ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

স্বপ্নের সীমানাটা সীমিত, কতদূর যাবে বাংলাদেশের বাস্তবতার বিশ্বকাপ?

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০২৪
স্বপ্নের সীমানাটা সীমিত, কতদূর যাবে বাংলাদেশের বাস্তবতার বিশ্বকাপ? সংগৃহীত ছবি

আকাশে মেঘের আনাগোনা, খানিক পর নেমে এলো বৃষ্টি। ক্রিকেটারদের ছবি তোলার অপেক্ষায় রাখা চেয়ারগুলোতে ছুঁয়ে গেল বৃষ্টির জল।

তা নিয়ে বাড়লো তাড়াহুড়ো। এরপর রোদ-বৃষ্টি অথবা মেঘের নিচের আঁধার-সূর্যের আলোর খেলায় হলো ফটোসেশন। দৃশ্যটা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল দেশ ছাড়ার দিনের। এরপর বহু ঘটনা ঘটে গেছে, স্বপ্নের সীমানা কেবলই ছোট হয়ে এসেছে তাতে।  

প্রতিবারের চেয়ে যা প্রায় উল্টো, অন্তত গত এক দশকের বাস্তবতা এমনটাই। প্রতিবার বড় স্বপ্নের আশায় শুরু, শেষ হয় একরাশ হতাশায়। এবার তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের স্বপ্নটুকুই ছোট। বাস্তবতার দড়ি কি টেনে যাবে খানিকটা দূর?

সম্ভাবনা আপাতত দৃষ্টিতে খুব অবিশ্বাস্য কিছু নয়। কেবল প্রথম ম্যাচটা জিতলেই...এমন একটু-আধটু বলতে শোনা যাচ্ছে কাউকে কাউকে। কিন্তু এই যে প্রথম ম্যাচ অথবা এরপর আপাতদৃষ্টিতে সহজ কাজটুকু করাই বাংলাদেশের জন্য যে ভীষণ কঠিন।  

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির পুরোটাজুড়েই হতাশা ছাড়া কিছু জোটেনি বাংলাদেশের। স্বাগতিকদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ হার। এরপর ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং; কোথাও তাড়না বা বড় কিছু করে দেখানোর সামর্থ্যের ছিটেফোঁটার দেখাও মেলেনি।  

তাই বলে কি শ্রীলঙ্কাকে হারানো সম্ভব নয় প্রথম ম্যাচে? অথবা পরে নেদারল্যান্ডস কিংবা নেপালকে? হয়তো সম্ভব উত্তরেই ভোটটা বেশি পড়বে। বিশেষত যখন স্বপ্নের রাশ বেশ ভালোভাবেই টানা। কিন্তু বাস্তবতা কখনও কখনও বড্ড রুঢ়। তাদের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই-ই জিততে না পারার নিকটবর্তী অতীত।  

এক্ষেত্রে অবশ্য সবচেয়ে বড় বাধা ব্যাটিং। তিন ওপেনারের দুজন এখনও ‘ফর্ম খুঁজে বেড়াচ্ছেন’, আরেকজন নিতান্তই নতুন। এমন ওপেনিং কম্বিনেশন নিয়ে গিয়ে বিশ্বকাপে ভালো করা বেশ কঠিনই। বিশেষত তিনজনের কোন দুজন ওপেন করবেন- সেটা যখন এখনও ঠিক করা যায়নি। এটি এ কারণে অনিশ্চিত যে- টিম ম্যানেজম্যান্টকে খুঁজে বের করতে হচ্ছে কোন দুজন বাকি একজনের চেয়ে কম খারাপ খেলছেন।  

অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্ব আশা জাগানিয়া। অল্প ক'দিনেই অধিনায়ক হিসেবে বড় কিছু সাফল্য পেয়েছেন। তার সবচেয়ে বড় গুণ- মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন অথবা চারপাশও, বাংলাদেশের ক্রিকেটে বহুদিন যে সমস্যা কেবল প্রকটই হয়েছে। কিন্তু সমস্যাও আছে- ব্যাট হাতে একদমই যে কিছু করে উঠতে পারছেন না তিনি।  

