টেনশনের চোরা স্রোত বইছে। উত্তেজনাও আছে।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের প্রেসবক্সে বসে অবশ্য উত্তেজনাটা ভালই বোঝা যায়। ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে স্বাগতিকরাই সংখ্যালঘু! গ্যালারির চেহারাটও যে তেমন কিছু হবে, সেটা ভালভাবেই আন্দাজ করা যাচ্ছে। আর হবে না কেন? এটাকে যে বলা হচ্ছে, ‘গেম অফ দ্য টুর্নামেন্ট’। বলার যৌক্তিক অনেক কারণও খুঁজে পাচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে মার্ক ওয়াহ।
তাসমান সাগরের ওপারে প্রথম সেমিফাইনাল যখন বৃষ্টিভেজা হচ্ছিলো, সে সময় ফক্স স্পোর্টসের টক শো-তে ২৬ মার্চ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল নিয়েই আলোচনা। অস্ট্রেলিয়া-ভারত ম্যাচ। হোক সেটা সেমিফাইনাল, সেই ম্যাচটাকেই সবচেয়ে বড় ম্যাচ হিসেবে দেখার লোকের অভাব হচ্ছে না। সৌরভ গাঙ্গুলি যেমন বলেই দিলেন;‘ ম্যাচ অফ দ্য টুর্নামেন্ট। ’ কেন তার ব্যাখ্যাও দিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। ‘সেরা চারটা দলই সেমিফাইনালে উঠেছে। তবে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটাই সবচেয়ে বেশি টেনশনের ম্যাচ হতে যাচ্ছে। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ম্যাচও। ’ ভারতের সাবেক অধিনায়ক অবশ্য সেই সঙ্গে একটা কথা বলে রাখলেন। ‘ভারত খানিকটা ভাগ্যবান কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা তারা পেয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ’
ভাগ্য কি শুধু কাগজে-কলমে বাংলাদেশ দুর্বল দল ছিল সে কারণে, নাকি তা আম্পায়ারদের সৌজন্যে! সেটা অবশ্য আর বললেন না সৌরভ। কিন্তু ফক্স স্পোর্টসে রুবেল হোসেনের একটা বল কিন্তু বার কয়েক দেখালো। সেটাই কি টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আলোচিত ডেলিভারি কি না সেই প্রশ্নটাও উঠছে। ঐ বলে রোহিত শর্মা লাইফ না পেলে, সেমিফাইনাল ম্যাচটাতে সবচেয়ে বড় ম্যাচ বলা হতো কিনা সে ব্যাপারে সংশয় থাকছে। কারণ, সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষের নাম ভারত না হয়ে হতে পারতো বাংলাদেশও!
তবে কি হতে পারতো সেটা নিয়ে ভাবছে না অস্ট্রেলিয়া। যেটা হতে যাচ্ছে সেটাই তাদের ভাবনায়। মিচেল জনসন যেমন বলে গেলেন;‘দুটো ভাল দলের মধ্যে ভাল একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচই সবাই আশা করছেন। আমাদের ফোকাসও এই ম্যাচটা ঘিরে। তবে আমরা টুর্নামেন্ট শেষ করতে চাই মেলবোর্নে। এবং অবশ্যই কাপটা জিতে। ’ কিন্তু তার আগে সিডনিতে জেতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই দু’দলের। তার জন্য অবশ্য ভাগ্য একটা ফ্যাক্টর হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত সৌরভ গাঙ্গুলি। ‘টস। টস খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এই ম্যাচে। আমার মনে হয়, যে দল টস জিতবে তারা আগে ব্যাট করে বড় একটা স্কোর দাঁড় করাতে চাইবে। প্রতিপক্ষের উপর প্রেসারটা চাপিয়ে দিতে চাইবে। ’ এই ফর্মুলায় দ্বিমত নেই ইংলিশ ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেনেরও। কিন্তু এসসিজিতে এসে ফক্স স্পোর্টসকে ইন্টারভিউ দেয়ার সময় একটু অন্যমত পোষন করলেন মিচেল জনসন।
‘আগে বা পরে ব্যাট করলে কি হবে সেটা নিয়ে ভাবতে রাজি নই আমরা। আমরা ভাবছি নিজেদের কাজটা নিয়ে। আমি জানি আগে বোলিং করলেও আমাকে প্রতিপক্ষের উইকেট নিতে হবে। পরে ব্যাট করলেও তাই। এবং সেই কাজটা করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। ’ তবে মিচেল জনসনের টিমমেট অ্যারন ফিঞ্চ, যিনি অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হলেন সিডনির প্রেস কনফারেন্স রুমে। তিনি কিন্তু অনেক প্রশংসা করলেন ভারতের বোলিং অ্যাটাকের। ‘একটা বোলিং ইউনিট হিসেবে বল করছে ওরা। ওদের তিনজন পেসার সামি, যাদব, শর্মা প্রত্যেকেই ভাল ফর্মে। একটা ছন্দে বল করছে। অস্ট্রেলিয়ায় লম্বা একটা সময় কাটিয়েছে ওরা। তার ফলও পাচ্ছে। এখানকার পরিবেশ, উইকেট, সব কিছুর সঙ্গে দারুণ মানিয়ে নিয়েছে ওরা। সে কারণে এখানে সাতটা ম্যাচও জিতলো টানা! ভাল ক্রিকেট না খেলতে পারলে কি টানা সাতটা ম্যাচ জেতা যায়?’ প্রশ্ন অ্যারন ফিঞ্চের। কিন্তু পাল্টা প্রশ্নটায় রীতিমতো ডিফেন্স করলেন। টানা সাত ম্যাচ জেতা ভারতের পক্ষে কি সংখ্যাটাকে আটে পরিণত করা সম্ভব হবে সিডনিতে? ‘হ্যাঁ,’ কিংবা ‘ না’ সরাসরি কোনো উত্তর নেই। কিন্তু শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিলো ‘আমরা তো সাতেই আটকে দিতে চাই ভারতের জয়রথ। ’ কিন্তু মুখে বললেন না।
