সালমা-সাকিব আল হাসানের নাম উচ্চারণ করে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে যে বক্তব্যটা দিলেন, তা যতোটা ক্রিকেটীয় তারও চেয়ে বেশি ‘কূটনৈতিক বিবৃতি’। এরকম অভিমত অনেকের।
হ্যাঁ, সত্যি। বাংলাদেশ দল এখন অন্যদের কাছ থেকে সম্মান-সমীহ আদায় করে নিচ্ছে। আবার অন্যদের প্রতি সম্মান দেখাতে কোনো কার্পণ্য তারা করে না। আর অন্যদের সম্মান দেখানো কোনোভাবে নিজের সম্ভ্রম বিকিয়ে দিয়ে নয়। ভারতীয় দল রোববার ঢাকায় পা রেখেই দুপুরে মিরপুর স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিসে নেমে পড়লো। তার আগে বাংলাদেশ দল প্র্যাকটিস করেছে ফতুল্লায়। টেস্ট দলে না থাকায় সেই প্র্যাকটিসে ছিলেন না ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু মিরপুরে তিনি হাজির। এবং ভারতীয়দের সঙ্গে তার হাসি-টাট্টা-আড্ডার কিছু দৃশ্য ক্যামেরাবন্দীও হলো। আর তা থেকে একটা জিনিস প্রমান হলো, ক্রিকেটীয় সংকীর্ণতার বন্দীদশা থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। ভারতীয় ক্রিকেট দলের টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে মাশরাফির খুনসুটি কিংবা বিরাট কোহলির সঙ্গে কুশল বিনিময়ের যে ছবিটা ধরা পড়েছে সেটাই হতে পারে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের সবচেয়ে ভাল প্রোমো। সিরিজ শুরুর আগে টেলিভিশনের পর্দায় এই সিরিজের বিজ্ঞাপনের যে ছবিটা বারবার দেখানো হচ্ছে তাতে অদৃশ্য একটা জিঘাংসার লেবেল আঁটা আছে! তবে বাস্তবতার নিরিখে এই সিরিজ বাংলাদেশের জন্য কোনোভাবেই প্রতিহিংসা কিংবা প্রতিশোধের সিরিজ হতে পারে না। তা বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচে আম্পায়ারিং নিয়ে যতো বির্তকই থাকুক না কেন। এই সিরিজটা ভারতের কাছ থেকে আরো বেশি ক্রিকেটীয় সম্ভ্রম আদায় করে নেয়ার সিরিজ।
তবে হ্যাঁ, সিরিজের কোন বল মাঠে গড়ানোর আগে বাংলাদেশ যথেষ্ট সম্মান আদায় করে নিতে পেরেছে। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ হলে ‘বিশ্রাম’-চেয়ে অনেক দরখাস্ত জমা পড়তো ভারতীয় বোর্ডে। আর বিসিসিআই কর্তারাও সেই দরখাস্তগুলো গ্রহণ এবং অনুমোদন করে বিশ্রাম বিলাসিতার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতেন। কারণ, তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় সমৃদ্ধি এতোটা ঘটেনি। তাই অন্যরা বাংলাদেশকে ওরকম খাটো করে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। ভারতীয় দলের মোড়কে দ্বিতীয় সারির একটা দলও পাঠাতেন তারা। কিন্তু সেই ছবিটা পাল্টে গেছে। পারফরম্যান্স দিয়েই বাংলাদেশ সেটা পাল্টে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে মোদিরও এক ধরনের মুগ্ধতা। সিরিজ শুরুর আগে এটাও বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের অনুপ্রেরণা।
মাঠের বাইরের ছবিটা যখন পাল্টে গেছে এবার বাইশ গজের ছবিটা বদলে দেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের। বাইরের সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির মন্ত্র ভুলে ভারত চাইবে মাঠের মধ্যে বাংলাদেশকে থেঁতলে দিতে। বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে। বাংলাদেশ চাইবে উল্টোটা। আর সেটাই খুব স্বাভাবিক। কারণ, নিজেদের ক্রিকেটীয় বিপন্নতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আর এই এগিয়ে চলার সাথে সাথে তাদের স্বপ্নের পরিধিও বেড়েছে। ভারতের বিপক্ষে জয়ের কথা এখন তারা ভাবতেই পারে। বাংলাদেশ জিততে পারে ভারতের কাছে এই বার্তাটা তারা পৌঁছে দিয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে। পাকিস্তানকে যদি ওয়ানডেতে হোয়াইট ওয়াশ করা যায় তাহলে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের কথা কেন ভাববে না বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ-ভারত সিরিজে উগ্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিজ্ঞাপনটা একটু বেশি মনে হচ্ছে ওয়ানডে ঘিরে। কারণ সেই বিশ্বকাপ ম্যাচ। কিন্তু তার আগে বাংলাদেশকে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে একমাত্র টেস্টে। ফতুল্লায় ক্রিকেটীয় কি নাটক অপেক্ষা করছে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে একটা কথা বলা যায়, টেস্টেও বাংলাদেশ তাদের নিম্মবিত্ত অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মধ্যবিত্তের কাতারে নাম লেখাতে চায়। আর ভারত অর্থ-বিত্তে ক্রিকেটবিশ্বের সবচেয়ে ধনী হতে পারে তবে ক্রিকেটীয় ঐশ্বর্য লাভের চেষ্টা তাদেরও করে যেতে হচ্ছে এখনো। নিম্মবিত্তের মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে মধ্যবিত্তের সংসার চালানোর মতো প্রতিটা মুহূর্ত যদি মেপে মেপে চলতে পারে বাংলাদেশ তাহলে ‘পরাজিত বাংলাদেশ’-র ছবিটা ফতুল্লায় দেখা না-ও যেতে পারে।
ক্রিকেট শুধু কিছু রান আর উইকেটের খেলা নয়। ক্রিকেট তো একটা আয়না; যেখানে ধরা পড়ে একটা জাতির মানসিকতাও। বাংলাদেশের মানুষের পাল্টে যাওয়া মানসিকতার প্রতিফলন কি দেখা যাবে ফতুল্লা টেস্টে?
বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৫
জেএম