ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সান্ত্বনার জয় পেলো পাকিস্তান

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৫
সান্ত্বনার জয় পেলো পাকিস্তান ছবি: শোয়েব মিথুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরপুর থেকে: পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে স্বপ্নের মতো খেলে শেষটা হলো পরাজয়ে। পুরো সিরিজ জুড়ে ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে দাপুটে এক বাংলাদেশকেই দেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা।

পাকিস্তানকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করে সবক’টি ওয়ানডে ও একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে জয় তুলে নেয় টাইগাররা।

কিন্তু সফলতার এই ধারাবাহিতা টেস্টে হারিয়ে যায়। প্রথম টেস্টে ব্যাকফুটে গিয়েও লড়াই করে টেস্ট ড্র করে মুশফিক বাহিনী। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে এসে অসহায়ের মতোই আত্মসমর্পণ করেন তারা।

ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে টস জিতেও বোলিং নেওয়ার খেসারতই যেন দিল বিশাল ব্যবধানের পরাজয় মেনে নিয়ে। শুধু টসেই নয়, স্কোয়াড নির্বাচনেও ছিল পরিকল্পনার অভাব। একাদশে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্পেশালিস্ট বোলারের অভাবের সুযোগ নিয়েই দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা ধসিয়ে দেয় টাইগার বাহিনীকে।

টেস্ট র‌্যাংকিংয়ে তিন নম্বরে থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে টাইগারদের পরাজয় ৩২৮ রানের। ফলে, দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ ১-০তে জিতে নিল পাকিস্তান।

ওয়ানডে সিরিজ জয় আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে নেওয়া বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজটি নিজেদের করে রাখতে পারল না। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫০ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৯ উইকেটে ২২১ রান করতেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। শাহাদাত ইনজুরির কারণে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে নামতে পারেন নি। ফলে, পাকিস্তান তাদের সফরের একমাত্র জয় নিয়ে দেশে ফিরতে পারছে।

কঠিন চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়ে যেতে চতুর্থ দিন শুরু করে টাইগার বাহিনী। ৩২ রান করে অপরাজিত থেকে চতুর্থ দিন ব্যাটিংয়ে নামেন তামিম ইকবাল। আর তামিমকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন ১৫ রান করা মুমিনুল।

চতুর্থ দিন বাঁহাতি পেসার ইমরান খানের বলে উইকেটের পেছনে সরফরাজের গ্লাভসবন্দি হয়ে বিদায় নেন তামিম। আউট হওয়ার আগে তিনি ৬৭ বলে ৭টি চারে ৪২ রান করেন। এরপর দলীয় ৯৫ রানের মাথায় ফেরেন মাহমুদুল্লাহ। ইমরান খানের বলে ইউনিস খানের তালুবন্দি হওয়ার আগে মাহমুদুল্লাহ করেন ২ রান।

সাকিবের কাছে বারবার অলরাউন্ড ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরার মুকুট হারানো মোহাম্মদ হাফিজের বলেই আউট হন দেশসেরা এ অলরাউন্ডার। হাফিজের বলে ওয়াহাব রিয়াজের তালুবন্দি হয়ে সাকিব ১৩ রান করে বিদায় নেন। আর ইয়াসির শাহর বলে বোল্ড হয়ে কোনো রান না করেই মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হন মুশফিক।

দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে সৌম্য সরকার ওয়াহাব রিয়াজের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়ার আগে করেন মাত্র এক রান। আর ইয়াসির শাহর বলে আসাদ শফিকের হাতে ধরা পড়েন মুমিনুল। আউট হওয়ার আগে মুমিনুল করেন ১০২ বলে ৯টি চারে ৬৮ রান।

মুমিনুলের বিদায়ের পর ১০ রান করে তাইজুল ইসলামও বিদায় নেন। শুভাগত হোম করেন ৩৯ রান। শেষ উইকেট জুটিতে মোহাম্মদ শহীদকে সঙ্গে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন শুভাগত। শহীদ ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে তৃতীয় দিন রানের বোঝা মাথায় নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করে টাইগাররা। ইমরুল কায়েসের একমাত্র উইকেটটি হারিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ১৪ ওভারে তোলে ৬৩ রান। সফরকারী পাকিস্তানকে হারাতে স্বাগতিকরা পিছিয়ে ছিল ৪৮৭ রান, হাতে নয় উইকেটে (ইনজুরিতে শাহাদাত)।

তিন হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করে দারুণ গতিতে এগিয়ে যান তামিম ইকবাল। ইনিংসের অষ্টম ওভারে ইমরান খানকে চার মেরে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তিন হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করেন তিনি।

৫৫০ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসের ১২তম ওভারে ইয়াসির শাহর বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন ইমরুল কায়েস। দলীয় ৪৮ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১৬ রান করে আউট হন ইমরুল।

এর আগে বাংলাদেশকে ২০৩ গুটিয়ে দিয়েও খুলনা টেস্ট পাকিস্তানকে ভয় দেখায়। গত টেস্টে প্রায় দুইদিন ব্যাটিং করে ম্যাচ ড্র করেছিল স্বাগতিকরা। তাই বাংলাদেশকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে নিজেরাই ব্যাটিংয়ে নেমে যায় সফরকারীরা। ৫৪৯ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণার আগে ৬ উইকেট হারিয়ে সফরকারীদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯৫ রান। ফলে, বাংলাদেশের জন্য টার্গেট দাঁড়ায় ৫৫০ রান।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে ২০৩ রান তোলে। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯তম অর্ধশতককে চতুর্থ শতকে রূপ দিতে পারেন নি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। টাইগারদের অষ্টম উইকেট পড়ে গেলে হাত খুলে খেলা শুরু করেন সাকিব। মোহাম্মদ শহীদ আউট হয়ে গেলে আর শাহাদাত হোসেনের অনুপস্থিতিতে সাকিবকে ৮৯ রানে অপরাজিত থাকতে হয়। ফলে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩৫৪ রানে পিছিয়ে থাকে স্বাগতিকরা।

প্রথম ইনিংসে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান ৮ উইকেট হারিয়ে ৫৫৭ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের হয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ২২৬ রান করেন আজহার আলি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪৮ রান আসে পাকিস্তানের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইউনিস খানের ব্যাট থেকে। আর আসাদ শফিক টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ শতক হাঁকিয়ে করেন ১০৭ রান।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে নয়জন বোলার বল করলেও ইনিংস সর্বোচ্চ তিন উইকেট দখল করেন তাইজুল ইসলাম। এছাড়া দুটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ শহীদ এবং শুভাগত হোম। আর দ্বিতীয় ইনিংসে মোহাম্মদ শহীদ নেন দুটি উইকেট।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, ০৯ মে ২০১৫
এমআর

** হারের পথে বাংলাদেশ
** মধ্যাহ্ন বিরতি, স্বাগতিকদের ১৩৪/৫
** স্বাগতিকদের পঞ্চম উইকেটের পতন
** সাকিবও ফিরলেন, উইকেটে মুমিনুল-মুশফিক
** চ্যালেঞ্জে হার মানলেন তামিম
** চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানিয়ে দিন শুরু টাইগারদের
** আশা-নিরাশার দোলাচলে মুশফিক বাহিনী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।