তবে এই বলা না বলার মাঝে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে থাকতে পারে সিডনির উইকেট। বৃষ্টির কারণে উইকেটটা ঢেকে রাখা। সেই ঢাকা উইকেট কার হয়ে কথা বলবে তার উপরই অনেকখানি নির্ভর করতে পারে ম্যাচের ভাগ্য। ভারতীয়রা চাইছে, সিডনির উইকেট আগের মতোই আচরণ করুক। যেখানে স্লো বোলাররা ভাল করে। তা হলে সামি-যাদব-শর্মা নয়, ভারতের ট্র্যাম্প কার্ডের নাম হতে পারে রবি চন্দন আশ্বিন আর রবীন্দ্র জাদেজা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া চাইছে পেস আর বাউন্স ভরা উইকেট। যে উইকেট কথা বলবে দুই ‘এম’ মিচেল স্টার্ক আর মিচেল জনসনদের হয়ে। আর তেমনটা হলে বিগ ম্যাচ শেষ পর্যন্ত আর বিগ ম্যাচ নাও থাকতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৫
** ভারতীয়দের প্রশংসায় অস্ট্রেলিয়া!॥ অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** সিডনিই বলে দেবে বিশ্বকাপটা সত্যিই ‘আউট সাইড এশিয়া’ কিনা! | অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** মহাতারকাদের ক্রিকেট আড্ডায়ও বাংলাদেশ। । অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** আবেগ মেলবোর্নে, যুদ্ধটা সিডনিতে॥ অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** তবু ‘চোক’ শব্দটাকে এড়ানো যাচ্ছে না | সিডনি থেকে অঘোর মন্ডল
** জয়ের চেয়ে ভাল প্রস্তুতি আর কি হতে পারতো!| অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে
** বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হ্যাডলিও || অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** মাহমুদুল্লাহর ইনিংস টেনে আনলো মার্টিন ক্রো-কে। । অঘোর মন্ডল, হ্যামিল্টন থেকে
** ক্লাস অব জিরো এইট! || অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অ্যাডিলেডে শরতের রংও যেন লাল-সবুজ | অঘোর মন্ডল, অ্যাডিলেড থেকে
** ওয়ানডে-তে বোলাররা এখন শ্রমিকের ভূমিকায়! অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** অনেক নাটক জন্ম দিতে পারে ইডেন পার্ক ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইয়র্কার এখন বিরল ডেলিভারি!॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** বিশ্বকাপের রান উৎসবে বাংলাদেশও ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** নেলসনে টাইগারদের তিন ‘ল্যান্ড’ হার্ডল ॥ অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ইংল্যান্ড পারলে বাংলাদেশ কেন নয়? । । অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** শচীন আছেন শচীন নেই! | অঘোর মন্ডল, অকল্যান্ড থেকে
** ব্রিলিয়ান্ট! সুপার! গ্রেট! অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** বাংলাদেশের ব্র্যান্ড সাকিব!|| অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** মিরপুর টেক্কা দিচ্ছে মেলবোর্নকে ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে বাকযুদ্ধ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** নীল-হলুদ নাকি লাল-সবুজের ঢেউ ॥ অঘোর মন্ডল, মেলবোর্ন থেকে
** চোক’ কি ক্রিকেটীয় জোক?। । অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** সাকিব-ই সেরা মানতে অসুবিধা কোথায়!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ব্রিসবেনে আক্ষেপের উল্টোপিঠে স্বস্তিও॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** বৃষ্টিবিলম্বিত ক্লার্কের ফেরা! না থেকেও আছেন আশরাফুল॥ ব্রিসবেন থেকে অঘোর মন্ডল
** শঙ্কার চোরা স্রোত ব্রিসবেনে॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে
** ম্যাচের নায়করা ছিলেন বাইশ গজের বাইরে। । অঘোর মন্ডল, ক্যানবেরা থেকে
** ‘সি’ ফর ক্রিকেট নাকি সাইক্লোন!॥ অঘোর মন্ডল, ব্রিসবেন থেকে