ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বাংলাদেশের প্রাপ্তি ‘আত্মবিশ্বাস’ | অঘোর মন্ডল

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৫
বাংলাদেশের প্রাপ্তি ‘আত্মবিশ্বাস’ | অঘোর মন্ডল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ‘বাংলাওয়াশ’ এড়ালো ভারত। তাতেই স্বস্তি তাদের।

কিন্তু সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে আতঙ্কের সাইরেনের মতো যেভাবে ‘বাংলাওয়াশ’ শব্দটি ঘুরপাক খাচ্ছিলো ভারতীয় শিবিরে, তাতে অনেক বেশি বিপন্ন মনে হয়েছিল তাদের!

এতটা বিপন্ন সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে দেখা যায়নি। শেষ ম্যাচটি জিতে সেই বিপন্নতা কিছুটা কাটালেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে এ সিরিজের পর ক্রিকেট বিশ্বে এখন যেন আতঙ্কের একটি নাম- মোস্তাফিজ!

মাত্র ১৯ বছর বয়সী বাঁহাতি এ বাংলাদেশি বোলারের বোলিংয়ের ফুটেজ এখন দক্ষিণ আফ্রিকা টিমের কম্পিউটার অ্যানালিস্টের ল্যাপটপে কাটাছেঁড়া হচ্ছে, তা জোর দিয়েই বলা যায়। কারণ, ক’দিন পরেই বাংলাদেশের সামনে পড়বে প্রোটিয়ারা। আর বাংলাদেশের সামনে পড়া মানেই এখন মোস্তাফিজের বিষাক্ত ছোবলে নীল হওয়ার আশঙ্কা। গতি দানবদের গতির সঙ্গে ইনসুইংমেশানো ইর্য়কার, পুরোনো বলে রিভার্স সুইং, শর্ট পিচ ভেলিভারি এসব ছাপিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে এখন আলোচনার বিষয় মোস্তাফিজের স্লোয়ার!

১৯ বছরের এ বাঁহাতির স্লোয়ারের রহস্যভেদ করতে পারলো না ভারতীয় ব্যাটিং! তার স্লোয়ার সামলাতে কোহলি, রোহিত, ধোনি, রায়নারা আক্রমণ-আগ্রাসন ভুলে সিঙ্গেলস নেওয়ার পথেই হাঁটলেন। তাতে কিছু সময় কেউ কেউ টিকলেন, কেউ কেউ পারলেন না!

কিন্তু বাংলাদেশ পারলো। ক্রিকেট বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পারলো, পাল্টে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। পাল্টে যাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেট দর্শন অনেকটা অস্ট্রেলিয়ান ঘরনার। হয় মারো, না হয় মরো। বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে মারার পথটাকে বেছে নিয়েছিল। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দু’টো ম্যাচে ভারতকে একেবারে ‘দাঁড়িয়ে রেখে’ মারলো। তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে সাহস দেখালো ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর। ভারতীয়দের ৩১৭ রান তাড়া করতে নেমে তামিমের উইকেট হারানোর পরও কিন্তু বাংলাদেশ স্কোরবোর্ড সচল রাখলো দ্রুতগতিতে। মোস্তাফিজের সাতক্ষীরার আরেক বাঁহাতি সৌম্য সরকার যে ব্যাটিং করলেন গোটা সিরিজ জুড়ে, তাকে ভয়ডরহীন ব্যাটিং ছাড়া অন্যকিছু বলা যাচ্ছে না। স্কোরবোর্ডে সৌম্যর নামের পাশে মাঝারি মানের কিছু স্কোর হয়তো দেখা যাবে, তবে প্রত্যেকটি ম্যাচে অদৃশ্য একটি স্কোরবোর্ডও থাকে। সেই জায়গায় সৌম্য সরকাররা যা জমা রাখলেন, সেটিই হচ্ছে এ সিরিজের ব্যালান্সশিটে  বাংলাদেশের বড় পাওয়া। যা হলো ‘ফিয়ারলেস ক্রিকেট’র খামে মোড়া- ‘আত্মবিশ্বাস’!

আমরাও পারি। বিশ্বের যেকোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা আমরা রাখি। সে দলটির নাম ভারত, পাকিস্তান যাই হোক। পাকিস্তানকে ৩-০-তে হারানোর পর ভারতের বিপক্ষে ২-০-তে সিরিজে এগিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ২-১-এ  জেতা! অনেক অনেক বড় পাওয়া। ভারত-পাকিস্তান দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে টানা পাঁচ ম্যাচ জেতা কম কথা নয়! আর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টানা দশ ম্যাচ জেতার পর একটি ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ। এটি দারুণভাবে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের নজির।

হ্যাঁ, দারুণভাবেই বদলে গেছে বাংলাদেশ। উপমহাদেশের মাটিতে চার পেসার নিয়ে খেলার দুঃসাহস কে কবে দেখিয়েছেন! নিকট অতীতের কথা বাদ দিন। দূর অতীতে ইমরান খান কিছুটা সাহস দেখিয়েছিলেন। তাও বোলার ইমরানের পড়ন্ত বেলায়। হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পর বোলার ইমরান যখন বল করার চেয়ে ব্যাটিংকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সেই সময় ওয়াসিম–ওয়াকার-আকিবের সঙ্গে তিনি। অতো ভারী ভারী নাম হয়তো বাংলাদেশ দলের বোলিং লাইনে নেই। কিন্তু রুবেল-তাসকিন-মোস্তাফিজ-মাশরাফি চার পেসার নিয়ে ঘরের মাঠে ওয়ানডে খেলছে বাংলাদেশ! সিরিজ শুরুর আগে এটি ভাবা যায়নি।

যেটি ভাবা যায়নি সেটি করে দেখালেন অধিনায়ক মাশরাফি ও কোচ হাথুরুসিংহে। এবং তার নিট ফল- বাংলাদেশের সিরিজ জয়। তাও ভারতের মতো দলের বিপক্ষে। যে জয়ের  নিচে কোনো ফুটনোট দেওয়ার দরকার পড়বে না যে, বৃষ্টি কিংবা কার্টেল ওভারের কারণে অথবা ডাক-ওয়ার্থ অ্যান্ড লুইস মেথডের অদ্ভুত নিয়মে ভারত হেরেছে কিংবা বাংলাদেশ জিতেছে! ফুটনোট দিতে হোক বা না হোক, একটি কথা লিখতে হচ্ছে, আক্রমনাত্মক, আগ্রাসী ক্রিকেটের নমুনা কী হতে পারে, সেটি বাংলাদেশ দেখিয়েছে এ সিরিজে।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এতই যদি আক্রমণাত্মক, আগ্রাসী ক্রিকেট বাংলাদেশ খেলে, তাহলে শেষ ম্যাচটি হারলো কেন? কেন ভারতকে ‘বাংলাওয়াশ’ করতে পারলো না?

উত্তরে কয়েকটি কথা বলতেই হচ্ছে, যুদ্ধ শেষে জয়ী দলও দেখে, তারও কয়েকজন সৈন্যের প্রাণ গেছে। বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পথে একটি ম্যাচ হারতেই পারে। বাংলাওয়াশ নাইবা হলো। সিরিজ জয় তো হলো।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৫
এসএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।