ঢাকা: ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দিনবদলের শুরু বাংলাদেশের। বছরজুড়েই এসেছে বড় বড় সাফল্য।
তাই বলে ওয়ানডে দলে ফেরার আশা ছেড়ে দেননি কক্সবাজারের এ ক্রিকেটার। ওয়ানডে দলে না থাকার কষ্ট নিয়েই নিজেকে প্রমাণের ক্ষেত্র হিসেবে টার্গেট করেছিলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে। মুমিনুলের ফেরার আকুতি রূপ নেয় চ্যালেঞ্জে। আর তাতে দারুণ সফল এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় মুমিনুল আছেন পাঁচ নম্বরে। তারপরও মুমিনুলের আক্ষেপ, ‘আরও কিছু রান করলে খুশি থাকতাম। শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল। ’
প্রিমিয়ার লিগে ১৩ ম্যাচে ৪০.৬৯ গড়ে ৫২৯ রান করেছেন ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের এ ক্রিকেটার। পাঁচটি অর্ধশতকের সঙ্গে রয়েছে একটি শতক। অবাক করার মতো উন্নতি স্ট্রাইকরেটে। এবারের প্রিমিয়ার লিগে তার স্ট্রাইকরেট ৯৪.২৯। যা প্রায় একশ’র কাছাকাছি। অথচ ২৬টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলা মুমিনুলের স্ট্রাইকরেট ৭৪.৫৮।
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে ১১৩.৮৮ স্ট্রাইক রেটে মুমিনুল খেলেছেন ৭২ বলে ৮২ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। কম ‘স্ট্রাইকরেট’ তকমা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মুমিনুলকে নির্বাচকদের চোখ থেকে আড়াল করে রেখেছে লম্বা একটা সময়। ওয়ানডে স্কোয়াড গড়ার সময় এবার নিশ্চয়ই নির্বাচকদের গুরুত্ব দিয়েই ভাবতে হবে ‘লিটলম্যান’ মুমিনুলকে নিয়ে।
একজন আদর্শ টেস্ট ব্যাটসম্যান কেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারছে না-এতদিন এই প্রশ্নটি উড়াউড়ি করছিল ক্রিকেটাঙ্গনে। প্রশ্ন ছিল মুমিনুলের মনেও। ১৭ টেস্টে ৫৬.০০ গড়ে যার রান ১৪৫৬, অল্পের জন্য যিনি ভাঙতে পারেননি এবি ডি ভিলিয়ার্সের সবচেয়ে বেশি টানা ১২ টেস্টে পঞ্চাশ বা পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার রেকর্ড, সেই মুমিনুল প্রিমিয়ার লিগে চ্যালেঞ্জ নিয়েই নামলেন। সফলও হলেন।
ব্যাটিংয়ে একটা সমস্যা যে হচ্ছিলো সেটি টের পাচ্ছিলেন মুমিনুল। এজন্য কঠোর অনুশীলনের সরল অথচ কঠিন রাস্তাটিকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। টেকনিকসহ ব্যাটিংয়ের খুটিনাটি বিষয় নিয়ে লিগ শুরু হওয়ার আগেই বিকেএসপির সাবেক কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের পরামর্শে কাজ শুরু করেন। লিগের মাঝখানেও কোনো সমস্যা হলে ছুটে গেছেন সালাউদ্দিনের আবাসস্থল বিকেএসপিতে। আর তাতে হতাশার অন্ধকার সরে আলোর দিশা পেয়েছেন মুমিনুল। পেয়েছেন ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে ভালো করার উদ্দীপনা, আত্মবিশ্বাস।
কোচের সঙ্গে কী কাজ করেছেন তা সংক্ষেপেই জানালেন স্বল্পভাষী মুমিনুল, ‘ওয়ানডে ও টেস্টে কিভাবে সফল হওয়া যায়, নিয়মিত রান করা যায় এগুলো নিয়ে সালাউদ্দিন স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। ওয়ানডেতে কিভাবে গেম প্ল্যান থাকবে, কিভাবে আরও ইমপ্রুভ করতে পারবো, কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে ব্যাটিং করবো এগুলো নিয়ে কাজ করা হয়েছে তার সঙ্গে। এর বেশি কিছুই না। ’
