অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে: স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, মার্টিন ক্রো’র পর আরো একজন বললেন; নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে ইতিহাসে এটাই তাদের সেরা টিম! তিনি স্টিফেন পল ফ্লেমিং। নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক।
সব মিলিয়ে ২১৮ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের হয়ে টস করতে নামেন তিনি। সেই লোকটার কাছে ক্রিকেট মানে আপাতত আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংস। বছরের বাকিটা সময় নিজের ব্যবসা নিয়েই কাটান ফ্লেমিং। কিন্তু উপলক্ষ যখন বিশ্বকাপ তখন আর দূরে থাকেন কিভাবে? তাও আবার বিশ্বকাপ তার নিজের দেশ আর প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ায়। তাই ক্রিকেট আবার তাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও মাঠে ফেরালো। কলাম লেখা থেকে টুকটাক কমেন্ট্রি, সবই করছেন। কিন্তু কেমন করছে তার দল?
বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া ফ্লেমিং এর জবাব;‘ নিউজিল্যান্ড যা খেলছে তারচেয়ে ভাল আর কি হতে পারে। অন্তত এখনো পর্যন্ত তারা খেলেছে তাতে বলতেই হবে কিউইরা নিজেদের পারফরম্যান্সকে ভাল একটা লেভেলে নিয়ে গেছে। এবং এটা খুব দরকার। ’ কেন তাঁর একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সাবেক এই নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। ব্যাখ্যাটা অর্থ-কড়ি সংশ্লিষ্ট। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে খুব বেশি পয়সা আছে তা নয়। ভাল পারফরম্যান্স দিয়েই শুধু ক্রিকেটাররা নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টকে স্ফিত করতে পারবেন। এরকম মত ফ্লেমিঙের। নিজের সেই অভিমতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে চোখ ফেরালেন বিশ্ব ক্রিকেটের রাজনীতি আর ব্যবসার দিকে।
‘ক্রিকেট রাজনীতি’ শব্দটা একটু বেশি কঠিন মনে হতে পারে। মনে হতে পারে শক্ত শব্দ। কিন্তু তারও চেয়ে ভাল শব্দ আর কি হতে পারে! পলিটিক্স! শুনতেই কেন যেন একটা নেতিবাচক অর্থ বেরিয়ে আসে। সেটা বলতে চান না ফ্লেমিং। তবু রাজনীতি ছাড়া অন্য কোনো শব্দ বসানো যাচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব ক্রিকেটে ‘বিগ থ্রি’ শব্দটা একটু বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, খেলার মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরে। ফ্লেমিং এর মুখেও সেই ‘বিগ থ্রি’! তিনি অবশ্য সেটাকে একটু ইতিবাচক অর্থে বোঝাতে চাইলেন। ‘ ক্রিকেটে বিগ থ্রি’র মার্কেট হচ্ছে সবচেয়ে বড়। এনিয়ে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এই তিনটা দলের সঙ্গে বেশি ম্যাচ খেলতে পারলে আপনার বোর্ড বেশি অর্থ রোজগার করতে পারবে। বেশি পয়সা ক্রিকেটারদের দিতে পারবে।
তাই নিউজিল্যান্ডের অর্থ রোজগারের সবচেয়ে বড় যে রাস্তাটা খোলা, তা হচ্ছে ঐ তিনটা দলের বিপক্ষে সিরিজে বেশি ম্যাচ আয়োজন করা। আর তার জন্য আপনাকে ভাল ক্রিকেট খেলতেই হবে। ’-বললেন ফ্লেমিং। অর্থকড়ির থেকে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের পিছিয়ে থাকার একটা বড় কারণ হচ্ছে দর্শক। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে সেরকম দর্শক কোথায়? গোটা দেশের লোকসংখ্যা যেখানে ৪৩ লাখের মতো সেখানে ক্রিকেট নিয়ে মতামাতি করার লোক কোথায় পাবেন? দিনকয় আগে ইডেন পার্কে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাজার চল্লিশেক দর্শক দেখেই হৈচৈ পড়ে গেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে।
’৯২ এর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও নাকি এতো দর্শক হয়নি। বলছিলেন ইডেন পার্কের মিডিয়া রুমে স্বেচ্ছসেবক হিসেবে কাজ করা জন। ‘এরকম দর্শক হয়েছিল সম্ভবত ’৮২-ও সেই ‘আন্ডারআর্ম’ বোলিংয়ের পরের ম্যাচে!’ স্মৃতির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলছিলেন ষাটের কাছাকাছি বয়সী জন।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে দর্শক কম হ্ওয়ার কারণ শুধু জনবসতি কম সেটা নয়। রাগবি সহ অন্যসব খেলার সঙ্গে ঠিক পাল্লা দিতে পারছে না ক্রিকেট। বিশেষ করে সাফল্যের নিরিখে। তাছাড়া অর্থ যেখান থেকে আসে সেই বড় বাজার হচ্ছে টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ব। সেটা বেচতে গেলে আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে ,‘টাইম’ টাইম জোনের কারণে ভারতের মতো বড় বাজারে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বিকোতে পারছে না। মনে করেন স্টিফেন ফ্লেমিং।
শুধু ভারত কেন, একই সমস্যার কারণে ইংল্যান্ডের মার্কেটও তারা পায় না। তবে বিশ্বায়নের এই যুগে ক্রিকেট বিপণনের জন্য প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে গুড ব্র্যান্ড অফ ক্রিকেট। আর এখানেই আশাবাদী হয়ে উঠছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক। ‘ ব্র্যান্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বে খুব ভাল ক্রিকেট খেলছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপে সফল হলে আমাদের ক্রিকেট বাজারটাও বেড়ে যাবে। ওরা নিজেরাও সেটা জানে। ’ বলছিলেন ফ্লেমিং।
ভাল ক্রিকেটের জন্য দরকার ভাল একটা টিম। বর্তমান দলটাকে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে ভাল ওয়ানডে টিম হিসেবেই দেখছেন অন্যদের মতো ফ্লেমিংও। ক্রিকেট রোমান্টিসিজমে ভুগতে থাকা অন্যরা যেমন সরাসরি বলছেন এটাই সেরা। কিন্তু ফ্লেমিং একটু ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা দিয়ে সেই রোমান্টিসিজমকে টেনে আনলেন। ‘দেখুন; এক একজন করে তুলনা করা ঠিক হবে না। তবে দল হিসেবে এটাই সেরা।
আমি শুধু দু’জনের কোনো বিকল্প খুঁজে পাই না। এই দলে শুধু নেই একজন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি আর একজন গ্রেট মার্টিন ক্রো! না হলে সব ঠিক আছে। ’ নিউজিল্যান্ড-ক্রিকেট ইতিহাসে ঐ দুই সাবেকের যে প্রভাব তা থেকে বেরিয়ে আসতে আরো অনেক সময় লাগবে। ফ্লেমিং কেন সেটা স্বীকার করেন সবাই। তবে এটাই সেরা টিম তা প্রমাণ করার দায়িত্ব এখন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম এবং তাঁর দলের।
বাংলাদেশ সময় : ২১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫
** বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে