মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে: টি-টোয়েন্টি মানেই চার-ছক্কা। সেই চার-ছক্কার বন্যায় ভাসবে দর্শক।
শুক্রবার পাক-ভারত দ্বৈরথের শুরুর আগেই গ্যালারির আসন পূর্ণ হয়ে যায়। আগত সবার রং-বেরঙের সাজ ছিল চোখে পড়ার মত। ম্যাচ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের মাটিতে একটুকরো ভারত আর একটুকরো পাকিস্তান চার-ছক্কা আর উইকেট জয়ের উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। গোটা গ্যালারি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে অলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ প্রত্যক্ষ করছে।
মাঠের চার-ছক্কার চেয়ে গ্যালারিতেই চার-ছক্কার হাঁক-ডাক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোন দলের সমর্থক কত জোরে চিৎকার করতে পারেন, চলছে সে প্রতিযোগিতাও।
বাংলাদেশে পাকিস্তান দলের সমর্থক তুলনামূলক বেশি, তবে ভারতও কম যায় না। ভারত আর পাকিস্তানে থেকে আগত দর্শকদের ভিড়ে বাংলাদেশের পাগল সমর্থকরাও কোনো দিক থেকে কম নয়। তাদের উন্মাদনার আঁচড় দুই দেশের দর্শকদের ভালই জানান দিচ্ছে।
ভারতের জয়পুর থেকে এসেছেন অণিতা। ছোট শিশু কোলে সপরিবারে নিজ দেশের খেলা দেখতে এসেছেন। ভারতের জার্সি গায়ে সবাই গ্যালারিতে ভারতের স্লোগানে মুখরিত করে তুলছেন। পাকিস্তানের এক একটি উইকেটের পতনে বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ছেন পেশায় ডাক্তার এই সমর্থক।
অণিতা জানেন না বাংলাদেশ সম্পর্কে। তবে সাকিবের খেলা দেখেছেন আইপিএল ফাইনালে। কোলকাতা নাইট রাইর্ডাসকে শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন। ক্রিকেট ভাল বোঝেন, তবে বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেট উন্মাদনা তাকে অবাক করেছে।
অজয় বোস এসেছেন কোলকাতার বউ বাজার এলাকা থেকে। সকালে হরিদাসপুর বর্ডার এলাকা দিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন। অনলাইনে আগেই টিকিট সংগ্রহ করে রাখায় কোনো বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাকে। মাঠের বাইরে দীর্ঘ লাইন দিয়ে প্রবেশে সময় নষ্ট হওয়ায় বাড়তি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কেবল।
তিনি শুধু আজকের ম্যাচ নয়, ভারতের বেশ ক’টি ম্যাচ দেখতে চান চলতি বিশ্বকাপের। সময় হাতে নিয়ে এসেছেন। ধোনির দলের সময় সম্প্রতি ভাল না যাওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তা হলেও ব্যাটিংয়ে বড় ভরসা দেখছেন তিনি।
শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ড গ্যালারিতে ২০০০ টাকা খরচে কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনেছেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ইশতিয়াক হাফিজ। তবে আজ কোনো দলের সমর্থক নন। তিনি এসেছেন বিখ্যাত এই ম্যাচের সাক্ষী হতে। পারিবারিক কাজ ফেলে মাঠে এসেছেন। মাঠে অন্য পরিচিত বন্ধু খেলা দেখছে, তবে ভিন্ন গ্যালারি হওয়ায় দেখা হচ্ছে না। মাঝে মাঝে ফোনে কথা সেরে নিচ্ছেন।
পাকিস্তানের লাহোর থেকে এসেছেন ইউসুফ আলী খান।
তিনি বাংলানিউজকে জানালেন, পাকিস্তান বেশি রান করতে পারেনি, তবে তারা ঠিকই ভাল খেলবে। এই পিচে বেশি সহজে রান করা যাবে না। আমি আশাবাদী ভাল খেলা হবে। কারণ, হার-জিত হবেই, তবে ভাল খেলা ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে হবে না, এটা মানা কঠিন।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ এটাই প্রথম। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভারত বা পাকিস্তানের বিষয় শুধু নয়, ক্রিকেট মানেই আস্থার ঠিকানা। এই ক্রিকেট ঘিরে স্বপ্ন বুনে যাচ্ছে আবেগপ্রাণ মানুষগুলো। তবে বিশ্বকাপের এই ম্যাচকে ঘিরে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে একটু আগ্রহ বড় ভুল কিছু নয়।
শুধু ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ নয়, ক্রিকেট নিয়েই বাংলাদেশের মানুষ খানিকটা বেশিই আবেগপ্রবণ। এই ম্যাচ উপভোগ করলেও ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে নিজের দল ভাল কিছু করবে-এমন প্রত্যাশায় বিভোর দেশের সকল ক্রিকেটপ্রেমী।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৪