন্ডিশনে।

শচীনের এক অমরবাণী তাই আজও কানে ধাক্কা দিয়ে যায়। ক্রিকেট-ঈশ্বর রশিদের এমন অনমনীয় ধারাবাহিকতার গল্প বলতে গিয়ে বলেছিলেন, 'স্বপ্নকে ধাওয়া করো। কিন্তু সেটা পূরণ করার জন্য শর্টকাট খুঁজতে যেও না। '

এখানেই কি পিছিয়ে গেলেন মোস্তাফিজ? শুরুর সেই সাফল্যতে কি ধাঁধিয়ে গিয়ে আর রসদ বাড়ানো কিংবা ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দেননি আমাদের নায়ক! নয়তো অভাব্যতা নেই, নারীঘটিত কোনো কেলেঙ্কারি নেই; এত খ্যাতির পরও আজও সেই কপোতাক্ষ পাড়ের ছেলেটা তবু কেন ক্রমেই হারিয়ে যাওয়া তারা! 

ছোট্ট একটা ইনজুরি আর নিছক কম্পিউটার অ্যানালিস্টের আতশকাঁচ তো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটা প্রতিভার সব কেড়ে নিতে পারে না। রশিদকেও তো একই কাঁচের নিচে পড়তে হয়? তবুও কেন আজও তিনি অপাঠ্য? হয়তো রশিদ নিজের তপস্যায় ছেঁদ ঘটাতে দেননি। জীবনের প্রথম দিন যেমন ছিলেন, আজ তাই আরও অসাধারণ। না হয়, রশিদের জীবনের স্ক্রিপ্ট উপরে বসেই কেউ লিখছেন...

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৩
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।