ঢাকা: টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে খেই হারিয়ে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ওভারেই ড্যাশিং ওপেনার ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে হারানোর পর তেরোতম ওভারে তিন উইকেট খুইয়ে ফেলেছে তারা।
প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত ‘পথহারা’ কিউইদের সংগ্রহ ১৫ ওভারে ৪৭ রান। ক্রিজে আছেন রস টেইলর। এখন এই টেইলরেই ভরসা খুঁজছেন কিউই সমর্থকরা। তার সঙ্গে আছেন সেমিফাইনালের জয়ের নায়ক গ্র্যান্ট ইলিয়ট।
বাংলাদেশ সময় রোববার (২৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শুরু হওয়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার শিরোপা জয়ের মহারণে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কিউই দলপতি ম্যাককালাম।
বড় সংগ্রহের আশায় এ সিদ্ধান্ত নিলেও সে আশায় যেন গুঁড়েবালি হয়ে পড়ে কিউইদের। শুরুতেই শূন্য রানে ফিরে যান ড্যাশিং ওপেনার ম্যাককালাম। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই দলীয় এক রানের মাথায় সরাসরি তার স্ট্যাম্প উড়িয়ে সাজঘরের পথ ধরিয়ে দেন অজি স্পিডস্টার মিচেল স্টার্ক।
তার বিদায়ে নামেন কেন উইলিয়ামসন। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে মিলেই উইলিয়ামসন ইনিংস মেরামতের চেষ্টা চালান। কিন্তু গাপটিলেও যেন খেই হারিয়ে ফেলেন। অসি অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের করা ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে স্ট্যাম্পের বেল পড়ে যায় তার। সাজঘরে ফেরার জন্য ব্যাট-প্যাড গোছানোর আগে গাপটিল ৩৪ বলে করেন মাত্র ১৫ রান।
গাপটিল ইনিংসের সমাপ্তির পর মাঠে নামেন রস টেইলর। তবে, টেইলরের সঙ্গে বোঝাপড়া শুরু করার আগেই সাজঘরের পথ ধরেন উইলিয়ামসন। ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে মিচেল জনসনের বলে তাকেই ক্যাচ দিয়ে বসেন উইলিয়ামসন। সাজঘরে ফেরার আগে উইলিয়ামসন করেন ৩৩ বলে ১২ রান।
দলীয় ৩৯ রানে তিন উইকেট খোয়ানো কিউইরা এখন নিশ্চিতভাবেই সেমির নায়ক ইলিয়ট ও রস টেইলরের ব্যাটে প্রত্যাশার আলো খুঁজবে।
এ মহালড়াই শুরুর আগে থেকেই বলা হচ্ছে, প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ নিতে প্রাণপণ লড়াই করবে রিচার্ড হ্যাডলি-মার্টিন ক্রো’র নিউজিল্যান্ড, অন্যদিকে ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া।
শুরু থেকেই দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গে খেলছে এবারের বিশ্বকাপের সহযোগী আয়োজক নিউজিল্যান্ড। পুরো টুর্নামেন্টে ব্ল্যাকক্যাপসরা অপরাজিত থেকে স্বপ্নের ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে। আর বিশ্বকাপের আসরে এবারই প্রথম ফাইনালে উঠলো কিউই বাহিনী। চলতি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের খেলায় অস্ট্রেলিয়াকেও এক উইকেটে হারিয়েছিল তারা।
কিউইদের সব খেলোয়াড়ই রয়েছেন সেরা ফর্মে। ব্যাটিং-বোলিং সব ক্ষেত্রে অলরাউন্ডিং নৈপুণ্য দেখিয়ে দলকে ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছে ম্যাককালাম বাহিনী।
অন্যদিকে, গ্রুপ পর্বের পাঁচ (বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি) খেলায় চারটি জয় এবং কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালের বাধা পেরিয়ে শিরোপার শেষ ময়দানে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। সেমিফাইনালে তারা গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে।
এ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ছয়বার বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে অজিদের। এর মধ্যে চারবারই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেছে তারা।
ইতিহাস-পরিসংখ্যান অজিদের পক্ষে হলেও পুরো টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স বিচারে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে নতুন করে গেম প্ল্যান করতে হচ্ছে মাইকেল ক্লার্ক বাহিনীকে। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক লিজেন্ডরাও এজন্য দলকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন।
নিজেদের মাটিতে শেষ সাতবারের দেখায় সবক’টায় টস হেরেছে অজিরা। তবে টস হারলেও জয় তুলে নিয়েছে পাঁচটিতে। আর মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে গত পাঁচ বছরে ১২টি খেলার দু’টো বাদে সবক’টিতেই জিতেছে অজিরা।
একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে দু’দলের মোট ১২৫ বার দেখা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৪টিতে অজিরা এবং ৩৫টিতে ব্লাক ক্যাপরা জয় পেয়েছে। বাকি ছয় খেলার কোনো ফলাফল আসেনি।
ইতিহাস-পরিসংখ্যানেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে, নাকি নতুন ইতিহাস রচিত হবে, তার জন্য রোববারের এ মহারণের সাক্ষী হতে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যেমন ৮০-৯০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকছেন, তেমনি বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখছেন কোটি ক্রিকেটভক্ত।
নিউজিল্যান্ড একাদশ
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (অধিনায়ক), মার্টিন গাপটিল, কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলর, গ্র্যান্ট এলিয়ট, কোরি এন্ডারসন, লুক রঞ্চি (উইকেটরক্ষক), ড্যানিয়েল ভেট্টরি, টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট ও ম্যাট হেনরি।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ
অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, মাইকেল ক্লার্ক (অধিনায়ক), শেন ওয়াটসন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ব্র্যাড হাডিন (উইকেটরক্ষক), জেমস ফকনার, মিচেল জনসন, মিচেল স্টার্ক ও জস হেইজলউড।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৫
** ম্যাককালামের পর সাজঘরে গাপটিলও
** ধকল সামলাচ্ছেন গাপটিল-উইলিয়ামসন
** প্রথম ওভারেই সাজঘরে ম্যাককালাম
** ম্যাককালাম-গাপটিল জুটিতে কিউইদের সূচনা
** শিরোপা জিততে ব্যাটিং নিয়েছে কিউইরা
** ছয় সপ্তাহের ক্রিকেটযুদ্ধের ফয়সালা মেলবোর্নে