ঢাকা: চা নিয়ে খেলাটা বেশ উপভোগ করছিলেন! মাশরাফির শুরুটা অসাধারণ! ধারালো ছুরির মতো একেকটা বল বেশ সমীহ করেই মোকাবেলা করতে হচ্ছিলো শ্রীলংকান ওপেনার থিরান্নাকে। টিভি স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে চায়ের কাপে চুমুকটা দিলেনতো সবশেষ।
আপনার চা সামনেই ঠাণ্ডা হলো। সেদিন পুরো খেলায় চা পানের নামও নিলেন না। তাতে ফায়দা কি হল? থিরান্নাতো ঠিকই বারোটা বাজিয়ে দিল দলের। এক ক্যাচ মিসে ৫২ রানের ইনিংস।
অথবা, বাসায় যাওয়ার পথে গাড়িতে রেডিও শুনছিলেন। ৪৭ ওভারের ২য় বলে চৎমকার একটি ডেলিভারিতে এন্ডারসনকে বোল্ড করলেন নাসির। ৭ উইকেট চলে গেছে কিউইদের। জয়টা এবার হয়েই যাচ্ছে। রেডিও শুনতে শুনতে বাসার কাছাকাছি। রেডিও বন্ধ করে গাড়ি থেকে নামলেন। দলের বিপদ যেনো ডেকে আনলেন নিজেই।
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জয়টা দেখার জন্যে দ্রুত বাসায় ঢুকেই টিভি ছাড়লেন। হায়, একি! মলিন মুখে মাঠ ছাড়ছে টাইগাররা। দেখলেন সাকিব আল হাসানের ৪৯ তম ওভারে বয়ে গেছে কিউই ঝড়। ৭ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ। এবার যত রাগ টেলিভিশনটার ওপর পড়লো। রেডিওতে খেলা শুনছিলেন সেটাই ভালই ছিলো। পস্তাচ্ছেন কেনো যে রেডিওতেই খেলাটা শেষ করে উঠলেন না!!
১২ বছরের শিশু সাফায়েত মুখ হাঁ করে তাকিয়ে টিভির পর্দায়। ব্যাটিংয়ে নেমেছে তামিম ইকবাল আর ইমরুল কায়েস। সকালে নাস্তার আগে আরো একটি ওভার দেখে যাবে। কিন্তু সাফায়েতের মায়ের শাসন তা মানবে না। শেষ পর্যন্ত বকুনি খেয়ে নাস্তা করতে বসলো। পরোটা না চিবিয়ে পানি দিয়েই গিললো। দৌড়ে আবার টিভির সামনে।
কিন্তু সাফায়েত, মাঠের খেলাটাতো আর ছেলে খেলা নয়! মায়ের সব কথা কি আর শুনতে হয়! নাস্তা খেয়েছে রাফায়েত, আর তামিম আর ইমরুলকে ততক্ষনে খেয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের বোলাররা।
রাফায়েত ভাবে, ধ্যাৎ.. কেন যে মায়ের কথা শুনে নাস্তাটা খেতে গেলাম?
কি ভাবছেন পাঠক, এসবই কুসংস্কার!?
যাই ভাবেন না কেন, প্রত্যেকের মন জুড়েই এমন কিছু চলতে থাকে। যা তাদের জন্য হয়ে থাকে ম্যাচে বাংলাদেশের জয় বা পরাজয়ের কারণ!
বাংলাদেশে এখন সেরা বিজ্ঞানের শিক্ষক বললে আপনাদের ১০ জনের হয়তো ১০ জনই এক কথায় বলবেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জাফর ইকবালের কথা।
এইতো বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের খেলার দিন, একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেয়া স্বাক্ষাৎকারে অকপটে স্বীকার করলেন, নিজস্ব টোটকার কথা। বললেন, ‘আমি খেলা না দেখলে দল জিতে। আমি দেখেছি, যে ম্যাচটা আমি দেখি সেটাই কেন জানি ওরা হেরে যায়। ’
এখন নিশ্চয়ই বলবেন না, যে অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন ড. ইকবাল।
কি বলবেন বলুন! এইতো্ সেদিনের বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও যে লাল-সবুজের মিশ্রনে পড়েছিলেন শাড়ি। মনে মনে কি তারও কাজ করেনি… জাতীয় পতাকার এ রংয়ের শাড়ি পড়লেই ক্রিকেটাররা সমাধি রচনা করতে পারবে ইংলিশদের! হলোও কিন্তু তাই। কে জানে! হতেও পারে ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী আবারো লাল-সবুজের শাড়িতে অফিস করলেন। আর দল জিতে গেলো।
বাংলানিউজের অফিসে বসে লিখছি আর বাইরের কথা বলছি কেনো শুধু!
ঘরের মধ্যেইতো মানা হচ্ছে কত ধরনের টোটকা।
বাংলাদেশ দল যখনই খেলতে নামে এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন ঘোষণা দেন, আমি বলছি বাংলাদেশ জিতবে, যারা রাজি না, বাজি ধরতে পারো। কেউ বাজি ধরে না। কিন্তু তিনি আসলে মনে করেন, দলের হয়ে বাজি ধরলেই তার জয় হবে, আর দেশের জয়তো হবেই।
আরেক ঘটনা, বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বসে আছেন আমাদের কনসালট্যান্ট এডিটর জুয়েল মাযহার। তবে দেশের নারীদের হৃদয় হরনকারী রুবেল যখন এক ইয়র্কারে উড়িয়ে দিলেন এন্ডারসনের স্ট্যাম্প। অ্যডিলেড ওভালের সঙ্গে নেচে উঠলো আমাদের নিউজরুমও। সকলের সঙ্গে লাফিয়ে উঠলেন জুয়েল ভাইও।
কি নরনারীরা? ভাবছেন ভোল পাল্টেছেন জুয়েল ভাই! আরে না.. জবাব দিলেন, ‘তিনি যে দলের সমর্থন করেন, সেই দলেরই হার হয়। ’ আর তাইতো দলের জয় রেখেছেন নিজের হাতে। শেষ উইকেট পর্যন্ত করেছেন বৃটিশ সাপোর্ট। যাতে বাংলাদেশই জেতে। হয়েছেও তাই।
এই লেখার আইডিয়া শেয়ার করলাম, হেড অব নিউজ মাহমুদ মেননের সঙ্গে। কারে কি বলি! নিজেই বললেন, দলের জয়ে কি ভূমিকা রাখেন তিনি। নিজে টিভির সামনে দাঁড়ালেই নাকি পড়ে উইকেট। তাইতো কাজের ফাকেঁ বিরোধী শিবিরের উইকেট ফেলতে কিছুক্ষণ পরপর টিভির স্ক্রিনের ঠিক সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
তো ভাই আর বোনেরা… ভারতকে হারাতেই হবে। এভাবেই হয়তো আপনার নিজেরও একটা টোটকা রয়েছে। নিজের সেরা টোটকাটা মেনে খেলা দেখুন বা শুনুন ১৯ মার্চ। আপনার টোটকাই কিন্তু জয় এনে দেবে মাশরাফিদের। মওকা বানিয়ে নাস্তানাবুদ করবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের।
আমার নিজের টোটকাটা জানিয়ে রাখি। গোঁফ কেটে দাঁড়ি রাখা। ১৯ মার্চ ক্লিনড গোঁফে চাপদাড়িতে থাকবো টিভি স্ক্রিনের সামনে। দল না জিতে যাবে কোথায়। এটাতো আসল পীরের টোটকা!
বাংলাদেশ সময় ২১৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