বিকেএসপি থেকে ফিরে: আবাহনীর হয়ে টানা তিন বছর ধরে প্রিমিয়ার লিগ খেলছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে এমন দিন আগে কখনো আসেনি।
৫৫ বলে ৭৩ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস খেলার পর বল হাতে আবার নিলেন পাঁচ উইকেট। দলের জয়ে দুই দিক থেকেই ভূমিকা রেখে চলতি লিগে তৃতীয়বারের মতো হাতে উঠলো ম্যাচসেরার পুরস্কার।
ম্যাচ শেষে অনুভূতি জানাতে গিয়ে নিজের পারফরমেন্সের চেয়ে দলের অবস্থান শিরোপার কাছাকাছি দেখে বেশি খুশি মোসাদ্দেক, ‘নিজের পারফরমেন্সের চেয়ে দল জিতেছে…আমি তাতেই খুশি। আর আমরা শিরোপা লড়াইয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আগেই বলেছিলাম, পরের ম্যাচ জিততে পারলে শিরোপার কাছে যাব। এখন আমরা একটা ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব। আমরা লক্ষ্যটা ওই দিকেই সেট করেছি। আর সবচেয়ে বড় কথা পারফরমেন্স করতে পারলে সবারই ভালো লাগে, আমারও লাগছে। ’
চলতি লিগে এর আগেও তিনবার অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন মোসাদ্দেক। প্রতি ম্যাচে বল হাতে নিলেও একটি-দুইটির বেশি উইকেট পাচ্ছিলেন না এ অফস্পিনার। এর আগে কোনো ফরম্যাটেই পাননি পাঁচ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৩ রানে একবার চার উইকেট নিয়েছিলেন। সব ফরম্যাট মিলিয়ে ওটাই ছিল ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। দারুণ ব্যাটিংয়ের পর ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে অনুভূতিটা আলাদা তো হবেই, ‘আমার ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট এটা। অনুভূতিটা অন্যরকম। কিন্তু আমি ব্যাটিংটাই বেশি উপভোগ করেছি। আমার মনে হয় ব্যাটিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের কয়েকটা উইকেট তাড়াতাড়ি পরে গেছে। ওই সময় আমার আর সাকিব ভাইয়ের জুটিটা খুব জরুরি ছিল। আমার কাছে মনে হয় ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট সেটাই। ’
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল-লিটন দাস দুর্দান্ত শুরু করলেও মাঝে ছোট একটা ‘ঝড়’ বয়ে যায়। ৭৬ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর দলের রান ১১২ তে পৌঁছাতেই সাজঘরে চার ব্যাটসম্যান। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে মোসাদ্দেক ১৪০ রান যোগ করলে বিপর্যয় সামলে বড় সংগ্রহের দিকেই যায় আাবাহী।
এ জুটিটা যে ম্যাচে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বোঝা যায় ম্যাচের মাঝখানে রূপগঞ্জের অধিনায়ক মোশাররফ হোসেন রুবেলের এক লাইনের কথাতেই, ‘আর একটা উইকেট..তাহলে দুইশো’ও করতে পারবে না। ’ মোশাররফের মতো চাওয়া ছিল রূপগঞ্জের বোলারদেরও। তবে উইকেটে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে সাবলীল ক্রিকেট খেলে সেটি হতে দেননি সাকিব-মোসাদ্দেক।
তাইজুল ইসলাম আর আসিফ আহমেদ রাতুল ওই সময় যেভাবে বল করছিলেন তাতে সাকিব-মোসাদ্দেক জুটি না দাঁড়াতে পারলে মোশারফের কথাই ফলে যেতে পারতো। কারণ এরপর অভিষেক মিত্র ছাড়া ছিলেন না স্বীকৃত কোনো ব্যাটসম্যান।
জুটিটি যখন ভাঙলো আবহনীর রান তখন আড়াইশো পেরিয়ে গেছে। সাকিব আল হাসান নাকি দলের বিপদের সময় এমন একটা স্কোরই চেয়েছিলেন জানালেন মোসাদ্দেক, ‘সাকিব ভাই আমাকে বলেছেন উইকেটটা ভালো আছে, তুমি শুধু দাঁড়িয়ে থাকো। আমরা দু’জন শেষ পর্যন্ত খেলতে পারলে হয়তো আড়াইশ’র বেশি রান করতে পারবো। আমরা সে লক্ষেই বল টু বল খেলার চেষ্টা করেছি। ’
শেষ অবধি আড়াই’শ পেরিয়ে ২৯০ রানের বড় সংগ্রহই গড়ে আবাহনী। জবাবে ২৩০ রানে অলআউট হয় রূপগঞ্জ। আবাহনীকে ৬০ রানের দারুণ জয় উপহার দিয়ে আবারও সবার মধ্যমনি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, ২০ জুন ২০১৬
এসকে/এমআরপি