ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

নারী দলের পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ লাভবান

সিনিয়র স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৫
নারী দলের পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ লাভবান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: লাহোরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর গত ছয় বছর ধরে পাকিস্তানে যাওয়ার ভরসা পাচ্ছিল না কোনো ক্রিকেট দল। এরমধ্যে ২০১২ সালে ক্রিকেটারদের পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েও নিরাপত্তা উদ্বেগে সরে আসতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

অবশেষে গত মে মাসে জিম্বাবুয়ে জাতীয় দল পাকিস্তান সফর করে যাওয়ার পর সেপ্টেম্বরে সেখানে গেল লাল-সবুজের পতাকাবাহী নারী ক্রিকেটাররা। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সম্প্রতি সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন সালমা খাতুন-খাদিজাতুল কোবরা- জাহানারা আলমরা।

অনেক চিন্তা-ভাবনার পর নারী ক্রিকেটারদের যে সফরে পাঠানো হয়েছে, সে সফরের লাভ-লোকসান নিয়ে হিসাব-নিকাশ চলছে এখন। দু’টি করে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ম্যাচের দু’টি সিরিজে বাংলাদেশ দল হার মেনে এলেও সফরের সুদূরপ্রসারী লাভ দেখছেন অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক।

বাংলাদেশ দলের আলোচিত এ সফরের লাভ-লোকসান নিয়ে ‍বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবির সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন। তার হিসাব এক কথায়, ‘আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার এই সফরে শেষতক বাংলাদেশেরই লাভ হয়েছে। ’

বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করে খন্দকার জামিল উদ্দিন বলেন, ‘এই সফরের ফলে ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসংহত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে, তেমনি দীর্ঘদিন খেলা থেকে বিরত থাকা বাংলাদেশের মেয়েরাও পাকিস্তানের মত শক্তিশালী একটি দলের সঙ্গে খেলে নিজেদের খেলার গুণগত মানের উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছে। দীর্ঘ দেড় বছর কোনো খেলার মধ্যে না থাকা নারী ক্রিকেটাররা এই সফরের মাধ্যমে পেশাগতভাবে নিজেদের কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছে। ’

‘বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিভিন্ন ইস্যুতে পাকিস্তান সমর্থন দিয়েছে। তাছাড়া, যেহেতু গেল এপ্রিল-মে মাসে পাকিস্তান ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে, তাই এ সফর তাদের পাওনাই ছিল। ’ যোগ করেন এ সংগঠক।

এর বাইরের বিবেচনায়ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লাভবান হয়েছে। বিশ্লেষণ করছেন খন্দকার জামিল; ‘আসছে ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজনের পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যেই আইসিসিকে জানিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। প্রাথমিকভাবে এই সিরিজ দুই জাতি অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল। পরে বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ যুক্ত হয়। উচ্ছ্বাসের কথা হলো, বিসিসিআইয়ের এ সিদ্ধান্তে কোনোই আপত্তি জানায়নি পাকিস্তান। বরং প্রাথমিকভাবে সিরিজের ভেন্যু দুবাইয়ে নির্ধারিত হলেও পরে বাংলাদেশের নাম প্রস্তাব করা হয়, সেখানেও সম্মতি দেয় পাকিস্তান। ’

এটাকে ক্রিকেটীয় লেনদেন ইঙ্গিত দিয়ে খন্দকার জামিল বলেন, ‘এসব ছাড়াও প্রাপ্তির খাতায় দেখা যাচ্ছে, নভেম্বর থেকে মাঠে গড়াতে যাওয়া বিপিএলের তৃতীয় আসরে অংশ নিচ্ছে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানের এমন ‘সম্মতি-সমর্থন’ নারী ক্রিকেটারদের সফরেরই সুফল। ’

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তার অজুহাত বাংলাদেশ সফর বাতিল করলে গুঞ্জন ওঠে, লাল-সবুজের পতাকাবাহী মেয়েদের পাকিস্তান সফরের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করে অজিরা দিয়ে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ গুঞ্জনে দ্বিমত পোষণ করে খন্দকার জামিল বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সফর বাতিলের সঙ্গে বাংলাদেশ নারী দলের পাকিস্তান সফরের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, নিরপত্তা ইস্যুতে অজিদের না আসার ব্যাপারে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি, সিদ্ধান্ত দিয়েছে তাদের সরকার। সুতরাং অযৌক্তিকভাবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে দোষারোপের কারণ নেই। ’
 
বিসিবির সাবেক এ পরিচালকের মতে, ‘সালমা-জাহানারাদের পাকিস্তান সফরে তিন মোড়ল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতেরও কিছু এসে যায় না, তাদের নাক গলানোরও সুযোগ নেই। আইসিসির নির্দেশনা অনুযায়ী, নিরাপত্তা ইস্যুতে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজে ম্যাচ অফিসিয়াল দিয়েছে স্বাগতিকরাই। অতএব, এ নিয়ে তাদের (ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। ’

খন্দকার জামিল উদ্দিন বলেন, ‘ছোট খাটো নিরাপত্তা ঝুঁকি সব দেশেই আছে। তাই বলে সফর বাতিল করা যাবে না। প্রায় দেড় বছর পর এমন একটি সফর পেয়ে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা ভীষণ উৎফুল্লিত। এই সফরে বাংলাদেশ কোনো অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং সার্বিক বিবেচনায় লাভবানই হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৫
এইচএল/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।