ঢাকা: ক্রিকেটীয় ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ টেস্টের কোনো সুযোগ আছে কি? হয়তো নেই। থাকলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ডিএনএ টেস্ট করানো হলে সেই রিপোর্ট দেখে হয়তো চমকে যেতো ক্রিকেট বিশ্ব।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ডিঅক্সি রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড-ডিএনএ-তে যা ডিকটেড করছে তাহচ্ছে ‘আগ্রাসন’, ‘আগ্রাসন’ এবং ‘আগ্রাসন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানে নাকি ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসি ব্যাটিং। যদি তাই হয়- তাহলে ২০ ওভার ব্যাট করে পাকিস্তানের স্কোর ১৪০ হবে কেন? হবে, কারণ-আগ্রাসি ক্রিকেটটা যে খেলছে বাংলাদেশ। টাইগারদের আগ্রাসি বোলিংয়ের সামনেই শেষ পাকিস্তানের ব্যাটিং। আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের নমুনাকে বাংলাদেশ কোন স্তরে নিয়ে গেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজে সেটা বোঝার জন্য একটা উদাহরণই যথেষ্ট।
বাংলাদেশ দলের ক্যাপ মাথায় দিয়ে প্রথম মাঠে নামা মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। আর সাতক্ষীরার সেই তরুণ বাঁহাতি পেসার তার প্রথম স্পেলে দুই ওভারে রান দিলেন মাত্র ৫। উইকেটে কিন্তু ছিলেন পাকিস্তানের বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদ আর মুকতার হোসেন।
ম্যাচ শেষে তার বোলিং ফিগার ৪-০-২০-২। অভিষেকেই মোস্তাফিজ যার উইকেট নিলেন তার নাম শহীদ আফ্রিদি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শুরু হওয়ার আগেই যিনি ওয়ানডে ক্রিকেটকেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বানিয়ে ফেলেছিলেন। আর সাকিব আল হাসান ৪ ওভারে দিলেন মাত্র ১৭ রান।
বাংলাদেশ দলের পেসার আর স্পিনারা যে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের ‘খাদ্য’ বানিয়ে ফেলেছিলেন- সেটা বুঝাতে আর কোনো শব্দ খরচ করার দরকার হয় কি? আগ্রাসি ক্রিকেটের এটা যদি একটা নমুনা হয়, তাহলে আর একটা নমুনা ২২ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে বাংলাদেশের ম্যাচ জিতে যাওয়া।
ব্যাটিংয়ের সেই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে তামিম। হাফিজের করা প্রথম ওভারেই তুলে নিলেন ১৪ রান। শুরুটা যেমন শেষটাও করলেন সেভাবেই। সৌজন্যে সাকিব আল-হাসান আর সাব্বির রুম্মন। অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেটে ১০৫ রান করেন তারা।
সাঈদ আজমলকে লং অন দিয়ে সাকিব বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় আট বছরের অপেক্ষার অবসান হলো বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ পেলো প্রথম জয় এবং সেটা সাত ম্যাচ খেলার পর।
২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নাইরোবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের যে দলটা খেলেছিল, সেই দলের চার সদস্য আছেন এই দলে মাশরাফি-মুশফিক-সাকিব ও তামিম।
প্রায় আট বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ী দলের সদস্য হতে পারলেন তারা। আর উল্টো দিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো পরাজিত দলের সদস্য হয়ে থাকলেন শহীদ আফ্রিদি।
তাহলে কি অভিজ্ঞতাই জয় এনে দিলো বাংলাদেশকে? ‘অভিজ্ঞতা! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা কোনো কাজে লাগে বলে মনে হয় না। ’
ম্যাচটা জিতে এসেই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেই ফেললেন এ কথা।
বাংলাদেশ অধিনায়কের কথাটাই অনেক বেশি সত্যি মনে হলো। কারণ মোস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রুম্মন কিংবা তাসকিন আহমেদ-রা তো বাংলাদেশ দলে তারুণ্যের পতাকাকেই উড়িয়ে যাচ্ছেন। খুব অভিজ্ঞতা কি আছে তাদের? কিন্তু আছে আগ্রাসি মনোভাব। আক্রমণাত্মক ব্র্যান্ডের ক্রিকেট-ই খেলছেন তারা। তাই ম্যান অফ দ্য ম্যাচের দাবিদারও দুই তরুণ।
৩২ বলে অপরাজিত ৫১ করা সাব্বির আর ২০ রানে ২ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কারটা উঠলো সাব্বিরের হাতে। তারপরও বাংলাদেশ অধিনায়কতো বলেই ফেললেন-‘পুরস্কারটা মোস্তাফিজ পেলেও পেতে পারতো। ’ আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের স্বাস্থ্যকর এক লড়াই এখানেও।
ঢাকার মাঠে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিন পেসার নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। এটাও বাংলাদেশ ক্রিকেটে অন্য কিছু ডিকটেড করছে। মনোভাবটা এমন যে- ‘খুনে মেজাজের ক্রিকেট খেলো এবং প্রতিপক্ষকে শেষ করে দাও। ’ পাকিস্তানকে ওয়ানডে ক্রিকেটে ‘সাদাধোলাই’ দিয়ে বর্ণহীন করে ফেলার পর টি-টোয়েন্টিতেও বিধ্বস্ত করলো বাংলাদেশ। সেটা অনেক দাপটের সঙ্গেই।
ম্যাচটা দেখে কখনও মনে হয়নি এটা সেই পাকিস্তান যারা প্রথম টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে টাইব্রেকারে হেরেছিল ফাইনালে। আবার দ্বিতীয় আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাহলে কি ক্ষয়িষ্ণু শক্তির এক পাকিস্তানকে পেয়েছিল বাংলাদেশ?
এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন পাকিস্তানের আম-জনতা থেকে সে দেশের পার্লামেন্ট সদস্যরা পর্যন্ত। সে প্রশ্নের জবাব তারা কি খুঁজে পাচ্ছেন কিংবা পাবেন সেটা তাদের ব্যাপার।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সব জায়গাতেই ক্ষোভের আগুন। কিন্তু মাঠে আগুন ঝরালো যে দলটা, তার নাম বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে কি আগে কখনও দেখেছেন কেউ? সত্যাশ্রয়ী উত্তর হচ্ছে ‘না’।
যদি কেউ অন্য কিছু বলতে চান-তাহলে তাকে ‘লাই ডিটেকটিভ’ মেশিনের সামনে দাঁড় করানো উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৫
টিআই