ঢাকা: ক্রিকেটে এমন বিস্ময় তরুণ খুঁজে পাওয়া কঠিন। অভিষেক ম্যাচে বোলিং অ্যাকশন দিয়ে সেটাই প্রমাণ করেছেন ১৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
গত বছরের ১৭ জুন বাংলাদেশের প্রথম আর বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসের নবম বোলার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকের প্রথম ম্যাচেই ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েছিলেন তাসকিন আহমেদ।
এবার সাতক্ষীরার ছেলে মুস্তাফিজ একই ঘটনা ঘটিয়ে গোটা দেশের মানুষের প্রাণ ভ্রমরা হয়ে উঠেছেন। মুস্তাফিজকে উদ্দেশ্য করে ‘ম্যারি মি’ প্ল্যাকার্ড লিখে উত্তেজনার আমেজে একটু বেশিই জল ঢেলেছেন উৎসাহী কিছু প্রমিলা দর্শক।
সব মিলিয়ে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকারদের দেওয়া বিশেষণ বেশ নজর কাড়ার মতো। পত্রিকায় পাতাও বেশ রোমাঞ্চিত মুস্তাফিজের সংবাদ পরিবেশনায়। আর ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টাইগার ভক্তদের মধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল ঝড়। ক্রিকেট মোড়ল হিসেবে খ্যাত ভারত, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার এটাই যেন উপযুক্ত সময়।
ভারতীয় মিডিয়া বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নানাভাবে অবজ্ঞা করে বলে বাংলাদেশি সমর্থকদের দাবি। এমনকি ‘মওকা-মওকা’ এবং ‘শিশু’ হিসেবে আখ্যায়িত করে অপমানও করা হয়েছে। দাম্ভিকতার ধারাবাহিকতায় আজ পর্যন্ত বাংলাদেশকে কোনো সিরিজ খেলার জন্য আমন্ত্রণও জানায়নি ভারত। নিয়তির নির্মম পরিহাসে তাদের জ্বালিয়ে দেওয়া আগুনে আজ তারাই পুড়ছেন বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
কয়েক মাস আগেও বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিল দেশটির ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকেই। আর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ার আলিম দার এবং ইয়ান গোল্ডের কীর্তি তো সবারই জানা। সেটার শোধই যেন মাঠের মধ্যে নিচ্ছে টাইগাররা।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওডিআই ম্যাচে ছয় উইকেটে জয়লাভ করে সিরিজ জয় নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুসফিক-উস সালেহীন উজ্জ্বল বলেন, আমরা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছি তাতে কী হয়েছে? এবার ওদের হারিয়ে আমরা বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার আনন্দ পেয়েছি। এখন ‘বাংলাওয়াশ’ করতে পারলেই আমরা বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ পাবো।
বাংলাদেশের কাছে ভারতের অসহায় পরাজয় বিষয়ে ক্রিকেট ক্রেজি চাকরি প্রত্যাশী মেহেরুল আমীন বলেন, ভারত তো এখন কেনিয়ার চেয়েও দুর্বল দল হয়ে গেছে।
ভারতের কট্টর সমর্থক সাভারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাকারিয়া জাহিদ বলেন, বাংলাদেশ জিতুক এটা চাই। তাই বলে এরকমভাবে ভারত হারবে সেটা কল্পনাতেও ছিল না।
রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের একটি ফ্ল্যাটে পঞ্চম তলায় বাসাভাড়া নিয়ে থাকেন লেলিন মাহমুদ, শামীম আহমেদ, সোহেল, রনী, সুমন, ইফতেখার, মোসাদ্দেক, রেফা, জাহিদ, মাহতাবসহ ১২ জন তরুণ। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী এবং চাকরি প্রত্যাশী রয়েছেন।
যে কোনো খেলা জমজমাট আয়োজন করে টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগ করেন তারা। আর সে খেলা যদি বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো খেলা হয়-সেদিন চাল ভাজা, মুড়ি, চানাচুরসহ থাকে হরেক পদের খাবার। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত ম্যাচটি উপভোগ করেছেন তারা।
প্রথম ম্যাচে মহেন্দ্র সিং ধোনি রান নেওয়ার সময় ক্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মুস্তাফিজকে উদ্দেশ্যমূলক ধাক্কা দেন। এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক টাইগার ভক্ত বলেন, এক ধাক্কার’ই এত ঝাল! আরও একটা ম্যাচ তো বাকিই আছে।
ওই ম্যাচে ধোনির ধাক্কার বিষয়টিকে স্রেফ দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন দুই ম্যাচে ১১ উইকেট শিকারি মুস্তাফিজ। তিনি ওসব মনে রাখতে চান না। তিনি যেন শুধু জ্বলতে চান আর জ্বালাতে চান।
ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় এবং শেষ ম্যাচে মুস্তাফিজ নতুন কী চমক সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন, সেটা দেখার প্রতিক্ষায় এখন দেশ-বিদেশের কোটি-কোটি টাইগার ভক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৫
টিআই/এসইউ