ঢাকা: ক্রিকেট-ভক্তদের কাছে এখন পরিচিত এক নাম মুস্তাফিজুর রহমান। টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই চোখ ধাঁধানো সুইংয়ে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের ভড়কে দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে স্বপ্নীল অভিষেক হয়েছে মাত্র উনিশ বছর বয়সী এই বাঁহাতি পেসারের।
বাংলানিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসেছে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের ছেলে মুস্তাফিজের উঠে আসার গল্প। পাঠকদের জন্য নিচে তা তুলে ধরা হলোঃ
বাংলানিউজ: ক্রিকেটে আপনার শুরুটা কিভাবে হয়?
মুস্তাফিজ: ২০১০ সালে টেপ-টেনিস দিয়ে খেলা শুরু করি। গ্রামে বড় ভাইরা তখন ক্রিকেট খেলতো। খেলতো বলতে, গ্রামে যেগুলো হয় আর কি! আমিও ওদের সঙ্গে মাঠে যেতাম। আমার ক্রিকেট খুব ভালো লাগতো। একবার আমাদের স্কুল মাঠে টুর্নামেন্ট চলছিল। আমিও ওখানে খেললাম। সাতক্ষীরার কিছু বড় ভাইয়েরা ছিল। তারা বলল, তুই তো ভালো বোলিং করিস। এইজ গ্রুপের খেলা হলে তোকে ডাকব, তোর ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসবি।
বাংলানিউজ: এরপর?
মুস্তাফিজ: মিলন ভাই ছিলেন, তিনি ডাকলেন। আমি জেলা পর্যায়ে খেলার জন্য তখণ সাতক্ষীরা আসি। তেঁতুলিয়া থেকে সাতক্ষীরার দূরত্ব ৪০ কিলো:। শীতের সময় সাতটায় প্র্যাকটিস হতো, ভোর পাঁচটার সময় ঘুম থেকে উঠতাম। আমি ঘুম থেকে উঠে রেডি হতে হতে দেখতাম আম্মার রান্না-বান্না শেষ। আমার সেজো ভাই (মোখলেসুর রহমান) বাইক চালিয়ে প্রতিদিন আমাকে নিয়ে আসতো। সাতক্ষীরাও আমি ভালোমতো চিনতাম না। ভাইয়া নিয়ে আসতো আমাকে। সে অনেক কষ্ট করেছে আমার জন্য।
বাংলানিউজ: ঢাকায় খেলতে কখন আসা হয়?
মুস্তাফিজ: জেলা পর্যায় থেকে তখন আমি বিভাগীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৮ দলে খেলি। তখন সালাউদ্দিন স্যার (শেখ সালাউদ্দিন) একদিন ন্যাশনাল টিমের ইনডোর প্র্যাকটিসের বোলিং ভিডিও দেখাচ্ছিলেন। তখন মনে হতো, ন্যাশনাল টিমের ওই জায়গায় আমি কবে প্র্যাকটিস করব। ওই বছরই বোর্ড থেকে আমাকে ডাকলো। তপু স্যার (স্থানীয় কোচ) বললো, ‘তুই ন্যাশনাল টিমের সঙ্গে প্র্যাকটিস করবি, ক্যাম্প হবে। ’ ঢাকা চলে আসলাম বাড়ি (সাতক্ষীরা) থেকে।
প্রথম ন্যাশনাল টিমের প্লেয়ার দেখা ছিল আমার জন্য অনেক খুশির একটি দিন। নেটে বল করতাম। সবাই অনেক প্রশংসা করতো।
বাংলানিউজ: জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবর কিভাবে জানলেন?
মুস্তাফিজ: ফতুল্লায় আমি বিসিএল খেলছিলাম। চারদিনের ম্যাচের দ্বিতীয় দিন রাতে আমাকে বোর্ড থেকে ফোন করে। আমি ঢাকায় চলে আসি। বাবা-মার সঙ্গে কথা হয়, ভাইয়াদের সাথে কথা বলি। ।
বাংলানিউজ: ওনারা খেলা দেখতে আসতে চায়নি?
মুস্তাফিজ: আমার ভাই খুলনায় থাকে। ভাইয়া খুলনা থেকে আসতে চাইছিলেন। আমাকে খেলাবে কি না, আমি তো তখন শিউর না। ভাইয়া বলল, তাও আসি যদি খেলায়। তারপর আমি বলেছিলাম, আমার কাছে টিকিট আছে, ঢাকায় আসেন। আমার মামাও খেলা দেখতে মাঠে এসেছিলেন।
বাংলানিউজ: সন্ধ্যায় ম্যাচ ছিল, কখন জানলেন আপনি খেলছেন?
