চট্টগ্রাম: টি-টোয়েন্টি মানেই ধুন্ধুমার মার। চার-ছয়ের বন্যা।
ম্যাচ শেষে প্রোটিয়া অধিনায়কও বিষয়টি অস্বীকার করলেন না। ডু প্লেসিস বলেন,‘আজকের ম্যাচের কৃতিত্ব নেদারল্যান্ডসের। তারা খুবই ভালো ক্রিকেট খেলেছে। এ ম্যাচের সত্তর শতাংশই তাদের দখলে ছিল। ’
টস জিতে প্রোটিয়াদের ব্যাট করতে পাঠায় ডাচরা। ১৪৫ রানে তাদের বেঁধেও ফেলে ডাচ বোলাররা। এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে আহসান মালিক গড়লেন কয়েকটি রেকর্ড। ঢুকে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের তালিকায়। স্পিন জাদুকর অজন্তা মেন্ডিসদের তালিকায় নয় নাম্বারে। টোয়েন্টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিন নাম্বারে। সহযোগী দেশগুলোর বোলারদের মধ্যে ২ নাম্বার। এরপরও হারটা ঠেকানো গেল না। ডাচদের লড়াইয়ের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত জিতেছে প্রোটিয়াদের অভিজ্ঞতাই। তবে জয় তুলে নেওয়া সহজ ছিল না প্রোটিয়াদের জন্যও।
ডু প্লেসিসও বলেন তাই। ‘জয় তুলে নেওয়াটা আমাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। এটাই প্রমাণিত হলো যখন প্রতিপক্ষ শতভাগ উজাড় করে দিয়ে খেলে তখন প্রতিপক্ষকে হারানো সত্যি খুবই কঠিন। নেদারল্যান্ডস কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য। কারণ তারা খুবই ভালো বল করেছে। ’
ব্যাট হাতেও সমান কৃতিত্ব দেখায় ডাচরা। বিনা উইকেটে স্টেফান মাইবার্গ ও মাইকেল স্টুয়ার্ট তুলে নেন ৫৮ রান। এরপর আর কোন ব্যাটসম্যানই ২০ এর কোটা ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। শেষ পর্যায়ে ৪৮ বলে দরকার ৩২ রান। কিন্তু এর পরপরই শুরু হয় প্রোটিয়া বোলার ইমরান তাহিরের ঘূর্ণি আক্রমণ। ২১ রানে চার উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ সেরাও হন এ বাঁ হাতি স্পিনার। জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে ইমরানের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েন ডাচরা। একে একে ফিরতে থাকে সাজঘরে। তবুও জয়ের সম্ভাবনা ছিল। শেষ উইকেটে প্রয়োজন ছিল মাত্র ছয় রান। কিন্তু ১৯ তম ওভারের চতুর্থ বলে ডাচ ব্যাটসম্যান গাগটেনকে তুলে নিয়ে তুলির শেষ আঁচড় কাটেন প্রোটিয়া বোলার হেন্ডরিকস।
প্রোটিয়া অধিনায়ক ডু প্লেসিসও তাদের প্রশংসা করতে ভুললেন না। বললেন,‘জয়ে তাহির এবং স্টেইনের ভালো ভুমিকা রয়েছে। তরুণ হেন্ডরিকসও চাপের মধ্যে ভালো বল করেছে। ’
ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ম্যাচ সেরা ইমরান তাহির বলেন,‘খুবই ভালো লাগছে। দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল এটি। আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা জিতব। কিন্তু এটা সহজ ছিল না। আমি প্রতিটি বলই ভালো করার চেষ্টা করেছি। সুফলও পেয়েছি।
অন্যদিকে ম্যাচ শেষে যথারীতি বিষণ্ন চেহারায় সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন নেদারল্যান্ডস দলপতি পিটার বোরেন। আকাশ ছুঁই ছুঁই করেও ছুঁতে না পারার হতাশায় মাথাটা ঝুঁকে আছে। যেন পুরো দলের হতাশা ভর করেছে তারই কাঁধে। তবুও সর্বনিম্ন রান স্কোর গড়ার লজ্জ্বার পর এমন লড়াই কিছুটা শান্তনাও বটে।
ম্যাচ শেষে পিটার বোরেন বলেন,‘শুরুটা আমরা ভালো করেছিলাম। আমরা তাদেরকে ধাক্কাও দিতে পেরেছি। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আহসান মালিকের। সে চমৎকার বল করেছে। কিন্তু ইমরানকে খেলতে না পারায় আমরা হেরেছি। সত্যিই এটি পেয়েও না পাওয়ার মতো। এটা আমাদের জন্য লজ্জারও। তবে আমি খুশি শেষের লজ্জাজনক হারের অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে লড়াই করতে পেরেছি। ’
যতই মিছামিছি শান্তনা খোঁজার চেষ্টা করুক না কেন পিটার। এমন সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার যন্ত্রণা ভুলে যাওয়া কি আদৌ সহজ? পেরেছেনও কি ডাচ অধিনায়ক? আবার কবে এমন সুযোগ পাবে তারও কি নিশ্চয়তা আছে আইসিসি’র সহযোগী এ দেশটির? লজ্জাজনক হার, অতঃপর জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে পিছলে পড়ার পর জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সম্মেলন কক্ষে ডাচ অধিনায়কের চেহারা দেখে মনে হলো কষ্ট ও বেদনার রং নীল হলেও কখনো কখনো কমলাও হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৪