ব্যাটিংয়ে উন্নতি এখন নিজেই উপলব্ধি করতে পারছেন মুমিনুল, ‘আমার মনে হয় ওয়ানডেতে ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে। কিছুটা নিজে নিজে বুঝতে পারছি প্রিমিয়ার লিগ খেলে উন্নতি করছি। কিভাবে ওয়ানডে খেলতে হবে, ওই জিনিসটা আয়ত্বে আসছে। ’
২০১৫ বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলার পরই রঙিন পোশাকে বাংলাদেশ দলের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। লম্বা সময় ধরে ওয়ানডে দলে না থাকাটা কষ্টের হলেও অভিযোগ কিংবা অনুযোগ কখনোই করেননি মুমিনুল, ‘খারাপ যে লাগে না তা নয়। যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছি কি না তা নিয়েও ভাবতে চাই না। এখন বাংলাদেশ দলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। একদিনের ম্যাচে আমাকে ভালো করতে হবে। ’
আরও উন্নতির জন্য বেশি বেশি ওয়ানডে খেলার তাগিদ অবশ্য অনুভব করছেন মুমিনুল, ‘টেস্ট অনেকগুলো খেলেছি; ওয়ানডে তেমন খেলতে পারিনি। ভালো খেলতে হলে ওয়ানডে অনেক বেশি খেলতে হবে। ’
সামনে ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেট আছে বাংলাদেশের। ওয়ানডেতে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও টেস্টেই আসল ফোকাসটা ধরে রাখবেন বলে জানালেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং-ভরসা মুমিনুল, ‘টেস্ট যখন খেলবো হয়তো একমাস আগে অনুশীলন শুরু হবে। তখন ওইভাবেই প্রস্তুতি নেব। এটা ঠিক অনেকদিন ধরে টেস্ট খেলার মধ্যে নেই। চেষ্টা করবো ভালোভাবে প্রিপারেশন নিতে, নিজেকে গুছিয়ে সুন্দর করে ব্যাটিং করতে। ’
টেস্টে ব্যাটিংয়ে নামলে সেশন বাই সেশন খেলাতেই লক্ষ্য থাকে বলে জানান মুমিনুল। নিজের উইকেটটির গুরুত্ব ভালোভাবেই জানা তার, ‘আমি তিন নম্বরে ব্যাট করি। টেস্টে এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। তিন নম্বরে রান করলে টিমটা ভালো অবস্থানে যায়। আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করি উইকেটে থাকার। সেশন বাই সেশন খেলার চেষ্টা করি। একটা সেশন গেল, আরেকটা সেশন…এভাবে। হয়তো কোনো দিন হয়, কোনো দিন হয় না। ’
২৪ বছর বয়সী মুমিনুলের লক্ষ্য আগামী ১০-১২ বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলার, সময়ের সঙ্গে ব্যাটিংয়েও আরও উন্নতি চান তিনি, ‘ক্যারিয়ার নিয়ে ওরকম কোনো লক্ষ্য ঠিক করিনি। আজকে যদি সেঞ্চুরি করি, পরেরবারও সেঞ্চুরি করার চেষ্টা থাকে। মাঠে শতভাগ দিতে চাইলে ৬০-৭০ ভাগ আপনা-আপনি চলে আসে। নিজেকে টেকনিক্যালি সাউন্ড রাখার চেষ্টা করি। কিছুটা হয়তো ভুল থাকে। ইমপ্রুভ করার চেষ্টাও থাকে। আমার ইচ্ছা আরও ১০-১২ বছর বাংলাদেশ দলকে সার্ভিস দেওয়ার। এভাবে চিন্তা করলে হয়তো ক্যারিয়ার শেষে অনেক বেশি রান হবে। ’
অক্টোবের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের। ডিসেম্বরে রয়েছে বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর। এ দুটি সিরিজ নিয়ে একটু আলাদা করেই ভাবছেন মুমিনুল হক, ‘ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ভালো খেললে এখন যে ধাপে আছি এখান থেকে আরও একধাপ এগিয়ে যাবো। চেষ্টা করবো বড় বড় ইনিংস খেলার জন্য। একশো, দেড়শো, দুইশো-এমন বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা থাকবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, ১৮ জুন ২০১৬
এসকে/এমআরপি