ঢাকা: চারিদিকে শুধু চিৎকার আর চিৎকার। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে শুধু একটাই নাম, ‘বাংলাদেশ’।
পশ্চিম গ্যালারির এক প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পুরো গ্যালারি ঘুরে আবার সেখানেই শেষ হচ্ছে তা। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে চলেছে রণ হুংকারের মতো গর্জন।
এ যেন নিজ দেশের সমর্থনে নেহায়েত কোনো উচ্ছ্বাসের প্রকাশ নয়, এর সঙ্গে মিলে মিশে ঝরে পড়ছে অভিমানও।
চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মতো কোনো কিছু করার পর যেমন এক ধরনের উচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটে মানুষের চেহারা-কথায়, এ যেন তেমনই কোনো উচ্ছ্বাসের প্রকাশ।
বলা হচ্ছে, শনিবার (০৭ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত প্রাণ-আপ তিন ম্যাচ সিরিজের বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ের প্রথম ম্যাচের কথা।
শুধু গ্যালারিতেই নয়, স্টেডিয়ামের বাইরে যারা খেলা শুরুর পরও ভেতরে ঢুকতে দৈব কোনো সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের মধ্যেও উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি ছিল না।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে টিভির শো-রুমগুলোর সামনে, যেসব চা-দোকানে টেলিভিশন আছে সেসব দোকানেও মানুষের জটলা।
কিছুদিন আগে, যখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে সফর বাতিল করেছিল, বাংলাদেশ ক্রিকেটের খেলোয়াড়, সংশ্লিষ্টরাসহ হতাশায় ডুবেছিল দেশের পুরো জনগোষ্ঠী।
সফর বাতিলের এ সিদ্ধান্ত যেন এদেশের মানুষের আত্ম অহমিকায় আঘাত হেনেছিল।
বিশ্বের অন্যান্য টেস্ট খেলুড়ে দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক নবীন হলেও এদেশে ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়ে উঠতে খুব বেশিদিন সময় লাগেনি।
আর যখন থেকে টাইগারদের সামনে একে একে ক্রিকেটের সব রাঘব বোয়ালরা মাথানত করতে শুরু করেছে, তখন থেকে তো এ খেলা এদেশের মানুষের কাছে এক অহংকারের নাম।
অস্ট্রেলিয়া টিমের সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত যেন সেই অহংকারেই আঘাত করেছিল। আর তাই শনিবারের ম্যাচে গ্যালারির হুংকারটা যেন একটু বেশিই জোরালো শোনা গেল।
আজিমপুর থেকে ম্যাচ উপভোগ করতে আসা ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র বিপুল চিৎকার করতে করতেই বলে উঠলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া আসলে হারার ভয়ে আসে নাই। ’
শুধু গ্যালারির হুংকারেই যদি শেষ টানা হয়, তাহলে অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে বর্ণনা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলকে সফররত রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানদের সমপর্যায়ের নিরাপত্তা দিতে চেয়েছিল বাংলাদেশ।
এতো বড় আশ্বাসেও মন গলানো যায়নি তাদের। জিম্বাবুয়ের এ সফর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও তাই যেন মর্যাদা পুনরুদ্ধারের সুযোগের মতো কিছু একটা হয়ে ধরা দিয়েছে।
শনিবার স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে প্রবেশ করতেই প্রতি দর্শককে মুখোমুখি হতে হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের।
এমনটা এর আগে হলেও এবার নিজেদের তৎপরতায় তারা বুঝিয়ে দিলেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলকে কোনো ছেলে ভোলানোর গল্প শোনায়নি বাংলাদেশ।
স্ক্যানার পার হতেই হাত উঁচু করে প্রতি দর্শককে নিজেকে সমর্পণ করতে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে।
পকেটে থাকা চাবির রিংও বাদ পড়েনি তল্লাশির সময়। চাবির রিংয়ের সঙ্গে ফোলা-ফাঁপা কোনো কিছু সংযুক্ত থাকলে তা খুলে নেওয়া হচ্ছিল।
কেউ এ ব্যাপারে আপত্তি করলে, স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, নিরাপত্তার স্বার্থেই এমনটা করা হচ্ছে। শুধু চাবির রিংই নয়, পকেটে কোনো কয়েন থাকলেও তা নিয়ে ভেতরে যাওয়া চলবে না।
প্রধান ফটক পার হওয়ার পর যথারীতি তল্লাশিতে পড়তে হয়েছে মূল স্টেডিয়ামের ফটকেও।
সেখান থেকে গ্যালারিতে প্রবেশের সময়ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
শুধু তাই নয়, পুরো ম্যাচ জুড়েই কোনো সদস্যকে স্থির কোথাও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল না। পুলিশ, ডিবির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাইকে দেখা গেল সতর্কাবস্থায়।
পুলিশের এক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ছাড় না দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ১৪৫ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে জিম্বাবুয়ে।
বিজয়োল্লাসে এর আগেও মেতেছে বাঙালি। তবে এবার যেন সেই উল্লাসের সঙ্গে যোগ হলো আরও অতিরিক্ত কিছু। তাই যেন প্রাণের উচ্ছ্বাস রূপ নিল সত্যিকারের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জনে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৫
আরএইচ/এমএ