মুস্তাফিজ: টিম লিস্ট দেওয়ার আগে। আমাকে কোচ বললো, তারপর মাশরাফি ভাই বললো।
বাংলানিউজ: মাঠে নামার পর কেমন লাগছিল?
মুস্তাফিজ: খেলা শুরুর আগে যখন ওয়ার্ম-আপ করতে প্রথম মাঠে নামব, তখন ভয় পাচ্ছিলাম। আমি, রাজু ভাই (আবুল হাসান রাজু), লিটন কুমার দাশ আর কে যেন ছিল আমার কাছাকাছি। রাজু ভাইকে বললাম, ভাই আমার ভয় লাগছে, অনেক দর্শক আছে মাঠে। আপনি আমার কাছে থাকেন। তবে খেলা শুরু হওয়ার পর আর ভয় পাই নাই। দর্শক আনন্দ করছে, আমারও ভালো লাগছিল।
বাংলানিউজ: আপনার দ্বিতীয় ওভারটি দুর্দান্ত ছিল। আপনার আউট-সুইংঙ্গারে খেলতেই পারছিল না আহমেদ শেহজাদ। তখন কি আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল?
মুস্তাফিজ: চারটা বল করার পর মাশরাফি ভাইকে বললাম, ভাই চারটা বল ডট হয়েছে। শেষ দুইটা বল কী করবো? ভাই বললো, যেভাবে করতেছিস ওই ভাবেই কর।
বাংলানিউজ: আফ্রিদি আউট হওয়ার আগে বড় একটা ছক্কা মেরে দিয়েছিল, তখন কী আবার ভয় লাগছিল?
মুস্তাফিজ: আফ্রিদি কিন্তু ছয় মারার পরের বলেই আউট হয়েছে। ও তো সব বলই মারে। আল্লাহর কাছে চাইছিলাম, যদি আফ্রিদির উইকেটটা পেতাম। ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট আফ্রিদির!
বাংলানিউজ: আপনি আফ্রিদির ভক্ত নাকি?
মুস্তাফিজ: ওনার ভক্ত তো সবাই (হাসি)।
বাংলানিউজ: আফ্রিদি সংবাদ সম্মেলনে আপনার অনেক প্রশংসা করেছেন। মাশরাফি ভাইও করেছেন। জানেন?
মুস্তাফিজ: টিভি দেখা বা পত্রিকা পড়ার সময়-ই পাচ্ছি না। দেখেন, খালি ফোন আসছে (ফোন রিসিভ করতে করতে)। দুই দিন ধরে ফোন কল রিসিভ করতে করতে সময় যাচ্ছে।
বাংলানিউজ: কারা এতো ফোন করছে?
মুস্তাফিজ: সাংবাদিক ভাইরা, বাবা-মা, ভাইয়েরা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা। আমার ফোনে যাদের নাম্বার আছে সবাই আমাকে কম-বেশি ফোন দিয়েছে (হাসি)।
বাংলানিউজ: ঢাকা আসলে থাকেন কোথায়?
মুস্তাফিজ: মিরপুরে মামার বাসা আছে। ওখানে থাকি, একাডেমিতে থাকি। বেশির ভাগ সময়-ই তো খেলা নিয়ে থাকি।
বাংলানিউজ: এখন টার্গেট নিশ্চয়ই ওয়ানডে টিমে ঢোকা?
মুস্তাফিজ: যদি ভালো খেলি সবখানেই জায়গা হবে।
বাংলানিউজ: আপনার আগে জাতীয় দলে বাঁহাতি পেসার সৈয়দ রাসেল ছিলেন। অনেক দিন খেলেছেন। জানেন?
মুস্তাফিজ: রাসেল ভাইয়ের সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। ন্যাশনাল লিগে এক সঙ্গে খেলেছি।
বাংলানিউজ: নিজেকে পরিণত করার জন্য কী করবেন?
মুস্তাফিজ: ট্রেনার যে কাজগুলো দেখিয়ে দিবে সব করবো। আজ একাডেমিতে জিম করেছি।
সৈয়দ রাসেলের পর আবার একজন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ১৯ বছর বয়সী উঠতি এ গতি তারকার অভিষেক হয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে।
৫টি লিস্ট-এ ম্যাচ খেলা মুস্তাফিজুর ৩.৪৫ ইকোনমি রেটে ১২টি উইকেট দখল করেছেন। এছাড়া ৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ থেকে তার ঝুলিতে রয়েছে ২৩টি উইকেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, ২৭ এপ্রিল ২০১৫
এসকে/এমআর