ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সাকিবের কথাই ক্রিকেটীয় বাস্তবতা

অঘোর মন্ডল, স্পেশালিস্ট স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৫
সাকিবের কথাই ক্রিকেটীয় বাস্তবতা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: হলভর্তি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার আগে ক্রিকেট ঈশ্বরের সঙ্গেও কি একদফা একাকী কথা বলে নিয়েছিলেন সাকিব আল- হাসান! যেমনটা বড় বড় তারকারা করে থাকেন। তা না হলে  এরকম সততার সঙ্গে সহজ-সরল স্বীকারোক্তি কীভাবে দেবেন তিনি!

এক.
আমরা খুব ‘ভাগ্যবান’ প্রথম দিন সকাল বেলায় আমাদের ব্যাট করতে হয়নি।

নিজেদের ভাগ্যবান ভাবার কারণটাও ব্যাখ্যা করে গেলেন বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। ‘প্রথম দিনের প্রথম সেশনটা কঠিন হতো আমাদের জন্য। উইকেট থেকে ওদের তিন পেসার বাড়তি কিছু পেতেন। ’ পাকিস্তানের পেস অ্যাটাক নিয়ে খানিকটা ভয়ে ছিলো বাংলাদেশ, সেটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। টস জিতে কেন আগে ফিল্ডিং নিলেন মুশফিকুর রহিম- সেই প্রশ্নের উত্তরটা সাকিবকেও দিতে হলো যে!

দুই.
তৃতীয় দিন শেষে মিরপুর টেস্টের সম্ভাব্য ফলাফলÑ ম্যাচটা আমরা হারতে যাচ্ছি। ‘যদি’ ‘কিন্তু’ মেশানো স্বপ্নের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলেন না সাকিব।   বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে তাই তিনি বলতে পারেন, ‘দু’দিন ব্যাট করতে পারলে ম্যাচ বাঁচানো যেতে পারে। আর জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হবে। ’
পাঁচ শ-র বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার নজির টেস্ট ইতিহাসে নেই। সেটা জানা সাকিবের। আর যে উইকেটে ইয়াসির শাহর মতো লেগ স্পিনার টার্ন আর বাউন্স দুটোই পাচ্ছেন, সেখানে দু’দিন টিকে থাকার চেয়ে রান তাড়া করার কাজটা সহজ। আর সেটা যদি করতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে তো নয়া ইতিহাস গড়বে তারা। সব মিলিয়ে এই ম্যাচের সম্ভাব্য ফল বাংলাদেশ হার! সেটা মেনে নিতে আপত্তি করেননি সাকিব।

তিন.
টেস্ট সিরিজে আমার বোলিং ভালো হচ্ছে না। যে কারণে ভুগছে বাংলাদেশ। দল যে তার বোলিং সার্ভিসটা আশানুরূপ পাচ্ছে না; ব্যাট হাতে ৯১ বলে অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংস খেলে এসেই  উপলব্ধি বিশ্বসেরা  অলরাউন্ডারের।

পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ইনিংসে বল করেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সব মিলিয়ে দুই টেস্টে তার বোলিং ফিগার ৭৫ ওভার ৭ মেডেন ৩২৫ রানে ২ উইকেট!  সাকিবের নামে পাশে এই ফিগারটা ঠিক মানানসই না। তাহলে কি লম্বা দৈর্ঘ্যের ম্যাচে বোলিং প্র্যাকটিসের ঘাটতি? সেটাও মনে করেন না তিনি। তাই সোজাসাপটা বলে ফেলা;‘ আমি-তো আমার বিভাগের (খুলনা) হয়ে তেমন বল করেছি বলে মনে হয় না। টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট আছে। কিন্তু আমাদের ফার্স্টক্লাস ক্রিকেটে ক’বার পাঁচ উইকেট পেয়েছি, মনে করতে পারছি না!’

আমাদের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট সাকিবের মতো ক্রিকেটারকে কতোটুকু মোটিভেট করতে পারছে পরোক্ষভাবে সেটাও জানান দিয়ে গেলেন তিনি।

এরকম কথাবার্তা বলার পরও সাকিব আল হাসান কিন্তু ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তার কথাটা বার কয়েক মনে করিয়ে দিলেন সাংবাদিকদের। খুলনার মতো বড় একটা পার্টনারশিপ যদি টপ অর্ডারে হয়ে যায়, তাহলে ম্যাচের চেহারাটা পাল্টে যেতে পারে। কিন্তু সেটা তামিম-ইমরুলের পার্টনারশিপে হচ্ছে না সেটা নিশ্চিত করে দিয়েছেন ইয়াসির শাহ। দিনের শেষ দিকে ইমরুলকে বোল্ড করেছেন এই লেগ স্পিনার। যথেষ্ট টার্ন করেছিল বলটা সত্য। তবে ইমরুল বলটা ঠিকমতো খেলতে পারেননি এটাও সত্য। আর ওভাবে বল যে চতুর্থদিন আরো টার্ন করাবেন ইয়াসির শাহ এটাও সত্য।

তবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যনাদের চতুর্থদিন সকালের সেশনটা টিকে থাকা হবে কঠিন কাজ। সেই সত্যাটার কথাও মনে করিয়ে দিলেন সাকিব। ‘পাকিস্তানি বোলাররা অনেক সজীব অবস্থায় সকালে শুরু করবেন। ওই সেশনটা পার করতে পারলে ভালো কিছু আশা করতে পারি। তবে এটাও ঠিক এই  উইকেট খুলনার মতো ব্যাটসম্যানদের হয়ে কথা বলবে না। ’ মনে করিয়ে দিলেন সাকিব।

পার্টনারের অভাবে নিজের ইনিংসটা থেমে থাকলো ৮৯ রানে। এর জন্য আক্ষেপ  করার কিছু আছে বলে মনে করেন না সাকিব। তবে আক্ষেপের অন্যরকম একটা সুরও বাজলো তাঁর গলায়। ‘ হ্যাঁ, ইনিংসটা আরো বড় হলে দলের জন্য ভালো হতো। ’ ক্রিকেট যতোটা টিমগেম তারচেয়ে বেশি ইনডিভিজুয়াল। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে তুষ্ট থাকার দিনটাকে বাংলাদেশ পেছনে ফেলতে পেরেছে সেই বার্তাটাই কি দিয়ে গেলেন সাকিব?

তবে সাকিব আল হাসান মানলেন প্রথম ইনিংসে তার ব্যাটিং দলের অন্যদের মধ্যে একটা বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। পাকিস্তানের এই অ্যাটাকের বিপক্ষে রান করা যায়। উইকেটে থাকলে রান আসবে সেটা তিনি করে দেখালেন। এবং দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। ‘

দ্বিতীয় ইনিংসে আমাদের ব্যাটিংটা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি কম্পোজড মনে হচ্ছে আমার। ’- ড্রেসিংরুম থেকে  দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশকে দেখে সাকিবের মন্তব্য। তবে আরো ৪৮৭ রান করে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতবে, সেটা ভাবার মতো অবস্থায় বাংলাদেশ পৌঁছায়নি। তবে তৃতীয় দিন শেষে সাকিবের স্বীকারোক্তি একটা ভাবনার খোরাক-ই দিয়ে গেলো; অতি নাটকীয় কিছু না ঘটলে কিংবা কোন ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে অতি মানবীয় কোন ইনিংস না এলে এই টেস্ট বাঁচানো সম্ভব নয় বাংলাদেশের পক্ষে।

তবে মিসবাহ উল-হক বাংলাদেশকে ফলো অন না করিয়ে ইনিংস পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। এরপর  হারের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে কি বৃষ্টি? বাংলাদেশের আবাহওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসের ওপর আস্থা রাখার খুব বেশি কারণ কি আছে! আপনি আমি রাখতে চাইলেও পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট রাখতে রাজি নয়। দলের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে সে কথাটা পরিষ্কার বলে গেলেন স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ। ‘ বৃষ্টি হওয়ার কথাতো কালও ছিলো। হয়েছে! তাহলে বৃষ্টি নিয়ে ভাববো কেন? তাছাড়া ওই জায়গাটায় আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা যেটা করতে পারি সেটাই করছি।

প্রথমত দরকার ছিলো বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্য বড় একটা স্কোর। বোর্ডে ৫৪৯ রান জমা রেখেছি। হাতে এখনো দু’দিন সময় আছে। সুতরাং জয়ের কথা ভাবতেই পারি। ’

কিন্তু বাংলাদেশ কি ড্র’র কথাও ভাবতে পারছে!  ৪৮৬ রানে পিছিয়ে। হাতে ৯ উইকেট (বাস্তবে ৮ উইকেট, কারণ শাহদাত হোসেন ব্যাট করতে পারবে না)। ম্যাচের পড়ে আছে দু’দিন। সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে সাকিব যা বলেছেন  ক্রিকেটীয় যুক্তিতে সেটাকেই সঠিক বলে মনে হচ্ছে না? সাকিবকে ভুল প্রমাণের দায়িত্ব তার টিমমেটদের। আর সেটা করতে পারলে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সুখী মানুষদের তালিকায় সাকিব আল হাসানও থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।