ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বিতর্কিত কোয়ার্টার ফাইনালে টাইগারদের হারের জন্য আবারও শ্রীনিবাসনকেই দায়ী করলেন আইসিসির সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনালের ফলাফল শ্রীনির হাতেই রচিত হয়েছিল।
ক্রিকেটনেক্সট’কে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ করেন আইসিসির সাবেক এ প্রেসিডেন্ট।
‘অসম্মানিত’ এবং ‘বিতর্কিত’ শ্রীনিবাসন ম্যাচটি ‘নিয়ন্ত্রণ’ করেছেন মন্তব্য করে সাক্ষাৎকারে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘শ্রীনিই সেই ব্যক্তি যিনি ভারতেও সবকিছু করেন, মেলবোর্নেও করতে পারেন’।
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই ভারতের বিপক্ষে সদ্য ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের বিষয়টি তুলে ধরেন সাক্ষাৎকার নেওয়া শুভাশিষ দত্ত। এ সময় আইসিসি-বাংলাদেশ সম্পর্ক, বিশ্বকাপ ফাইনালে ট্রফি তুলে দেওয়া নিয়ে শ্রীনি-কামাল দ্বন্দ্ব, এপ্রিলে বাংলাদেশ সফরে হোয়াইটওয়াশ হওয়া পাকিস্তানের প্রসঙ্গও উঠে আসে।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎকার শুরু করেন কামাল। তিনি বলেন, এ জয়ে শুধু আমি নই, প্রত্যেক বাংলাদেশিই গর্বিত। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলটি এখনও শিখছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বের যেকোনো দলকে হারানোর সামর্থ এখন বাংলাদেশের রয়েছে।
আমাদের এখনও অনেক দূর যেতে হবে উল্লেখ করে কামাল বলেন, সাপ্লাই লাইনে অনেক খেলোয়াড় রয়েছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ভালো দিক। প্রথমদিকে আমাদের ৫-৬ জন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন ২০-১৫ জন খেলোয়াড় রয়েছে। এটি আমাদের শক্তি ও সম্পদ। এর মাধ্যমে আমরা আগামী দিনগুলোতে এগিয়ে যাবো।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অবদানের কথাও তুলে ধরেন মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, কোনো দলের উন্নতিতে আইসিসি সরাসরি সাহায্য করে না। পরোক্ষভাবে তারা সব দেশকেই উৎসাহিত করে। ভারত-বাংলাদেশ একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমাদের ক্রিকেটের শুরুতে অন্যদের তুলনায় ভারত সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। যতদূর মনে পড়ে টেস্ট স্ট্যাটাসের জন্য ভারত আমাদের অনেক সার্পোট দিয়েছে।
‘ভারতের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এ বন্ধন দৃঢ় করতে ক্রিকেট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমরা একে অপরের সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি’ যোগ করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে উঠে আসে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রসঙ্গ। এ সময় মুস্তফা কামাল বলেন, দেখুন ফাইনাল নিয়ে কোনো বির্তক হয়নি। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী নিয়ে শেষ সমালোচনা হয়েছে। তিনি যে কাজটি করেছিলেন তাতে কেউ তাকে অভিনন্দিত করেনি। কারণ সবাই ক্রিকেট বোঝে, জানে। আইসিসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার পুরস্কার দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সবাই এর ব্যতিক্রম দেখলো।
মুস্তফা কামাল আরও বলেন, এখন আমি আইসিসির কেউ নই। যখন ছিলাম তখন ভুলগুলো নিয়ে আওয়াজ তুলেছি। যখন এগুলো মেনে নিতে পারলাম না, তখন পদত্যাগ ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিল না। আমি আমার চিন্তা এবং চেতনায় পরিষ্কার ছিলাম। এখন আমি এ বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না।
একজন ব্যক্তির যখন অনেক নেতিবাচক দিক থাকে তখন তাকে চেয়ারম্যান বা প্রেসিডেন্টের মতো পদে থাকা সমীচীন নয় বলেও মন্তব্য করেন মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের ম্যানেজম্যান্টে পরিবর্তন এসেছে। জগমোহন ডালমিয়া সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। আমাদের ক্রিকেটের পেছনে তার অনেক অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তিনি সবসময় সাপোর্ট দিয়েছেন। আইসিসির সভাপতি থাকাকালে বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য তিনি লড়েছেন। তার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আমাকে এটি চিঠিও দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি আমাদের সাফল্য কামনা করেছেন।
পাকিস্তান সিরিজের বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। আইপিএল’র মতো বাংলাদেশেও বিপিএল হচ্ছে। রমন লাম্বার মতো খেলোয়াড়রা বাংলাদেশে খেলেছেন। এছাড়া শহীদ আফ্রিদি, অশোকা ডি সিলভা, শোয়েব মালিক, ওয়াসিম আকরাম, অজয় জাদেজার মতো খেলেয়াড়রাও খেলে গেছেন। তবে ভারতের ক্রিকেট খেলার ইতিহাস একশ-দেড়শ বছর আগের। বাংলাদেশ মাত্র ১৫ বছর আগে থেকে ক্রিকেট খেলছে। তাই আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের এ জয় ‘প্রতিশোধ’ কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে মুস্তফা কামাল বলেন, এটি এমন কিছু নয়। কোয়ার্টার ফাইনালের পর পদত্যাগের ঘোষণায় অনেকে আমার ওপর রাগান্বিত হয়েছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন, আমি ভারতের বিপক্ষে কথা বলছি। কিন্তু আমি ভারতের বিপক্ষে কিছু বলিনি।
আইসিসি কে চালায়? প্রেসিডেন্ট না চেয়ারম্যান? আমি যদি ভুল কিছু না করি, তাহলে কে ভুল করেছে? ওই দিনের ম্যাচে কেন স্পাইডার ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়নি- প্রশ্ন করেন মুস্তফা কামাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
জেডএস/