সাকিব আল হাসান বহুদিন ছিলেন অথবা এখনও হয়তো এখনও আছেন দলের বড় ভরসা হয়ে। কিন্তু তার চোখ, হেড পজিশন, ব্যাট চালানোর ধরনের বদল; রানের চেয়ে এখন এসবই বেশি আলোচনায়। তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যা একটু-আধটু রান করছেন, বরং তারা ভালোভাবেই করছেন। কিন্তু ফিনিশটা কে করবেন? জাকের আলি অথবা রিশাদ হোসেন তাতে তেমন বেশি পরীক্ষিত না।  

ক্রমাগত ব্যাটারদের খেলা হয়ে পড়া টি-টোয়েন্টিতে এমন ভঙ্গুর ব্যাটিং নিয়ে ভালো করা দুষ্কর। তবে বাংলাদেশের জন্য আশার খবর- এবারের বিশ্বকাপে তাদের আগে হওয়া ম্যাচগুলো। ওখানে বাংলাদেশ সুবিধা করতে পারে, এমন রানের খেলাই হচ্ছে।  

এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারতেন বাংলাদেশের বোলাররা। প্রতিপক্ষকে অল্পতে আটকে দলের জন্য সুবিধা করে দিতে পারেন তারা। কিন্তু ওখানে এবার যেটুকু স্বপ্ন, তাতেও নিয়তির নির্মমতার আঘাত এসে পড়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচে শেষ বলটা করার আগেই শরিফুল ইসলামের হাতে গিয়ে বল লেগেছে। পরে তাকে নিতে হয়েছে ছয় সেলাই।  

এখনও টুর্নামেন্ট থেকে তিনি ছিটকে পড়েননি ঠিকই, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে পারছেন না তিনি। এত ‘নাই’ এর ভিড়ে বাংলাদেশের জন্য ভরসা ছিল তাসকিন আহমেদ-মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে শরিফুল ইসলামের পেস বোলিং। এত ভারসম্যপূর্ণ পেস বোলিং ইউনিট, অন্য অনেক দলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারতো। এর সঙ্গে তো সাকিব-মাহেদী হাসান-তানভীরদের স্পিন ছিলই।  

কিন্তু ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ প্রবাদটা এমনভাবে সত্যি হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য, এখন ওই ব্যথাটুকু ভুলে থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে অবশ্য আরেকটা আশার জায়গাও আছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্রেফ ৭৭ রানে অলআউট হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। তাদের মনোবল এখন তলানিতে।

শ্রীলঙ্কাকে হারানো বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সহজ হওয়ার কথা এই টুর্নামেন্টে। চেনা প্রতিপক্ষ, কদিন আগেও ম্যাচ জেতার পুরোনো স্মৃতি, এর ওপর তাদের মনোবল এখন প্রায় তলানিতে। সাম্প্রতিক বিতর্কের কারণে বাংলাদেশও তেঁতে থাকে বেশ।  

সব বিবেচনায় নিয়ে যা দাঁড়ায়- তা বললে অনেক লোকই হাসাহাসি করবে। কিন্তু বাংলাদেশ সুপার এইটে খেলে ফেললে খুব বেশি বিস্ময়ের কি কিছু থাকবে? মনে হয় না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতে গেলে, এরপর হারাতে হবে কেবল নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে। খুব কঠিন কিছু? হওয়া উচিত নয় অন্তত।  

একবার ক্রিকেট বোর্ডের একজনই বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ খেলে মোমেন্টাম দিয়ে। ’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেয়ে গেলে সেটি তো পাওয়ারই কথা। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটে ছবি তোলার ওই দিনটার মতো আলো-আঁধারির খেলা তো নিয়মিত দৃশ্যই!

বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৪
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।