এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত সংখ্যা কোনটি? উত্তরের আগে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, হঠাৎ সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা কেন! প্রশ্ন জাগাটা খুব স্বাভাবিক। আবার স্বাভাবিকভাবেই বলতে হচ্ছে, ক্রিকেটে সংখ্যার বাইরে আছেই বা কি? সংখ্যা-ই দল কিংবা ব্যক্তির সফলতার মাপকাঠি।
হ্যাঁ, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে পর পর দুটো ম্যাচ জিতে। আর তাতেই বেড়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পরিধিও। সিরিজ যখন জিতেছি, তাহলে সেটা ৩-০ তে হবে না কেন? এরকম একটা চাহিদা যেন সবার! পাকিস্তানকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করেই যেন সবাই সিরিজ জয়ের উৎসবে মেতে উঠতে চান। এটাই এখন ক্রিকেটার থেকে টিম ম্যানেজমেন্ট, বোর্ডকর্তা থেকে সাধারণ মানুষ সবার চাওয়া। তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডের আগের দিন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন যেমন বলেই ফেললেন ;‘ না, হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না! পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের দলটা অনেক অভিজ্ঞ। পরিণত। প্রতিভাবান। এবং সবচেয়ে বড় কথা এই দলটার মধ্যে জয়ের খিদে অনেক বেশি। আর আমরা সবাই জানি, ৩-০তে জিতলে র্যাংকিং-এ আমরা কোথায় যাবো। ৩-০ আর ২-১ এর মাঝখানে অনেক পার্থক্য এটা এই দলের প্রত্যেকটা ক্রিকেটার ভাল করেই জানে। ’
যে দলটা পাকিস্তানকে পর পর দুটো ম্যাচে হারালো তৃতীয় ম্যাচ জেতার দায়িত্বটা সেই দলটার উপর-ই রাখার পক্ষে বাংলাদেশ ম্যানেজার সুজন: ‘উইনিং কম্বিনেশন ভাঙার কোনো কারণ আপাতত খুঁজে পাচ্ছি না। ’
পাকিস্তানের বিপক্ষে এক, দুই, তিন—এই তিন তিনটা জয়ের সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে আছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ষোল বছর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ে তিনিই ছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। পরের দুটো ম্যাচে তিনি ম্যানেজার। তিনটা জয়কে কাটা-ছেঁড়া করে দেখার জন্য সুজনের চেয়ে ভাল অভিজ্ঞতা আর কার আছে? সেই সুজনও মানছেন বাংলাদেশ পাকিস্তানের প্রথম যে দলটাকে হারিয়েছিল সেটা আজহার আলীর এই দলের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে থাকবে। আবার আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সেই বাংলাদেশ দলের চেয়ে মাশরাফি বিন মতুর্জার এই দলটা অভিজ্ঞতা, স্কিল এবং পেশাদারিত্বে অনেক এগিয়ে থাকবে। কারণ, গত ষোল বছরে একটু একটু করে হলেও এগিয়েছে এদেশের ক্রিকেট। বাংলাদেশ যে এগিয়েছে সেটা পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝানোও খুব সহজ। তবে বাংলাদেশের এই এগিয়ে চলার কথা তুলে ধরলেন সুজন অন্যভাবে: ‘ আগে কি আমরা ভাবতে পারতাম বাংলাদেশ দল তিনজন পেস বোলার নিয়ে ঢাকার মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে নামবে! কিন্তু এখন দেখেন, অস্ট্রেলিয়ায় আমরা তিনজন পেসার নিয়ে খেলে এসেছি। এখানেও সেই তিন পেসার নিয়ে কম্বিনেশন তৈরি করা হচ্ছে। কারণ, রুবেল, তাসকিন, মাশরাফির মতো বোলার আমাদের আছে। প্রতিপক্ষের তিন ফাস্ট বোলার নিয়েও এখন আমাদের তেমন কোনো ভাবনা নেই। কারণ, ওদের সামাল দেয়ার মতো ব্যাটসম্যান আমাদের আছে। তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, সৌম্যরা ভাল ব্যাট করছে। ’
প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়েই কথাগুলো বলে গেলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজরা।
তবে টানা দুটো ম্যাচ জয়ের পর বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসের পারদটা কোথায় পৌঁছেছে সেটা ভালভাবে টের পাওয়া গেলো দলের সহকারী কোচ রোহান কালপাগের কথায়। ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে মিডিয়ার সামনে হাজির হয়েছিলেন এই শ্রীলংকান। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল: ‘বাংলাদেশ ভাল ক্রিকেট খেলছে সন্দেহ নেই। কিন্তু আরো ভাল ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে হলে কোন জায়গাটায় উন্নতি করা প্রয়োজন?’
ভদ্রলোক হাসতে হাসতে বললেন, ;‘ এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিৎ পাকিস্তানের!’ পরে অবশ্য খোলসা করেই বললেন, ‘সব জায়গায় উন্নতি করার সুযোগ আছে। তবে আমরা এখন ৩-০ ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কারণ দেখছি না। ’
৩-০ যদি হয় বাংলাদেশ দলের টার্গেট, তাহলে টানা তিনটা সেঞ্চুরির কথা কেন ভাববেন না তামিম ইকবাল। এবং সেটা যদি বুধবারের ম্যাচে হয়েই যায়, তাহলে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা তিনটা সেঞ্চুরির নজির গড়বেন এই বাঁহাতি। শাহরিয়ার নাফিস, মাহমুদউল্লাহ পারেননি। দুইয়ে থামতে হয়েছিল তাদের। তামিম কি ‘দুই’কে ‘তিন’ করতে পারবেন? ‘তিন’- বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত ও কাঙ্ক্ষিত সংখ্যাই বটে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
জেএম