ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

টেস্টে অবিস্মরণীয় সাফল্যের বছরে আলোচনায় বিসিবির রদবদল ও সাকিব

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
টেস্টে অবিস্মরণীয় সাফল্যের বছরে আলোচনায় বিসিবির রদবদল ও সাকিব

বছরজুড়ে পুরো দেশের মতো ক্রিকেটেও রঙ বদলেছে বারবার। ২০২৪ সালে মাঠের ক্রিকেটে ফরম্যাট ভেদে পারফরম্যান্সেও ছিল ভিন্নতা।

টেস্টে অবিস্মরণীয় সব জয়, টি-টোয়েন্টিতেও বছর ছিল রঙিন। তবে ওয়ানডেতে বিবর্ণ ছিল দল। এর মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাফল্য আরও একবার আনন্দে ভাসিয়েছে। বিশ্বকাপে প্রথমবার জয় পেয়েছে মেয়েরা।

মাঠের বাইরেও ক্রিকেট ছিল সরব। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর বেশির ভাগ পরিচালকই হয়ে যান ‘উধাও’। প্রায় এক যুগের সভাপতি অধ্যায়ের অবসান হয় নাজমুল হাসান পাপনের। তার জায়গা নেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। এই সময়েই অনিশ্চিত হয়ে যায় দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার, তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।

টেস্টে অবিস্মরণীয় সাফল্য, টি-টোয়েন্টিও সফল, বিবর্ণ ওয়ানডে

এ বছর টেস্টে অবিশ্বাস্য এক বছর কাটিয়েছে বাংলাদেশ। ১০ ম্যাচে জয় এমনিতে তিনটি। তবে সবগুলোই এসেছে দেশের বাইরে। এর আগে কখনো এক ক্যালেন্ডারে বিদেশের মাটিতে এত টেস্ট জেতেনি বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশ বছরের শেষ টেস্টটি জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

বরাবরই স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাট হিসেবে পরিচিত ওয়ানডেতেও এবার ভালো করতে পারেনি দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বছরের শুরুর দিকে ওয়ানডে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। এরপর আফগানিস্তানের সঙ্গে দুবাইয়েও সিরিজ জিততে পারেনি আর বছরের শেষটা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হয়ে। সবমিলিয়ে ৯ ম্যাচে জয় কেবল তিনটি।

টেস্টের মতো বাংলাদেশের সাফল্য এসেছে টি-টোয়েন্টিতেও। বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে শুরু হয়েছিল এই ফরম্যাটে। কিন্তু এরপরই জিম্বাবুয়েকে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চারটিতে হারায় তারা। বিশ্বকাপের ঠিক আগে আবার হারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।

ওই ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্বকাপের সুপার এইটে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। সুযোগ এসেছিল সেমিফাইনালে খেলারও। কিন্তু সমীকরণ মেলাতে না পারায় তাদের টপকে যায় আফগানিস্তান। আর বছরের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ করে রঙিনই করে রাখে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে প্রথম জয় মেয়েদের, যুবারা চ্যাম্পিয়ন

মেয়েদের ক্রিকেটে এবার বাংলাদেশের বছরটা কেটেছে মিশ্র। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশের মাটিতে খেলার কথা ছিল তাদের। কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলে যাওয়ার পর নিরাপত্তা শঙ্কায় আইসিসি সেটি নিয়ে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

সেখানে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে প্রায় এক দশক পর বাংলাদেশ জয় পায়। তবে এই ফরম্যাটে নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের বাকি সময় ভালো কাটেনি। অস্ট্রেলিয়া, ভারতের পর বছরের শেষে আয়ারল্যান্ডের মেয়েদের বিপক্ষেও হোয়াইটওয়াশ হয়। ওয়ানডেতে আইসিসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে তিন ম্যাচের দুটি সিরিজ খেলে। একটিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়, আরেকটিতে আইরিশ মেয়েদের হোয়াইটওয়াশ করে তারা।

যুবাদের এশিয়া কাপেও বাংলাদেশ সাফল্য পায়। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে সাফল্যের শুরুটা করেছিলেন আকবর আলি। গত আসরে এশিয়া কাপও জেতে বাংলাদেশের যুবারা। এবার আজিজুল হাকিমের নেতৃত্বে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে নিজেদের শিরোপা ধরে রেখেছে তারা।

বোর্ডে রদবদল, নেতৃত্বে প্রথমবার সাবেক ক্রিকেটার

আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বোর্ডের বেশির ভাগ সদস্যই ছিলেন দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ৫ আগস্ট অভ্যূত্থানের পরই তাদের বেশির ভাগ গা ঢাকা দেন। পরে দেশের বাইরে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠান পাপন।

এতে অবসান ঘটে বিসিবিতে তার এক যুগের নেতৃত্বের। বিভিন্ন কারণেই বেশ আলোচিত-সমালোচিত ছিল তার এই অধ্যায়। পাপনের বিদায়ের পর বিসিবিতে আসেন ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তাদের জায়গা দিতে ক্রীড়া পরিষদের কাউন্সিলশিপ ছাড়তে হয় জালাল আহমেদ ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিকে।

বোর্ডে আসার পর বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক। পরে বোর্ডের বেশির ভাগ পরিচালকই দায়িত্ব ছাড়েন। এখন ১০ জন নিয়ে চলছে বিসিবি। চার মাসেও স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো ভাগ করে দিতে পারেননি ফারুক। তবে তিনি আসার পর চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বাড়তি ছুটি কাটানো ও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এক ক্রিকেটারকে ‘শারিরীক হেনস্থার’ অভিযোগে চাকরিচ্যুত করেছেন। দায়িত্ব দিয়েছেন ক্যারিবিয়ান ফিল সিমন্সকে।

অবসর নিতে চেয়েও পারেননি সাকিব, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

এ বছরের শুরুতেই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জড়িয়েছিল আরও একটি পরিচয়- রাজনীতিবিদ। ছয় মাস পরই সেটি কাল হয়ে গেল তার জন্য। পাঁচ আগস্ট রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলানোর পর আর বাংলাদেশেই ফিরতে পারেননি।  

ভারতের বিপক্ষে সিরিজে অবশ্য খেলেছিলেন। তখনই জানিয়েছিলেন, মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে চান। কিন্তু প্রতিবাদের মুখে আর ফেরা হয়নি তার। পরে কখনো মানসিক অবস্থা, কখনো সরকারের সবুজ সংকেতের অভাবে জাতীয় দলে খেলা হচ্ছে না তার।

এ বছরের শেষদিকে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) তার খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সবমিলিয়ে সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ারই অনিশ্চিত হয়ে গেছে। একই পরিণতি ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজা। জাতীয় দলে দীর্ঘদিন ধরে না খেললেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন তিনি। আসন্ন বিপিএলে তারও খেলা হচ্ছে না, এখন পর্যন্ত এমন ধারণাই পাওয়া যাচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
এমএইচবি/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।