একটা না দ’টো? একটা হলে নিশ্চিত তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দাঁড়ি পড়ে যাবে। আর দু’টো হলে কিভাবে সেটা তিনি নিজেও বোধহয় জানেন না! বিশ্বকাপ হাতে নিতে হলে দু’টো ম্যাচ খেলতে হবে মাইকেল ক্লার্ককে।
মাইকেল ক্লার্কের ওয়ানডে ক্যারিয়ার আরো একটু লম্বা হবে কি না তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মহলে অনেক জল্পনা-কল্পনা চলছে। একইভাবে এখনো আলোচনা চলছে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের জয় আর আইসিসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য নিয়ে। এমসিজির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক ঘটনা। অনেক স্মৃতি। তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকলো বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে পাকিস্তানি আম্পায়ারের বিখ্যাত ‘নো বল’! রোহিত শর্মার বিপক্ষে রুবেল হোসেনের ফুলটস বলকে ‘নো’ ডেকে আলিম দার আরো ‘বিখ্যাত’ হয়েছেন। ২৬ মার্চ, সিডনিতে তেমন বিখ্যাত কাউকে লাগবে কিনা ভারতের, এনিয়ে সরস আলোচনা চলছে। তবে সেমিফাইনালের আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই ভারতকে এগিয়ে রাখার লোক তেমনেএকটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রিকেটবিশ্বে শাসকের আসনে বসে থাকা ভারতীয়দের মধ্যেও বড় একটা অংশ মনে করছেন তা: ম্যাচে কোনো বল গড়ানোর আগে বরং অস্ট্রেলিয়াই এগিয়ে। অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের পেস অ্যাটাকের বিপক্ষে এই অস্ট্রেলিয়াকে যতোই নড়বড়ে দেখাক না কেন, দিন শেষে তাঁরা ম্যাচটা জিতেছিলো ৬ উইকেটে। তাও ৯৮ বল বাকি থাকতে। পাকিস্তানের ঐ অ্যাটাক সামলে আসা অস্ট্রেলিয়া ভারতকে খুব একটা পাত্তা দেবে বলে মনে হয় না। তা মাইকেল ক্লার্ক যতোই বলুন ;‘ এমএস ধোনির ভারত খুব ভাল ফর্মে আছে। ভাল ক্রিকেট খেলছে তারা। ’
ভাল ক্রিকেট অবশ্যই খেলছে ভারত। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে হলে আরো ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে তাদের। সেটা সবাই জানেন। কিন্তু মাইক আথারটনের মতো অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক মনে করেন, ভাল ক্রিকেটটা ভারত হয়তো খেলবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতার জন্য সেটা যথেষ্ট হবে কি না তা নিয়ে ঢের সংশয় সাবেক ইংলিশ অধিনায়কের। অবশ্য ব্রায়ান লারা, পাকিস্তানের বিপক্ষে যে অস্ট্রেলিয়াকে দেখেছেন তাতে তাঁর মনে সংশয়-- কতোদূর যাবে অস্ট্রেলিয়া! তবে লারার প্রিয় শহর সিডনি থেকে আড়াই ঘন্টার মতো বিমানযাত্রার দূরত্বে যে ম্যাচটা অনুষ্ঠিত হবে ২৪ মার্চ, সেখান থেকে যারা মেলবোর্ন উড়ে যাবে কাপটা তাঁদের হাতে উঠবে কি? অকল্যান্ডে যদি নিউজিল্যান্ডের স্বপ্ন বিসর্জন হয়, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়াও রুখে দিতে পারবে বলে মনে করেন না শন পোলক। সিডনিতে কোয়ার্টার ফাইনালে যেভাবে শ্রীলংকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক আউট ম্যাচ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা; তাকে ‘শাপ মোচন’-ই মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক। শুধু পোলক নন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে এখন বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট মনে করছেন অনেকেই। তবে অনেকে একটা শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন; আগে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে হবে। আগের ম্যাচটায় নিউজিল্যান্ড যেভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজেকে হারিয়েছে তা দেখে হ্যাডলি থেকে মার্টিন ক্রো সবাই একমত, সঠিক সময়ে একে একে জ্বলে উঠছেন কিউইরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ব্যক্তিগত সবোর্চ্চ রানের মালিক মার্টিন গাপটিল যেভাবে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিলেন একেবারে সুদ-আসলে, সেটাও এখন আলিম দারের ‘নো বল’ ডাকার মতো আলোচিত বিষয়। তবে আলোচনায় আছেন সেই মারলন স্যামুয়েলস। যিনি টেলরের প্রথম ওভারে মাত্র ৪ রানে ক্যাচ ফেলেছিলেন গাপটিলের। তবে ইতিহাস স্যামুয়েলসের ক্যাচ ড্রপ নয়, মনে রাখবে গাপটিলের ২৩৭ রানকে।
ইতিহাস বলছে, তেইশ বছর আগে সিডনি মাঠে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যে দলটা জিতেছিল মেলবোর্নে তারা কাপ উঁচিয়ে ধরতে পারেনি। সেবার নিউজিল্যান্ডকে অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে গুঁড়িয়ে দিয়ে মেলবোর্নে কাপ জিতেছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বৃষ্টি-আইনে জিতে যাওয়া ইংল্যান্ডের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছিলেন এক বাঁহাতি। অ্যাডিলেডে বসে তিনি দেখলেন তার দেশ বিশ্¦কাপ থেকে বিদায় নিলো! কিন্তু সেই ওয়াসিম আকরামই বললেন ;‘ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালগুলো বড্ড বেশি একপেশে হয়ে গেলো। সেমিফাইনাল যদি ওরকমই কিছু হয়, তাহলে বিশ্বকাপটাই মনে হবে পানসে। সেটা ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু নয়। ‘
যে ম্যাচের গায়ে মিডিয়ার বড় একটা অংশ ট্যাগ এঁটে দিচ্ছে ,‘গেম অফ দ্য টুর্নামেন্ট’ এর সেই ম্যাচে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের সবক’টি স্ট্যান্ড কানায় কানায় ভরে যাবে বলে আশাবাদী অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মহল। সিডনিতে প্রচুর এশীয়। ভারতীয়দের সংখা মোটেও কম নয়। শ্রীলংকান, পাকিস্তানি, বাংলাদেশিও আছে প্রচুর। ২৬ তারিখ বোঝা কঠিন হতে পারে খেলাটা সত্যিই আউট সাইড এশিয়া হচ্ছে কি না! তবে সেটা যদি মাইকেল ক্লার্কের বিদায়ী ম্যাচ না হয়, তাহলে বুঝতে বাকি থাকবে না বিশ্বকাপ সত্যি সত্যিই আউট সাইড এশিয়া।