ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে পারতো বাংলাদেশ

সিনিয়র স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে পারতো বাংলাদেশ মোহাম্মদ আশরাফুল / ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: নূন্যতম নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই, এমন দেশ এ পৃথিবীতে খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। ইউরোপের যে দেশগুলো থেকে সভ্যতার শুরু হয়েছিলো সেসব দেশেও কি মানুষের জান-মাল শতভাগ নিশ্চিত? নিশ্চয়ই নয়।



তাই বলে কি সেখানে বিদেশিরা ভ্রমণ বন্ধ করে দিয়েছে? নাকি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, অর্থ-বাণিজ্য ও শিল্পের আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে গেছে?

২০০৫ সালের ০৭ জুলাই, সন্ত্রাসীদের সুইসাইড বোমা হামলায় লন্ডনে ৫২ জন মানুষ নিহত হয়। তাই বলে কি ওই বছর দেশটিতে পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো?

এরআগে, ২০০০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিলো। এরপর কি তাদের সব আর্ন্তজাতিক আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো?  

যদি বন্ধ না-ই হয়ে থাকে তাহলে গত ০১ অক্টোবর, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? এটি ক্রিকেট পাগল এ জাতির কাছে ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যদিও অন্য আর ১০টি জাতির মানুষের মতো অস্ট্রেলিয়ানরাও নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সব সময়ই তৎপর। তাই হয়তো এমন রূঢ় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। এতে ক্ষতি যা হবার তা বাংলাদেশ ক্রিকেটের হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল।

বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের দেওয়া এক নিরাপত্তা বিবৃতি অনুযায়ী, ২৭ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের নিরাপত্তা প্রধান শন ক্যারলের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল ঢাকায় এসেই সোজা চলে যায় অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনে।

তারা হাইকমিশনারের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, সহ-সভাপতি মাহাবুব আনাম ও সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে ওই দিন বিকেলেই সেখান থেকে নিরাপত্তা বিষয়ে অলোচনার জন্য যান গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও এনএসআই কার্যালয়ে।

পরদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে সেখানে র‌্যাব পুলিশের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সফরকারী নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সার্বিক নিরাপত্তা প্ল্যান বিস্তারিতভাবে দেখানোর পরও তারা তুষ্ট হতে পারেননি।

হয়তো তারা ইচ্ছে করেই হননি। কারণ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দেওয়া নির্ধারিত নিরাপত্তার পরও তাদের জন্য যে বাড়তি নিরাপত্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিয়েছিলো, তা এককথায় নজিরবিহীন। এতো আলোচনার পর ওই দিনই রাতে তারা কাউকে কিছু না জানিয়েই দেশে ফিরে যান।

উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে তাদের কাছে কী তথ্য রয়েছে, তারা তা সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে খোলাসা করেননি।   

যাই হোক, বাংলাদেশের দেওয়া এমন অভূতপূর্ব নিরাপত্তা দেওয়ার পরও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কেন দল পাঠালো না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আশরাফুল বলেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ যখন আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজন করে, তখন এদেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনকার তুলনায় বেশিই খারাপ ছিলো।

‘বিএনপিসহ সমমনা দলের ডাকা অব্যাহত হরতাল-অবরোধে দেশের যে অবস্থা হয়েছিলো, তখন যদি অস্ট্রেলিয়া আসতে পারে তাহলে বর্তমানে দেশের যে আইন-শৃঙ্খলা পরিবেশ, তাতে না আসার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ’

আশরাফুল ধারণা করছেন, হয়তো কোনো কুচক্রী মহল দেশের ক্রিকেটের ভাবমুর্তি ক্ষুণœ করতেই অজিদের এ সফর বাতিলে ভূমিকা রেখেছে।

আর তাদের এ সফর বাতিলের ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মাঠের লড়াইয়ে যে অব্যাহত ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলো, তাতে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও মত দিলেন মিস্টার ম্যাচ উইনার আশরাফুল।

শুধু তাই নয়, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফর স্থগিতের ফলেই ১৫ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে। আর আসছে বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও তাদের সফর বাতিলের ফলে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, বললেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তা ইস্যুতে সফর বাতিল করায় এর রেশ ভবিষ্যতে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মতো বড় দলগুলোকেও এমন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আর এর ফলে আমাদের উদীয়মান ক্রিকেট সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি জোরালোভাবে বিশ্বাস করেন।

বাংলাদেশের চলমান নিরাপত্তা ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে এ টাইগার মাস্টার ব্লাস্টার ব্যাটসম্যান উদাহরণ টানলেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের। সেখানকার বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা তা সত্ত্বেও সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছে।

এমনকি ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার টি টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে  (০৫ অক্টোবর) ভারত সমর্থকদের মাঠে বোতল ছোড়াছুড়ির ফলে সাময়িকভাবে খেলাও বন্ধ করতে হয়। কই, দক্ষিণ আফ্রিকা তো সিরিজ বয়কট করলো না।

প্রাসঙ্গিকভাবেই তাই অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর বাতিলের যৌক্তিকতা এখানে প্রশ্নবিদ্ধ।

তবে, তাদের না আসার পিছনে আরেকটি সঙ্গত কারণ বললেন আশরাফুল। সেটি হলো, অস্ট্রেলিয়ান টিমের বর্তমান সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা। তারুণ্যনির্ভর ও অনভিজ্ঞ এ দলটি মাঠের লড়াইয়ে বাংলাদেশের চাইতে পিছিয়ে। সিরিজের দু’টি টেস্টই বাংলাদেশ সফরকারী দলটির বিপক্ষে জিততে পারতো। তাই হয়তো তারা নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সিরিজ স্থগিত করেছে।  

তবে নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশটি একটু বেশিই খুঁতখুঁতে বলতেও ভুলে গেলেন না আশারাফুল। ২০০৮ সালের মার্চ-এপ্রিলে নিরাপত্তার কারণেই পাকিস্তান সফর বাতিল করেছিলো টিম অস্ট্রেলিয়া।

এর আগে, ১৯৯৬ সালে এই একই ইস্যুতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসরে অংশ নিতে শ্রীলঙ্কা যায়নি। কারণ, ওই বছর তামিল গেরিলারা দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হামলা চালিয়েছিলো।   

অজিরা সফর স্থগিত করায় এদেশের ক্রিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা লাভবান হয়েছেন বলে মনে করছেন আশরাফুল।

আন্তর্জাতিক সূচির কারণে জাতীয় দলের সদস্যরা এনসিলের মতো লংগার ভার্সনের ক্রিকেট খেলতে পারেন না। অজিরা সফর স্থগিত করায় এই প্রথমবারের মতো দীর্ঘসময়ব্যাপী সাকিব-তামিম-মুশফিকরা লং ভার্সনের জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। আর প্রথম শ্রেণির এ ক্রিকেটে তাদের লম্বা এক একটি ইনিংস পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ গুলোতেও লম্বা ইনিংস খেলতে সাহায্য করবে, যোগ করেন তিনি।

এদিকে, টিম অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর বাতিলের মতো উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে আইসিসি এগিয়ে এলে, খুব শিগগিরই বিসিবি এমন দুরবস্থা কাটিয়ে উঠবে বলেও বিশ্বাস করেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
এইচএল/এসএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।