ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

কক্সবাজারে পর্যটনের প্রসারে খেলাধুলা

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৬
কক্সবাজারে পর্যটনের প্রসারে খেলাধুলা

ঢাকা: বিশাল জলরাশির ঢেউ আছড়ে পড়ছে সমুদ্র সৈকতে আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মুস্তাফিজ-মাশরাফিদের হাত থেকে ঝরছে অফ কাটার, ইয়র্কার আর এক একটি ইনসুইঙ্গিং ডেলিভারি। সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে টাইগার সমর্থকদের গর্জনও।

আর এসব দৃশ্য ধরা পড়ছে ব্রডকাস্টারদের ক্যামেরায়। ক্রিকেট ম্যাচের মাঝে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে দেখছে পুরো বিশ্ব। সাগরঘেঁষা কক্সবাজারের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ গড়ালে এ ভাবনাটাই রূপ নেবে বাস্তবে। সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে তখন আরও বেশি পরিচিতি পাবে কক্সবাজার। সেদিন হয়তো বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় তলানিতে থাকবে না বাংলাদেশের নাম।

সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে ব্যাট-বলের মধুর ঠুকঠাক শব্দ এর আগেও হয়েছে কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। যুব বিশ্বকাপে এ মাঠে গড়িয়েছে ১৯টি ম্যাচ। খেলেছেন ১৬টি দেশের ক্রিকেটাররা। ম্যাচগুলো টেলিভিশনে সম্প্রচার না হলেও সমুদের গর্জন ও সৌন্দর্যের খবর মুখে মুখে ঠিকই ছড়িয়েছে বিশ্বে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গ্রাউন্ডস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ কমিটির ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল বাতেন গর্ব করেই বাংলানিউজকে বললেন, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ১৬টি দেশের প্রায় সবাই এ ‌মাঠে খেলেছে। মাঠের সুযোগ-সুবিধা ও সমুদ্রের সৌন্দর্যে মুগ্ধ তারা। তাদের মাধ্যমে বিশ্বের অনেকেই জানে বাংলাদেশে সমুদ্রের তীরে সুন্দর একটি স্টেডিয়াম আছে।

লাবনী পয়েন্টে ৪৯ একর জায়গায় ৯ হোলের পরিত্যক্ত গলফ কোর্সটি এখন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স। ১৯৯৬ সালে তখনকার বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর মাথায় প্রথম এসেছিল কক্সবাজারে স্টেডিয়াম তৈরির চিন্তাটা। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার চিন্তা মাথায় রেখে সাবের হোসেন চৌধুরী উদ্যোগও নিয়েছিলেন কক্সবাজারে আন্তর্জাতিকমানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের। তবে নানা জটিলতায় সেই পরিকল্পনা তখন আলোর মুখ দেখেনি।

২০০০ সালে বিসিবির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) কক্সবাজারে স্টেডিয়াম তৈরির চূড়ান্ত পরিকল্পনার পর জমি খোঁজা শুরু হয়। এরপর থেকে অনেকবারই কক্সবাজারে স্টেডিয়াম হবে-হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছিলো। এর ১৩ বছর পর ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে উপলক্ষ করে শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হলেও তখন বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

পুরো কমপ্লেক্স গড়ে উঠছে আধুনিক ক্রিকেটের সব সুবিধা নিয়ে। কক্সবাজার স্টেডিয়ামে যতগুলো উইকেট আছে দেশের অন্য কোনো ভেন্যুতে নেই। স্টেডিয়ামের মূল মাঠে ৭টি সেন্টার উইকেট, একাডেমি মাঠে ৫টি সেন্টার উইকেটের পাশাপাশি আছে ১২টি অনুশীলন উইকেট। পাশের একাডেমি মাঠে আরো ১২টি। সব মিলিয়ে এই কমপ্লেক্সে আছে ৩৬টি মানসম্পন্ন উইকেট।

এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আব্দুল বাতেন বলেন, আসলে এখানকার উইকেট নিয়ে প্রশংসা করে গেছেন যুব বিশ্বকাপে খেলতে আসা দলগুলো। ম্যাচের উইকেট, অনুশীলনের উইকেট, সুযোগ-সুবিধা সব কিছুতেই মুগ্ধ হয়েছেন বিদেশি খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা।

মাঠ পেরিয়ে যেতে কমপ্লেক্সের দুই পাশে দুটি পুকুর। কিছুদিন পরই এগুলোর একটি সুইমিং পুলের রূপ ধারণ করবে। অন্যটিকে অবকাঠামো সুবিধা দিয়ে সাধারণ দর্শকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। ম্যাচ চলাকালে সেখানে চলবে ছোট ছোট নৌকা। পুকুরের পাশে সারি সারি ৪০০ নারিকেল গাছের চারা লাগানো। মাঠের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে ছোট একটি গ্যালারি, দ্বিতীয় তলায় গ্যালারি আরও কিছু অংশ। আর তৃতীয় তলায় প্রেসিডেন্ট বক্স, প্রেসবক্স, কমেন্ট্রি বক্সসহ প্রয়োজনীয় কিছু কক্ষ। সাগরমুখী করেই গ্যালারিগুলো তৈরি করা হয়েছে। যেন খেলা দেখার পাশাপাশি সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বাতাসে ঝাউবনের দোলও গ্যারারির দর্শকদের মুগ্ধ কর‍ার মতো।

ক্রীড়া কমপ্লেক্সে রূপ দিতে নেওয়া হয়েছে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা। যা বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে মুস্তাফিজ-সাব্বির-সৌম্যদের পদচারণায় মুখর হবে ক্রিকেটের এই ভ্যেনু। আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

এমন স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অবশ্য বেশ কিছু অবকাঠামোগত কাজ করতে হবে বিসিবিকে। মিডিয়া সেন্টার, ডরমেটরি, একাডেমি ভবন, জিম, সুইমিংপুল নির্মাণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) ১৪০ কোটি টাকার প্রকল্প ইতোমধ্যে পেয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন, অপেক্ষায় এখন তা একনেকের অনুমোদনের।

অনুমোদনের দুই বছরের মধ্যে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে আশাবাদী সৈয়দ আব্দুল বাতেন, আমরা ‌আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব হবে।   স্টেডিয়ামের কাজ শুরুর জন্য ১৪০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। টেলিভিশনে মানুষ যখন সাগরঘেঁষা স্টেডিয়াম দেখবেন তখন নিশ্চয়ই পর্যটকের সংখ্যাও বাড়বে এ দেশে।
 
ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে পুঁজি করে পর্যটনে এগিয়ে যাচ্ছে অনেক দেশই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কথাই ধরা যাক না। গায়‍ানা, বাবার্ডোজ, জ্যামাইকা, সেন্ট ভিনসেন্টের স্টেডিয়ামগুলোর কোনোটি সাগরের কোলঘেঁষা নয়তো পাহারঘেরা। একেকটা দ্বীপ যেন নীরবে পর্যটকদের কাছে টানার চেষ্টা চালায়! সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ধর্মশালায় হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ঘেরা স্টেডিয়াম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন দেশের মানুষ। এবার নিশ্চয়ই কক্সবাজারে মুগ্ধ হওয়ার পালা।

শুধু এটিই নয়। সরকারের পরিকল্পনা কক্সবাজারে আরও একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের। ক্রিকেট ও ফুটবলের জন্য নির্মিতব্য স্টেডিয়ামটিতে দর্শক ধারণক্ষমতা হবে এক লাখ। ইতোমধ্যে স্টেডিয়াম তৈরির জন্য কক্সবাজারের রামুতে জায়গা পরিদর্শনও করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এ জন্য তিনটি জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে। পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখলে এ স্টেডিয়ামটি হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম।

২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। বর্তমানে দেশের ১১ থেকে ১২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটন শিল্পের ওপর ভিত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে, বিদেশি পর্যটক টান‍ার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন নিশ্চয়ই খেলাধুলার বৈশ্বিক আসর। দেরিতে হলেও সেটি বুঝতে ‍শুরু করেছে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।