খুলনা থেকে: গেলো দিন দুয়েকে বার কয়েক কেঁপে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশ। সেই কাঁপুনির উৎসস্থল ছিল হিমালয়কন্যা নেপাল।
কিন্তু পরিসংখ্যান যা বলছে, তাতে কেবল জয় নয়, ড্র-ও হতে পারে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সাফল্য। যদিও বাংলাদেশ অধিনায়ক এবং কোচ দু’জনেই ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সোজাসাপ্টা একটা কথা বলে দিলেন, তাঁরা জয়ের কথাই ভাবছেন। ভাবতেই পারেন। কারণ, ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পর টি-টোয়েন্টি ম্যাচটাও যে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ!
‘স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। ‘ টেস্ট জিততে হলে ২০টা উইকেট নিতে হবে। আমাদের বোলারদের সে ক্ষমতা আছে। ব্যাটসম্যানরা ভালো ফর্মে আছেন। যে সুযোগগুলো আসবে তা যদি ফিল্ডররা কাজে লাগাতে পারেন, আর সব মিলিয়ে পাঁচটা দিন ভাল খেলতে পারলে আমরা ম্যাচ জিততে পারবো। এবং জেতার কথাই ভাবছি। ’- বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
কোচ হাতুরুসিংহের গলাটা আরো চড়া জয়ের ব্যাপারে। ‘ জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না। ভাবার কোনো কারণও দেখছি না। ’ বিশ্বকাপের পর দল নির্বাচন নিয়ে যার মুখে খানিকটা অসন্তোষের সুর ছিল সেই হাতুরুসিংহে অবশ্য টেস্ট দল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন , ‘আমি খুশি যে দলটা দেয়া হয়েছে। দলে যারা ফিরেছেন তারা পারফর্ম করেই এসেছেন। নতুন মুখ যারা তারা তাঁদের সামর্থ্য দিয়ে দলে জয়গা পেয়েছেন। ’
তারপরও প্রশ্ন, সত্যিই এই বাংলাদেশ দলটার সামর্থ্য আছে কিনা পাকিস্তানের মতো টেস্ট দলকে হারানোর! ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে যে প্রবল আত্মবিশ্বাস সঞ্চারিত হয়েছে দলটার মধ্যে সেই বিশ্বাস থেকেই উত্তর দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক: ‘ষোল বছর তো আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেও জিততে পারিনি। এবার পেরেছি। তাহলে টেস্টে জয়ের কথা কেন ভাববো না?’
কিন্তু টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর গত পনের বছরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮টা টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানে জয় দূরে থাক, একটা ম্যাচ ড্রও করতে পারেনি তারা। আট টেস্টের চারটাতেই হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। এর মধ্যে নিজেদের মাটিতে এ পর্যন্ত খেলা চার ম্যাচের তিনটিতেই হার ইনিংসের ব্যবধানে। সে তুলনায় পাকিস্তানের মাটিতে মুলতানে ২০০১ সালে প্রথম টেস্টটা বাদ দিলে বাকিগুলো তুলনামূলক ভাল খেলেছিল বাংলাদেশ। আর টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দু:খের নামও সেই ‘মুলতান টেস্ট’! ২০০৩ সালে মুলতানে জয়ের সুবাস পেতে পেতে শেষ পর্যন্ত সেটা বিষবাষ্প হয়ে প্রবেশ করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফুসফুসে! সৌজন্যে বির্তকিত আম্পায়ারিং আর রশীদ লতিফের ক্রিকেটীয় অসততা! তা নাহলে এক উইকেটে হারের দু:খ নিয়ে ফিরতে হতো না হয়তো বাংলাদেশকে। আজ হয়তো লিখতেও হতো না ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে এখনো টেস্টে জয়শূন্য বাংলাদেশ’!
জয়হীন বাংলাদেশ যে এবার জয়ের কথা ভাবছে তাঁর প্রথম কারণ যদি হয় ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, তাহলে আর একটা কারণ অবশ্যই পাকিস্তান দলের খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যাওয়া। যদিও টেস্টে পাকিস্তান খারাপ দল সেটা বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ দলের কোচ কিংবা অধিনায়ক কেউ বলেনওনি। বরং কোচ উল্টো বলেছেন, ‘পাকিস্তান যথেষ্ট শক্তিশালী এবং অভিজ্ঞ দল। তারা সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। ’ ওয়ানডে দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সংখ্যা কম ছিল। কিন্তু মিসবাহ এবং ইউনিস খানের মতো পোড়খাওয়া ক্রিকেটার টেস্ট দলে আছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে হিসেবে নিতেই হচ্ছে।
উল্টো দিকে টেস্টে বাংলাদেশ দলের বোলিং অ্যাটাকটা খুব বেশি অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ তা বলা যাচ্ছে না। নতুন বলে আক্রমণের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে রুবেল হোসেনকে। সঙ্গে পেতে পারেন তিনি মোহাম্মদ শহীদকে। এই টেস্টে অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা তার অনেক বেশি। স্পিন অ্যাটাকে মূল ভরসা সেই সাকিব আল হাসান। যদিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর আর লম্বা ইনিংসের ম্যাচ খেলেননি সাকিব। তাইজুল আর লিখন হয়তো তাঁর সঙ্গী হবেন। বাংলাদেশ দলের স্পিনে বৈচিত্র্য থাকছে; কিন্তু তা কতোটা কার্যকর হবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
তবে খুলনা টেস্টের গতি-প্রকৃতি অনেকখানি নির্ভর করছে প্রথম দিনের প্রথম সেশনের উপর। অন্তত বাংলাদেশ কোচ এবং অধিনায়কের ধারণা তেমনই। তাহলে টস কি ম্যাচে বড় ভুমিকা রাখতে যাচ্ছে? হয়তো বা। টস করার কয়েনটা কাঁপতে কাঁপতে থেমে গিয়ে যার মুখে হাসি ছড়াবে তিনি হয়তো আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নেবেন। কিন্তু দুই দলের অধিনায়কই ভালো করে জানেন, ম্যাচ জিততে হলে প্রতিপক্ষের ২০টা উইকেট নিতে হবে। পারবেন তো বাংলাদেশের বোলাররা? পারলে পনের বছরের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষারও শেষ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম